ধর্ম ও জীবন

শীতে অজু করার ক্ষেত্রে কোরআনের কিছু পরামর্শ

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক:

ঋতু পরিবর্তন আল্লাহ তাআলার অপার কুদরতের নিদর্শন। ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শীত কম হলেও এই ঋতুতে অনেকেই একটু উষ্ণতার জন্য কিছু পন্থা অবলম্বন করেন। আল্লাহ তার বান্দার জন্য শীতে আরাম দিতে ইসলামের কিছু বিশেষ হুকুমও রেখেছেন।

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, নিশ্চয়ই আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃজনে এবং পালাক্রমে রাত-দিনের আগমণে বুদ্ধিমানদের জন্য আল্লাহ তায়ালার নিদর্শনাবলি রয়েছে। (আলে ইমরান, আয়াত নং : ১৯১)

বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যে প্রতিটি মৌসুমই নান্দনিক। প্রাকৃতিক পরিবর্তন নিয়ে প্রতিনিয়ত আল্লাহর এসব মৌসুম-নিদর্শন আমাদের কাছে হাজির হয়। আল্লাহ তাআলা তার হুকুম-আহকাম ও বিধানাবলিও মৌসুম উপযোগী করে দিয়েছেন। তার কোনো হুকুমই বান্দার জন্য কষ্টসাধ্য নয়। কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের থেকে সহজ জিনিসেরই দাবি করেন। কঠিন ও দুঃসহ জিনিসের প্রত্যাশী নন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

শীতে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে কিংবা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার প্রবল আশঙ্কা হয়—এমন ব্যক্তিকে তায়াম্মুমের নির্দেশ দিয়েছে শরিয়ত। তায়াম্মুম হলো নিয়ত করে মাটি অথবা মাটি-প্রকৃতির জিনিসে (যথা বালু, পাথর, চুনা ইত্যাদি) হাত স্পর্শ করে একবার পুরো চেহারা মোছা, দ্বিতীয়বার হাত স্পর্শ করে উভয় হাতের কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে মোছা। (রদ্দুল মুহতার ১/২২৮,২২৯)

এছাড়া শীতকালের আরেকটি বিধান হলো, অজুতে চামড়ার মোজার ওপর মাসেহ করা। কারো তায়াম্মুমের পরিমাণ ‘অসুবিধা’ না হলেও ‘মুজা মাসেহ’র বিধান প্রযোজ্য সবার জন্য। অজু করে মোজা পরিধান করলে মুকিম ব্যক্তির জন্য পরবর্তী একদিন পর্যন্ত যতবার অজুর প্রয়োজন, তাতে পা ধোয়ার প্রয়োজন হবে না। বরং তিন আঙুল পরিমাণ মোজার ওপর মাসাহ করে নিলেই চলবে। এ সুযোগ মুসাফিরের জন্য তিনদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। বিভিন্ন হাদিসে রাসুল (সা.) এই আমলের কথা উল্লেখ আছে।(রদ্দুল মুহতার : ১/২৬০)

এখানে মনে রাখতে হবে যে- সব মোজার ওপরই মাসাহ করা যায় না। (যেমন- সুতা, নায়লনের মোজার ওপর মাসেহ করলে হবে না) বরং মোজার ওপর মাসেহ করার জন্য মোজাটি টাখনু পর্যন্ত ঢেকে ফেলে এমন অথবা চামড়ার মোজার গুণে উত্তীর্ণ হতে হবে। রাসুল (সা.)-এর হাদিস ও সাহাবায়ে কেরামের আমল থেকেই সংগৃহীত গুণগুলো ফিকাহগ্রন্থগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এক. মোজা এমন মোটা হতে হবে যেন উপরে পানি পড়লে ভেতরে না পৌঁছায়।

দুই. সংকীর্ণতা বা রাবার অথবা সুতা ইত্যাদি দিয়ে বাঁধা ছাড়াও স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে পায়ের সঙ্গে লেগে থাকে।

তিন. শুধু ওই মোজা পরিধান করেই দুই-তিন মাইল হাঁটা যায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ১/১৮৮ ,ফাতহুল ক্বদির ১/১০৯)।

শীতকালে আবহাওয়ায় চামড়া ফেটে যাওয়ার কারণে পা ধোয়া হলেও মাঝেমধ্যে শুকনো থেকে যায়। অথচ অজুর অঙ্গ একচুল পরিমাণও শুকনো থাকলে অজু হবে না। এ জন্য ওলামায়ে কেরাম বলেন, অজুর শুরুতে একবার পা ভিজিয়ে নেওয়া উত্তম এবং অঙ্গ ধোয়ার সময় হাত দিয়ে মলে মলে ধোয়া হলে আর শুকনো থাকার ভয় থাকে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button