বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরসল চেষ্টায় দেশের চলমান উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। আর সেই উন্নয়নকে বাধাগ্রস্থ করে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত রয়েছে এক শ্রেনীর দূর্নীতিবাজরা। সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ করছে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে। এরই ধারাবাহিকতায় অতি দরিদ্রদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য বছরে দুইবার ৪০ দিন করে কর্মসংস্থানের (ইজিপিপি) ব্যবস্থা করেছেন।
ইজিপিপি নামক এই প্রকল্প কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে। গত ২৭ অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলমান থাকবে। অথচ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় এই প্রকল্পের নামে ২ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকলেও তেমন কোন বাস্তবায়ন নেই বললেই চলে। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের প্রথম পর্যায়ের এই প্রকল্পে শৈলকুপা উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নে বরাদ্দ এসেছে ১ কোটি ৯৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও নন-ওয়েজ কস্টের প্রকল্পে বরাদ্দ এসেছে ৮ লাখ ৫১ হাজার ৫২৫ টাকা।
সর্বমোট ২ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৫২৫ টাকার বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু সরকারী বরাদ্দের এই টাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজসে লুটেপুটে খাওয়ার পায়তারা চলছে। এসকল প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের নামমাত্র পিআইসি বানিয়ে প্রকল্পের টাকা ভাগাভাগি ও কলকাটি নাড়েন ইউপি চেয়ারম্যানগণ। এসব প্রকল্পের ১০ ভাগ টাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার পকেটে ঢোকে বলে জানিয়েছে ইউপি চেয়ারম্যানরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ বরাদ্দে শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল ইউনিয়নে ৩টি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্প ৩টিতে দৈনিক শ্রমিক সংখ্যা থাকার কথা ১৫৯জন। ৪০ দিনে ১৫৯ জন শ্রমিকের মজুরি ও সর্দ্দার ভাতাসহ বাজেট রয়েছে মোট ১২ লাখ ৭২ হাজার।
এর মধ্যে ধুলিয়াপাড়া কালি মন্দির থেকে মৌকুড়ী অভিমুখে রাস্তা মেরামতের জন্য দৈনিক ৫৩ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান থাকলেও কর্মসূচি ২১ দিন অতিবাহিত হলেও মাত্র ৩দিন কাজ হয়েছে। সেখানে শ্রমিক সংখ্যা ছিলো মাত্র ১১জন। ঐ ইনিয়নের আরেকটি প্রকল্প সাদেকপুর সাত্তারের বাড়ি হইতে পাকা রাস্তা অভিমুখে রাস্তা মেরামতের জন্য দৈনিক ৫৩জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান থাকলেও সেখানে মাত্র ১২ দিন কাজ করেছে ১০ জন শ্রমিক।
এছাড়াও জাঙ্গালিয়া মিজানুর রহমানের বাড়ী হইতে কাশেম মোল্লার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য দৈনিক ৫৩ জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ৭ জন শ্রমিক কাজ করেছে ৩ দিন। নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নে প্রকল্প রয়েছে ৪টি। যেখানে দৈনিক ২০১জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। ৪টি প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ১৬ লাখ ৮ হাজার টাকা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নিত্যানন্দপুর ইউনিয়নের জয়বাংলা বাজার হইতে দিঘলগ্রাম পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য দৈনিক শ্রমিক থাকার কথা ৫০জন। অথচ সেখানে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিন দিয়ে ৩ দিন কাজ করে প্রকল্পের কাজ সমাধান দেখানো হয়েছে। এই প্রকল্পে মাত্র ৪৫ হাজার টাকা খরচ করে ৪ লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। একই ইউনিয়নের আরেকটি প্রকল্প দক্ষিণ গোপালপুর জিন্নাহর বাড়ী হইতে শামছুলের বাড়ী পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কারে দৈনিক ৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান থাকলেও এখন পর্যন্ত সেখানে কাজ শুরুই হয়নি।
