ঝিনাইদহের ১২ টি নদ-নদী খনন বা ড্রেজিং হয়নি কখনো
আব্দুর রহমান মিল্টন, ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহ জেলার ১২ টি নদ-নদী এখন মরা খাল! খনন বা ড্রেজিং হয়নি কখনো। নদীর তীর দখল করে তৈরী করা হচ্ছে ঘর-বাড়ী, বছর জুড়েই হচ্ছে চাষাবাদ। তবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে জেলার কুমার নদ ও নবগঙ্গা নদী খনন করা হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ।
দু’চোখ জুড়ে মাঠের পর মাঠ সবুজ ফসলের ক্ষেত, কিন্তু এগুলো এক সময়কার খরস্রোতা নদ-নদী। ঝিনাইদহের বুকজুড়ে প্রবাহিত ১২টি নদ-নদী বিলীন হয়েছে ফসলের ক্ষেতে। জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মতে ঝিনাইদহের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদ-নদী গুলো হলো, নবগঙ্গা, চিত্রা, কুমার, বেগবতি, গড়াই, ইছামতি, ডাকুয়া, কপোতাক্ষ, কালীগঙ্গা, কোদলা, ফটকী ও বুড়ী। যার আয়তন ১৬’শ ৪১.৭৫ হেক্টর। সেখানে এখন বছর জুড়ে হয় চাষাবাদ ।
সংস্কারের অভাব ও মানুষ্য সৃষ্ট কারনে মরে যাওয়া নদীতে অগভীর নলকুপ বসিয়ে ক্ষেতে সেচকাজ চলে। পানির অভাবে নষ্ঠ হচ্ছে পরিবেশর ভারসাম্য ও জীব বৈচিত্র, মৎস্য সম্পদ বিদায় নিয়েছে। নদী তীরবর্তী গ্রামের জেলেরা পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছে। লঞ্চ স্টিমার চলা নদীতে এখন একখানা নৌকারও দেখা মেলে না।
জেলার শৈলকুপা উপজেলার ঝাউদিয়া গ্রামের জেলে সম্প্রদায়ের বাসিন্দা নিমায় চন্দ্র বিশ^াস জানান, নদীর পানিই ছিল তাদের জীবিকার উৎস কিন্তু এখন পানিও নেই মাছও নেই । সে এলাকার ব্যবসায়ী রাশিদুল ইসলাম জানান, আগে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত এখন তারা পেশা বদলাচ্ছে । মাছ ব্যবসায়ী গোপেন চন্দ্র বিশ^াস, আনন্দ কুমার সহ আরো কয়েকজন আক্ষেপ করে বলেন আগে মাছ বিক্রি করেই তাদের ভাল আয়-রোজগার হতো। আর এখন নদীতে কোন মাছই নেই, জেলেরা আর মাছ বিক্রি করতে আসেনা ফলে পাইকারী এসব ব্যবসায়ীদের ব্যবসাতেও এখন মন্দা দেখা দিয়েছে।
ফারাক্কার বিরুপ প্রভাবে পলি জমে উৎসমুখ ভরাট, দীর্ঘদিন নদীগুলো পূর্ণখনন না করা, নদীর উৎস মুখে ক্রসড্যাম (আরিবাধ) দেওয়া সহ নানা কারনে ঝিনাইদহের সবগুলো নদীই এখন মৃত। মিষ্টি পানির প্রবাহ না বাড়াতে পারলে এক সময় সাগরের লোনা পানিতে ছেয়ে যাবে খুলনার পাশ্ববর্তী এক সময়কার বৃহত্তর যশোরের এ অঞ্চলের নদ-নদী।
এমন পরিস্থিতিতে নদী রক্ষার জন্যে মানববন্ধন, স্মারকলিপি সহ আন্দোলনে নেমেছে ঝিনাইদহের তরুন সমাজ । এদের মধ্যে অন্যতম হলো নবগঙ্গা রক্ষা পরিষদের আহবায়ক খাঁন এমএস জামান শিমুল । তিনি বলেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর একযোগে কাজ না করলে নদীগুলো রক্ষা করা কঠিন তবে তিনি মনে করেন আগের চেয়ে অনেক বেশী সামাজিক সচেতনতা বেড়েছে এবং পরিবেশ, নদ-নদী রক্ষার ব্যাপারেও মানুষ সচেতন হচ্ছে । যা নদী রক্ষায় ভুমিকা রাখবে ।
ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নিম্নমুখিতা রোধ, ভূ-উপরিস্থ পানির সরবরাহ বৃদ্ধি, পরিবেশ ভারসাম্য রক্ষায় এ অঞ্চলে সমন্বিত পানি সম্পদ উন্নয়নে প্রকল্প প্রণয়নের তাগিদ অনুভব করছে পরিবেশবাদী ও পানি বিশেষজ্ঞরা ।
তবে আগামী ৫ বছরের মধ্যে জেলার অন্যতম প্রধান দুটি নদী কুমার ও নবগঙ্গা খনন করা হবে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা । ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারোয়ার জাহান সুজন জানান সরকারের ব-দ্বীপ প্রকল্পের আওতায় আগামী ৫ বছরের মধ্যে খনন হতে যাচ্ছে জেলার অন্যতম প্রধান দুটি নদী কুমার ও নবগঙ্গা । ভাঙ্গন, দখল-দুষণ রোধেও তারা আরো বেশী করে ভুমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার ভুমি এর মাধ্যমে নদ-নদী দখলমুক্ত করতে নিয়মিত কাজ করা হচ্ছে। এছাড়া পানি উন্নয়নবোর্ড নতুন যেসব দখলীয় এলাকার নাম দিয়েছে তা দ্রুত দখলমুক্ত করা হবে বলেও জানান ।