অন্যান্য

কিশোর কিশোরীরা কেন আত্মহত্যা প্রবণ হয়

কিশোর কিশোরীদের যারা অবহেলা, কটূক্তি, অপরাধ প্রবণতা, পারিবারিক সহিংসতা এবং যৌন নিপীড়নের শিকার হয়- তারা আত্মঘাতী এবং আত্মহত্যা প্রবণ বেশি হয়ে থাকে। লন্ডনের কিংস কলেজের একটি গবেষণায় এমন ফলাফলই দেখা গেছে।

গবেষণা রিপোর্ট বলছে যে, এই চিত্রটি কিছুটা জটিল। কেননা এসব অনুষঙ্গের সাথে সাথে আত্ম-সম্মান বোধের অভাব কিংবা পরিবারের সমর্থন না থাকার বিষয়ও প্রভাব ফেলে থাকে।

তবে এই গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, কৈশোর বয়সে এমন সব সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করলে তাদের আত্মহত্যার প্রবণতাও বন্ধ করা যেতে পারে।

পৃথিবী জুড়েই কিশোরদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ আত্মহত্যা এবং আত্ম-পীড়ন।

গত বছরে প্রকাশিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র এ সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকে এমন চিত্রই পাওয়া যায়:

– আত্মহত্যা এবং আত্ম পীড়নের কারণে আনুমানিক ৬৭ হাজার আকস্মিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

– ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা, শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ এবং গর্ভকালীন জটিলতা-জনিত মৃত্যুর পর কৈশোরকালীন মৃত্যুর পেছনে আত্মহত্যা এবং আত্ম-পীড়নকে মূল কারণ হিসেবে দায়ী করা হতো।

– ইউরোপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও কিশোর মৃত্যুর অন্যতম প্রধান দুইটি কারণ এগুলোই।

– আত্ম পীড়নের প্রবণতা কিছুটা পরিণত বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বিশ্বব্যাপী পরিণত কিশোরীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ হল এই আত্মহত্যা ও আত্মপীড়ন।

এই গবেষণা কিভাবে করা হল?
এ বিষয়টিকে ঘিরে একটি দীর্ঘ মেয়াদী গবেষণা চালানো হয় । ১৯৯৪-৯৫ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে জন্ম নেয়া দুই হাজার ২৩২ জন যমজদের দীর্ঘমেয়াদে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।

সেখানে তাদের বিভিন্নভাবে এবং ব্যাপক হারে নিপীড়নের শিকার হওয়ার প্রমাণ মেলে।

তাদের বয়স যখন ১৮ বছর হয় তখন তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া কৈশোরকালীন বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের বিষয়ে সাক্ষাতকার নেয়া হয়।

সেসব ঘটনার মধ্যে ছিল নির্যাতন, অবহেলা, যৌন নিপীড়ন, পারিবারিক সহিংসতা, ভাই বা বোনের দ্বারা নির্যাতন, সাইবার নিপীড়ন ইত্যাদি।

গবেষণায় কি পাওয়া গেল?
গবেষণা থেকে উঠে আসা চিত্রে দেখা গেল যে, এক তৃতীয়াংশ কিশোর-কিশোরী তাদের ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সের মধ্যে অন্তত একবার গুরুতর নির্যাতন বা নিপীড়নের শিকার হয়ে থাকে।

আর অন্তত ৭% দুই থেকে তিন ধরনের গুরুতর নিপীড়নের শিকার হয়।

প্রায় এক পঞ্চমাংশের ( ১৮.৯%) ক্ষেত্রে ছিল কিছু স্ব-ক্ষতিকারক চিন্তা ও আচরণ।

যেসব কিশোর-কিশোরীদের ক্ষেত্রে এমন বিষয় ঘটেনি তাদের তুলনায় এমন নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এ ধরণের চিন্তাভাবনা বেশি ছিল।

যারা অতিরিক্ত নির্যাতনের শিকার হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে আত্ম-পীড়নের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়েছে এবং আত্মহত্যার চেষ্টার ঝুঁকি বেড়েছে তিনগুণ।

তিন বা ততোধিক ধরনের নিপীড়নের শিকারে আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক কিশোর আত্মঘাতী ভাবনা এবং আত্ম-নিপীড়নের সম্মুখীন হয়েছিল। আর এর এক চতুর্থাংশ আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল।

কিন্তু, পারিবারিক এবং ব্যক্তিগতভাবে এই ঝুঁকিগুলোর মোকাবিলা করার পরেও এমন অভিজ্ঞতার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে আত্মঘাতী ভাবনা বা আত্ম-পীড়নের প্রবণত বাড়তে দেখা গেছে, যদিও তারা আত্মহত্যার চেষ্টা আর করেনি।

গবেষণাটি কেন করা হল?
নিপীড়নের শিকার হওয়ার হাত থেকে কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা করার কিছু উপায় গবেষণায় উঠে আসে।

তারমধ্যে রয়েছে-স্কুলভিত্তিক কটূক্তি নিরোধ পদক্ষেপ নেয়া, পারিবারিক সহায়তা কর্মসূচি এবং কমিউনিটিতে সুরক্ষা উদ্যোগের মাধ্যমে তাদের আত্মঘাতী ভাবনা ও কাজে ক্ষতির সম্ভাবনা হ্রাস করা।

এই সাথে এটিও বলা হয়েছে যে, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বয়:সন্ধিকালের অকাল মৃত্যু ঠেকানোর সাথে সাথে আগে থেকে বিদ্যমান সমস্যাগুলোরও মোকাবিলা করতে হবে।

এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক কিংস কলেজ লন্ডনের জেসি বেল্ডউইন বলেন, “আমাদের গবেষণাতে দেখা গেছে যে কৈশোরে নির্যাতনের ঘটনা তাদেরকে আত্ম-পীড়ন ,আত্মহত্যা এবং তার চেষ্টার ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যারা বাজে ব্যবহার, কটূক্তি, সাইবার বুলিং বা অন্যান্য নিপীড়নের মুখোমুখি হয়।”

এক্ষেত্রে বিষয়গুলোকে সামনে আনলে আর তাদের পাশে থাকলে তাদেরকে এমন প্রবণতা থেকে বের করে আনা সম্ভব বলে মনে করেন মিস্টার বেল্ডউইন।

তার মতে, অল্প বয়সীদের সাথে এধরনের কাজ আরও বিস্তৃতভাবে হওয়া উচিৎ। কেননা নির্যাতিত কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য দুর্বল থাকে আর তাদের আত্ম নিপীড়নের হারও থাকে বেশী।

আমেরিকান একাডেমী অফ চাইল্ড এন্ড এডোলোসেন্ট সাইক্রিয়াটি নামে একটি জার্নালে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button