এছাড়াও শাহাবাজপুর পাকা রাস্তা হইতে প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার ও বিদ্যালয় মাঠে মাটি ভরাটের জন্য দৈনিক ৫০ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। কিন্তু সেখানেও ভেকু মেশিন দিয়ে মাত্র দুই দিন কাজ করে রাস্তার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও বিদ্যালয় মাঠে বাইরে থেকে ধুলাবালি এনে ভরাট করা হচ্ছে। অন্য আরেকটি প্রকল্প নিত্যানন্দপুর কাশেমের বাড়ী হইতে আতিয়ারের বাড়ী পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা সংস্কার কাজে দৈনিক ৫১ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান থাকলেও সে প্রকল্পেও এখন পর্যন্ত কাজের ছোয়া পড়েনি। দিনগনগর ইউনিয়নে প্রকল্প রয়েছে ৩টি। প্রকল্প ৩টিতে দৈনিক ১৪১ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে।
৩টি প্রকল্পে মোট বরাদ্দ রয়েছে ১১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এ ইউনিয়নের সিদ্দি তক্কেল শেখের বাড়ি হইতে হাবিল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য দৈনিক ৬৭ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। সেখানে শ্রমিকের পরিবর্তে ভেকু মেশিন দিয়ে মাত্র ৪ দিন কাজ করে প্রকল্প সম্পন্ন দেখানো হয়েছে। ২৪ দিন পার হলেও রতনপুর ও ইটালী প্রকল্প দুটিতে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। এদিকে উমেদপুর ইউনিয়নের চিত্র আরো খারাপ। সে ইউনিয়নে ৪টি প্রকল্প রয়েছে।
প্রকল্প ৪টিতে দৈনিক ২১৬ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। মোট বরাদ্দ রয়েছে ১৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। এর মধ্যে বারইপাড়া মাঠের সামনে হইতে সোলাকুড়া বিলের খাল পুণ: খনরের জন্য দৈনিক ১’শ জন শ্রমিকের কর্মসংস্থান রয়েছে। ৪০ দিনের কর্মসূচির ২৪ দিন অতিবাহিত হলেও এই পকল্পে এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। বাকি ৩টি প্রকল্পে সপ্তাহে ৩ দিন মাত্র ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক কাজ করে।
এই ইউনিয়নের দৃশ্যমান কোন কাজ চোঁখে পড়েনি। এছাড়াও মনোহরপুর, বগুড়া, ধলহরাচন্দ্র, মির্জাপুর ও আবাইপুর ইউনিয়নের চিত্র একই রকম। অন্যদিকে চেয়ারম্যানদের সাথে আতাত করে সরকারী টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মলয় রঞ্জন বিশ্বাস বেশিরভাগ প্রকল্প প্রাক্কলনে অতিরিক্ত শ্রমিক নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়। শ্রমিক ফাকি দিয়ে গোজামিলে কাজ শেরে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রকল্পের পিআইসিরা বলেন, তারা ইউপি চেয়ারম্যানদের কথা মতো কাজ করেন। বাদ-বাকী সব চেয়ারম্যানরা দেখভাল করেন।
শ্রমিকদের মজুরী ফাকি দিয়ে সরকারী বরাদ্দের অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে বেশিরভাগ ইউপি চেয়ারম্যানরা বলেন, এসব প্রকল্পের ১০ ভাগ টাকা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও অফিস সহকারী তারেক খন্দকারকে দিতে হয়। বাকী টাকা পিআইসিদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করতে হয়। তাহলে শ্রমিক দিয়ে কাজ করাবো কিভাবে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুর রহমান জানান, আমরা রাস্তায় মাটি দেখার পর বিল পাশ করি।
বিলের টাকা শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: উসমান গনি জানান, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ব্যস্ততার কারনে প্রকল্পগুলো পরিদর্শনে যাওয়ার সময় হয়নি। তবে কাজ দেখে বিল পাশ করা হবে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, প্রকল্প পরিদর্শনের জন্য ডিআরও কে পাঠানো হয়েছিলো। কাজ পরিদর্শন করে তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।