ধর্ম ও জীবন

অসহায়দের পাশে প্রিয়নবী (সা.)

এ অবস্থাতেই তিনি কখনও কোনো গ্রামে অসুস্থ কারও সংবাদ পেলে সেখানে চলে গেছেন, প্রিয় সাহাবিদের মৃত্যু সংবাদে তাদের পরিবারের লোকদের সান্ত¡না দিয়েছেন, বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সমাজের চোখে কে উঁচু আর কে নিচুÑ এ
ফারাক তাঁর কাছে ছিল না

ইসলামের ইতিহাসে একটি অমর নাম সুমাইয়া (রা.)। এই নারী ‘ইসলামের প্রথম শহীদ’ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তার স্বামী হজরত ইয়াসির, ছেলে আম্মারÑ সবাই প্রিয়নবী (সা.) এর প্রিয় সাহাবি। ইসলাম গ্রহণের অপরাধে পুরো পরিবারটিই ছিল তৎকালীন মক্কার কোরাইশ কাফেরদের চক্ষুশূল। যেভাবে পারত তাদের কষ্ট দিত। অপরাধ একটাইÑ শান্তির ধর্ম ইসলামে আশ্রয়গ্রহণ। একদিন তাদের ওপর অত্যাচার চলাকালীন রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাদের শুনিয়ে গেলেন সান্ত¡নার বাণীÑ হে ইয়াসিরের পরিবার! হে আম্মারের পরিবার! তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো, তোমাদের প্রতিশ্রুত পুরস্কার তো বেহেশত! (আলমুসতাদরাক লিল হাকেম : ৫৬৬৬)।

আরেক সাহাবি আবু সালামা (রা.)। তার স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.)। আবু সালামার মৃত্যুর পর উম্মে সালামা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সংসারে! তিনি উম্মুল মোমিনিনÑ সব মোমিনের মা। আবু সালামা (রা.) যখন ইন্তেকাল করলেন, তখন নবীজি (সা.) গেলেন তাকে দেখতে। গিয়ে দেখেন তার চোখ খোলা। (যেন তাকিয়ে আছেন)। তিনি চোখ বুজিয়ে দিলেন। বললেনÑ মানুষের রুহ যখন কব্জা করা হয়, তখন চোখ তার অনুসরণ করে। এমন সময় তার পরিবারের কারও কারও চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বললেনÑ ‘তোমরা নিজেদের বিষয়ে কেবলই ভালো কথা বলো। কেননা ফেরেশতারা তো তোমাদের কথায় আমিন বলে। (অর্থাৎ ভালো-মন্দ যাই বল, তা কবুল হয়ে যেতে পারে, তাই কেবলই ভালো ভালো কথা বলো। শোক ও কষ্টের কারণে পরিণতিতে নিজেদের বিরুদ্ধে যায় এমন কোনো কথা বলো না)।
এরপর তিনি আবু সালামার জন্য এবং তার পরিবার-পরিজনের জন্য দোয়া করলেন। (মুসলিম : ৯২০)।

মুতার যুদ্ধের ঘটনা। রাসুলুল্লাহ (সা.) নেতৃত্বের জন্য তিনজনের নাম ঘোষণা করলেন। প্রথমেই তাঁর পালকপুত্র জায়েদ ইবনে হারেসা (রা.), তিনি শহীদ হয়ে গেলে তাঁর চাচাতো ভাই জাফর ইবনে আবু তালিব (রা.), তিনিও শহীদ হয়ে গেলে আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রা.)। তিনিও যদি শহীদ হন; তবে মুসলমান মুজাহিদরা নিজেরা নেতা বানিয়ে নেবে। যুদ্ধের ময়দানে এ তিন সেনাপতিই একে একে শহীদ হয়ে যান। এরপর খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) এর নেতৃত্বে মুসলমানরা জয় ছিনিয়ে আনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাদের শাহাদতের সংবাদ শোনার পর মদিনার লোকদের তা জানালেন। হজরত জাফর (রা.) এর ছোট ছোট ছেলেদের ডেকে পাঠালেন। তাদের নিজের কাছে রাখলেন। এরপর তাদের মা এসে বলল তার বাচ্চাদের এতিম হয়ে যাওয়ার কথা। নবীজি (সা.) তাকে সান্ত¡নার বাণী শোনালেনÑ তুমি কি তাদের নিয়ে অভাবের আশঙ্কা করছ? দুনিয়া ও আখেরাতে আমিই তাদের অভিভাবক! (মুসনাদে আহমদ : ১৭৫০)।

নবীজি (সা.) ছিলেন সবারই অভিভাবক। তিনি যেমন ছিলেন নবী, আবার তিনি রাষ্ট্রপ্রধানও। এ অবস্থাতেই তিনি কখনও কোনো গ্রামে অসুস্থ কারও সংবাদ পেলে সেখানে চলে গেছেন, প্রিয় সাহাবিদের মৃত্যু সংবাদে তাদের পরিবারের লোকদের সান্ত¡না দিয়েছেন, বিপদে পাশে দাঁড়িয়েছেন। সমাজের চোখে কে উঁচু আর কে নিচুÑ এ ফারাক তাঁর কাছে ছিল না। কোরাইশের নেতা তাঁর দুঃসময়ের আশ্রয় চাচা আবু তালিব যখন মৃত্যুশয্যায়, তখনও যেমন তিনি তার পাশে, আবার রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে এক অমুসলিম ইহুদি ছেলের মৃত্যুশয্যায় তার মাথার কাছেও বসেছেন তিনি, তাকে দাওয়াত দিয়েছেন। একে অন্যের পাশে দাঁড়ানোর নৈতিক দাবিটি যদি আমরা পূরণ করতে চাই, তাহলে এ ফারাক না রাখার শিক্ষাটি আমাদের গ্রহণ করতেই হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button