ধর্ম ও জীবন

পাপী থেকে ওলি

হে নবী! আমি ওই পাপী যুবককেই ওলি হিসেবে কবুল করে নিয়েছি! তোমরা যখন তাকে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছিলে তখন সে একটি জনমানবহীন স্থানে উপনীত হয়েছিল এবং সেখানেই সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিল। মৃত্যুর এই কঠিন মুহূর্তে সে ডানে-বামে তাকাল। কিন্তু কোনো বন্ধু বা সহায়তাকারী পেল না। তখন সে আমার কাছে তওবা করল এবং আমাকেই তার একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রহণ করে নিল

হজরত মুসা (আ.) এর জমানায় পাপী এক যুবক ছিল। সে সময়ের মানুষ সমাজ ও দ্বীনসচেতন ছিলেন। পাপীকে তারা আজকের মতো এত আপন করে বরণ করে নিতেন না। প্রথমে ভালো করার চেষ্টা করতেন। সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করতেন সৎপথে ফিরিয়ে আনার। কিন্তু চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার ব্যাপারে কঠোর হতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব করতেন না। সাহসী হতেন, আল্লাহর বিধানকে উপেক্ষা করতেন না।

তাই বনি ইসরাইলের ওই যুবককে তারা নিজ এলাকা থেকে বের করে দিলেন।
যুবক আজ অসহায়বোধ করছে। যখন পাপ করেছে তখন আনন্দের উত্তাল দরিয়ায় হাবুডুবু খেয়েছে। কিন্তু আজ যখন তাকে এলাকাছাড়া করা হচ্ছে তখন কেউ তার সঙ্গে নেই! যেসব বন্ধুবান্ধবের পাল্লায় পড়ে পাপ করেছে, যে আশা আর নির্ভরতায় অন্যায় করেছে, তাদের কেউ আজ তাকে সঙ্গ দিচ্ছে না!

তাকে ভীষণভাবে ভাবায় বিষয়টি। তবে পাপের চরিত্রই কি এমন? বিপদের সময় সঙ্গ না দেওয়া? জীবন-যৌবনের সবকিছু চুষে নেওয়ার পর অসহায়ত্বের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া?
যুবক আজ সবকিছুরই উত্তর পেয়ে গেছে। বুঝেছে, পাপের স্বভাব ও চরিত্রই হচ্ছে পাপীকে বিপদের সময় নিঃসঙ্গতার মধ্যে ফেলে পালিয়ে যাওয়া। হতাশা, উদ্বিগ্নতা আর দুশ্চিন্তাকে সঙ্গী করে যুবক একাকি উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি করতে থাকল। বিতাড়িত হয়ে চলে গেল অপরিচিত এক শহরে। ভাগ্যবিড়ম্বিত এ যুবক সেখানেই মুখোমুখি হলো মৃত্যুর।

এদিকে হজরত মুসা (আ.) এর কাছে সংবাদ এলো, আমার একজন ওলি মৃত্যুবরণ করেছে। তুমি তার কাফন-দাফন ও জানাজার ব্যবস্থা করো। আর তুমি মানুষদের এ কথার ঘোষণা দাও, যারা গোনাহর সীমা ছাড়িয়ে গেছে, পাপের বোঝা ভারি করেছে তারাও যেন ওই ওলির জানাজায় অংশ নেয়। তাহলে আমি তাদের ক্ষমা করব, তাদের মা-বাবার গোনাহও মাফ করব এবং তাদের জন্য সম্মানজনক পুরস্কারের ব্যবস্থা করব।

খোদায়ি ঘোষণায় এলাকায় সাড়া পড়ে গেল। গোনাহ মাফের ঘোষণা! ওলির জানাজায় শামিল হওয়ার ঘোষণা। আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে সম্মানীত হওয়ার সুসংবাদ! লোকজন কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে ওলির জানাজায় শরিক হওয়ার প্রস্তুতি নিল। জীবনে কত জানাজায় তারা অংশ নিয়েছে। কিন্তু আজকের জানাজা যেন ঈদের জামাতের মতো আনন্দময় হয়ে উঠেছে!

অদ্ভুত ব্যাপার না! একটি জানাজা মানুষের মধ্যে আনন্দের এমন শিহরণ ছড়িয়ে দিতে পারে! লোকজন বিপুল উদ্যমে জানাজায় শরিক হলো। সমবেত হলো হাজার হাজার মানুষ।

নামাজ শুরু হওয়ার আগ দিয়ে একনজর ‘ওলির’ লাশ দেখতে চাইল সবাই। দেখার বাসনা হওয়াই স্বাভাবিক। বিশ্ব ওলি, যার বদৌলতে জানাজায় অংশ নেওয়া লোকদের গোনাহ মাফের সুসংবাদ! তাই কেউ এ সৌভাগ্য থেকে নিজেকে বঞ্চিত করতে চাইল না। সবার আকুল আবেদনে মুসা (আ.) সম্মত হলেন। ওলির লাশ দেখানোর অনুমতি দিলেন। লাশের মুখ দেখে তো সমবেত জনতা থ’ হয়ে গেল। স্তম্ভিত আগত দর্শক-জনতা। তারা বলল, হুজুর! কার জানাজা পড়তে হাজির হলাম, এ তো সেই যুবক, যাকে আমরা পাপের কারণে এলাকাছাড়া করেছি!

মুসা (আ.) নিজেও হতবাক হলেন। বিস্ময়ে তিনিও ভাষা ও জবাব হারিয়ে ফেলেছেন। আল্লাহ তায়ালা তখন মুসা (আ.) এর কাছে ওহি পাঠালেন। হে নবী! আমি ওই পাপী যুবককেই ওলি হিসেবে কবুল করে নিয়েছি! তোমরা যখন তাকে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছিলে তখন সে একটি জনমানবহীন স্থানে উপনীত হয়েছিল এবং সেখানেই সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছিল। মৃত্যুর এই কঠিন মুহূর্তে সে ডানে-বামে তাকাল। কিন্তু কোনো বন্ধু বা সহায়তাকারী পেল না। তখন সে আমার কাছে তওবা করল এবং আমাকেই তার একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে গ্রহণ করে নিল। আমি তার তওবা কবুল করলাম। তাকে ওলি হিসেবে গ্রহণ করলাম। এ অবস্থাতেই তার মৃত্যু হলো। সে আমার ওলির খাতায় নাম লিখিয়েছে। তাই আমি তোমাদের তার জানাজায় অংশগ্রহণের আদেশ করেছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button