জানা-অজানা

বাজার বা অনলাইন থেকে পণ্য কিনে প্রতারিত হলে, আইনী পদক্ষেপ

মোঃ আরিফুজ্জামান
শিক্ষানবিশ আইনজীবী।

ঝিনাইদহের অনেক মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। আর এ সুযোগে একটি চক্র গ্রাহকদের সঙ্গে করছে প্রতারণা।

ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষ অনলাইনে পণ্য কিনে প্রায়ই নানাভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে চাহিদা অনুযায়ী সঠিক পণ্য সরবরাহ না করা এবং করলেও নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করার ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। কেউ কেউ পণ্যের মূল্য পরিশোধ করলেও সময়মতো পণ্য সরবরাহ না করারও অভিযোগ করেছেনে, আমাদের কাছে।

অনলাইনে কেনাকাটায় যদি আপনি প্রতারণার শিকার হন, তাহলে প্রচলিত আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ আছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত সহজে আলোচনা করা হল-

কীভাবে আইনের আশ্রয় নিবেন?

আইনের আশ্রয় নেওয়ার আগে আপনাকে জানতে হবে, অভিযোগকারী হিসেবে আপনি আইনের আশ্রয় নেওয়ার যোগ্য কিনা!

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ২ (৩) অনুযায়ী, নিম্নবর্ণিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ এই আইনের অধীন অভিযোগ দায়ের করতে পারবেনঃ

১. কোন ভোক্তা;
২. একই স্বার্থসংশ্লিষ্ট এক বা একাধিক ভোক্তা;
৩. কোন আইনের অধীন নিবন্ধিত কোন ভোক্তা সংস্থা;
৪. জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বা তার পক্ষে অভিযোগ দায়েরের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন কর্মকর্তা;
৫. সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সরকারী কর্মকর্তা; এবং
৬. সংশ্লিষ্ট পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ী।

যেহেতু আপনি একজন ভোক্ত যিনি পণ্য ক্রয় করে প্রতারণার শিকার বা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাই প্রথমেই অনলাইনে প্রতারণার শিকার হলে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সাইট এবং কী ধরনের প্রতারণার শিকার হলেন তা সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করতে হবে। মনে রাখা জরুরি, আইনের আশ্রয় নিতে গেলে কিন্তু প্রমাণ থাকা চাই।

পণ্য কেনা বা হাতে পাওয়ার তারিখ হতে ত্রিশ দিনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়েও মোকদ্দমা দায়ের করা যায় আদালতে। করা যায় প্রতারণার মামলাও।

কিন্তু ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করাটা সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ।

অভিযোগ দায়েরের পদ্ধতিঃ

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬ (১) অনুযায়ী, “যে কোন ব্যক্তি, যিনি, সাধারণভাবে একজন ভোক্তা বা ভোক্তা হইতে পারেন, এই অধ্যাদেশের অধীন ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কার্য সম্পর্কে মহাপরিচালক বা এতদুদ্দেশ্যে মহাপরিচালকের নিকট ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবহিত করিয়া লিখিত অভিযোগ দায়ের করিতে পারিবেন।”

যেখানে অভিযোগ দায়ের করা যাবেঃ

ঝিনাইদহ জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের স্থানীয় অফিসে অভিযোগ করতে পারবেন একই পদ্ধতিতে। ঝিনাইদহ জেলাবাসী এক্ষেত্রে যোগাযোগ করবেন নিম্নাক্ত ঠিকানায়-

সহকারী পরিচালক,
ঝিনাইদহ জেলা কার্যালয়,
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর,
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ঝিনাইদহ।
মোবাইল- ০১৭১৬৮৫২৯৩১
ইমেইল যোগাযোগ- ad-jhenaidah@dncrp.gov.bd

যেভাবে অভিযোগ দায়ের করতে হবেঃ

১. দায়েরকৃত অভিযোগ অবশ্যই লিখিত হতে হবে।
২. ফ্যাক্স, ই-মেইল, ওয়েব সাইট, ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে; বা
অন্য কোন উপায়ে;
৩. অভিযোগের সাথে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের রশিদ সংযুক্ত করতে হবে।
৪. অভিযোগকারী তাঁর পূর্ণাঙ্গ নাম, পিতা ও মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, ফ্যাক্স ও ই-মেইল নম্বর (যদি থাকে) এবং পেশা উল্লেখ করবেন।
৫. অভিযোগের সাথে প্রমাণ হিসেবে ভাউচার/ক্রয় রশিদ এবং ক্ষেত্র বিশেষে ক্রয়কৃত পণ্যের নমুনা প্রদান করতে হবে।
৬. বাজারের বা অনলাইনের কোন পণ্য বা সেবা পণ্যের ব্যাপারে তথ্য প্রদান অভিযোগ হিসেবে গণ্য হবে না। ভোক্তা নিজে ক্ষতিগ্রস্থ হইয়া অভিযোগ দায়ের করতে হবে।

অভিযোগ ফরম লিংক https://dncrp.portal.gov.bd/…/Complain%20Application%20Form…

চাইলে www.dncrp.gov.bd এই ওয়েবসাইট থেকে অভিযোগ ফর্ম ডাউনলোড করতে পারেন। অভিযোগ ফর্মটি হাতে এমনভাবে লিখে পূরন করুন যাতে যাবতীয় সবকিছু স্পষ্ট বোঝা যায়। আর অবশ্যই অভিযোগের সাথে কিছু প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে। আপনি যে দোকান কিংবা রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে চান সেখানকার খাবারের বিল অথবা সেবার জন্য ক্যাশমেমো স্ক্যান করে, আর যদি দৃশ্যমান জিনিস হয় তাহলে ছবি তুলে অভিযোগপত্রের সাথে করতে হবে।

অভিযোগ দায়েরের সময়সীমাঃ

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬০ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তি কারণ উদ্ভব হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে এই আইনের অধীন অভিযোগ দায়ের করতে হবে। অন্যথায় উক্ত অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হবে না।

অভিযোগপ্রাপ্তির ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে অধিদপ্তর থেকে ফোনে বা ই-মেইলে অভিযোগকারী এবং অভিযুক্তকে শুনানীর জন্য ডাকা হবে। শুনানীর দিন অভিযোগকারীকে অভিযোগের সাথে জমাকৃত প্রমাণপত্র নিয়ে যেতে হবে।

জরিমানার অর্থের ২৫% ক্ষতিগ্রস্থ বা অভিযোগকারীকে প্রদানঃ

দায়েরকৃত আমলযোগ্য অভিযোগ তদন্তে প্রমাণিত ও জরিমানা আরোপ করা হলে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ধারা ৭৬(৪) অনুযায়ী আদায়কৃত জরিমানার ২৫ শতাংশ তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ বা অভিযোগকারীকে পুরস্কার হিসেবে প্রদান করা হবে।

এছাড়া জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ০২-৮১৮৯৪১১, ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরে ফোন করেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button