কোটচাঁদপুরটপ লিড

ঝিনাইদহে ১৬ কৃষকের বরজের পানগাছ কেটে সাফ

লতাগুলো বাঁশের লাঠি বেয়ে উপরে উঠেছে। দুইপাশে পাতা আর পাতা। গোড়ায় জড়িয়ে রাখা হয়েছে পাতা ছাড়ানো লতার কিছু অংশ। যার মাথা উপরের দিকে। সেই জড়িয়ে রাখা স্থান থেকেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কেটে দেওয়া হয়েছে লতাগুলো।

এক রাতে ১৬ কৃষকের ১০ বিঘা জমির পানের বরজের পান গাছ কেটে দিয়েছে দুবৃত্তরা। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার ভোর রাতে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের মাঠে।

কৃষকরা বলছেন, প্রায়ই তাদের পানের বরজের পান নানা ভাবে ক্ষতি করা হচ্ছে। পূর্বেও এভাবে কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বরজে আগুনও দেওয়া হয়েছে কয়েকবার। আর রাতের আধারে পান ভেঙ্গে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে যাচ্ছে। এই অবস্থায় তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, কিন্তু এর কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না।

সকালে সরেজমিনে জালালপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মাঠে থাকা পানের বরজগুলোতে অসংখ্য মানুষের ভিড়। তারা দেখতে এসেছেন কিভাবে পান গাছ কেটে ক্ষতি করা হয়েছে।

গ্রামবাসি জানান, ওই গ্রামের কৃষক সোহেল আলী, ঝন্টু মন্ডল, জাহিদুল ইসলাম, মহাদেব কুমার, সোবাহান আলী, মিন্টু হোসেন, উজ্জল কুমার, নিল কুমার, প্রভু কুমার, মিলন হোসেন, আসালত হোসেন, টিটো মিয়া, রমজান আলী, দীপঙ্কর বিশ্বাস, লাল চাঁদ ও সিন্দু কুমারের মোট ১০ বিঘা জমির পানের বরজের পান গাছ বুধবার ভোর রাতে কেটে দেওয়া হয়েছে। গ্রামবাসি ঘুরে ঘুরে মাঠের বরজগুলো পরীক্ষা করছেন কার কার পান গাছ কাটা হয়েছে।

কৃষক হোসেল আলী জানান, তিনি ১০ কাঠা জমিতে পান চাষ করেন। প্রতি সপ্তাহে পান বিক্রি করেন। এই ১০ কাঠা জমিতে পান চাষ করতে তার প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বছরে এই বরজ থেকে ৩ লক্ষাধিক টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন আশা ছিল।

এ জন্য প্রতি বছর তার আরো অতিরিক্ত ৩০ হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে। আরেক কৃষক সোবাহান আলী জানান, তিনি ১৬ কাঠা জমিতে পান চাষ করেছেন। জানুয়ারি মাসের দিকে পান গাছ রোপন করতে হয়। এরপর সেপ্টেম্বর মাসের দিক থেকে পান ভাঙ্গ শুরু হয়। গত বছর যারা পান গাছ রোপন করেছিলেন তারা এখন পান ভাঙ্গা শুরু করেছেন। তার ক্ষেতেও পান ভাঙ্গা শুরু হয়েছে। এই সময়ে এভাবে গাছগুলো কেটে দেওয়া হয়েছে।

সোবাহান আলী আরো জানান, ইতিপূর্বে চোরেরা তাকে মেহগুনি গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে পান চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে তারা লাভের পরিবর্তে আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়ে যাবেন।

ওই এলাকার ইউপি সদস্য নাসির উদ্দিন জানান, গাছগুলোর গোড়া কেটে দেওয়া হয়েছে। এখন ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যে গাছ উপর থেকে শুকিয়ে আসবে। তিনি বলেন, মাঝে মধ্যেই পানের ক্ষতি হচ্ছে শুনে মাসাধিককাল পূর্বে তারা জালালপুর বাজারে এক সভা করেন। সেখানে পুলিশের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তারা বরজ পাহারা দিবেন। সেই সিদ্ধান্তের কারনে এখন রাতে বরজ পাহারা দেওয়া হয়। কিন্তু বুধবার যারা পাহারায় ছিলেন তারা ভোর রাতে বাড়ি চলে আসেন। আর এই সুযোগেই ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে তাদের আশংকা।

এ ব্যাপারে তালসার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান জানান, বুধবার ভোরের ঘটনা তাকে কেউ অবহিত করেনি। যেভাবে পাহারা দেওয়ার কথা সেভাবে দেওয়া হলে বরজের ক্ষতি করার সুযোগ নেই। যারা পাহারায় ছিল তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেনি বলে তিনি জানান। বিষয়টি খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button