ধর্ম ও জীবন

যে ব্যক্তির দোয়া ফেরেশতাদের মতো দ্রুত কবুল হয়

ঝিনাইদহের চোখঃ অসুস্থ ব্যক্তির সেবা-যত্ন করা, তার খোঁজ-খবর নেওয়া ও সান্তনার বাণী শোনানো হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নত। অসুস্থতার মাধ্যমে মানুষের গুনাহ মাফ হয়। মর্যাদা বাড়ে। তথাপি তার দোআও কবুলের কথা হাদীসে বিশেষভাবে বর্ণিত হয়েছে।

রোগী দেখার বিষয়ে হাদীসে এসেছে, হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শোনেছি, যে ব্যক্তি সকালবেলা কোনো অসুস্থ মুসলমানকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা বিকাল পর্যন্ত তার জন্য দোয়া করতে থাকে। আর বিকেলে রোগী দেখতে গেলে সকাল পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা দোয়া করে। -সুনানে তিরমিজি: ৯৬৭

রোগীকে দেখতে যাওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সুন্নাত রয়েছে। তা এই ; ১. অজুসহকারে রোগী দেখতে যাওয়া। এ মর্মে হজরত আনাস (রা.) রেওয়ায়েত করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোনো অসুস্থ মুসলমান ভাইকে দেখতে যায়- তাকে জাহান্নাম থেকে ৬০ বছরের পথ দূরে রাখা হবে। -আবু দাউদ: ৩০৯৭

২. রোগীর অবস্থা বুঝে শরীরে হাত রেখে রোগের কথা জিজ্ঞাসা করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, শুশ্রুষার পূর্ণতা হলো- রোগীর কপালে বা শরীরে হাত রেখে জিজ্ঞেস করা, কেমন আছেন? তিরমিজি ৩. রোগীর সামনে এমন কথা বলা যাতে সে সান্তনা লাভ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো রোগীকে দেখতে গেলে বলতেন, সান্তনামূলক কথা বলতেন বলে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে।

৪. রোগীর কাছে বেশি সময় ক্ষেপন না করা। রাসূল (সা.) বলেন, রোগী দেখার সময় হলো- উটের দুধ দোহন পরিমাণ। আরেক বর্ণনায় এসেছে, রোগী দেখার উত্তম পন্থা হলো- তাড়াতাড়ি ফিরে আসা।

৫. রোগী কিছু খেতে চাইলে এবং তা তার জন্য ক্ষতিকর না হলে খেতে দেওয়া। রাসূল (সা.) বলেছেন, রোগী যদি কিছু খেতে চায়- তবে তাকে খেতে দেওয়া উচিত। -ইবনে মাজাহ

৬. রোগীর সামনে উচ্চ আওয়াজে কথা না বলা। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, সুন্নত হলো- রোগীর পাশে কম সময় বসা এবং উঁচু আওয়াজে কথা না বলা।

৭. রোগীর জন্য দোয়া করা। বিভিন্ন দোয়া হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেন, কোনো রোগীর কাছে গিয়ে নিম্নের দোয়াটি সাতবার পাঠ করলে মৃত্যুরোগ ছাড়া সব রোগ থেকে সে সুস্থ হয়ে ওঠবে- ইনশা আল্লাহ। দোয়াটি হলো- আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আই ইয়াশফিয়াকা। -আবু দাউদ: ৩১০৬

৮. রোগীর কাছে নিজের জন্য দোয়া চাওয়া। রাসূল (সা.) বলেন, ‘তোমরা রোগী দেখতে গেলে তার কাছে নিজের জন্য দোয়া চাও। কেননা তার দোয়া ফেরেশতাদের দোয়ার সমতুল্য।’ -ইবনে মাজাহ

হাদীসে রোগীকে দেখতে যাওয়ার নির্দেশনা এসেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, এক মুসলমানের ওপর অপর মুসলমানের ৫টি হক রয়েছে। তা হলো- ১. সালামের জবাব দেওয়া, ২. হাঁচির উত্তর দেওয়া, ৩. দাওয়াত কবুল করা, ৪. অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া ও ৫. জানাজায় অংশগ্রহণ করা। -সহিহ বোখারি: ১২৪০

হাদিসে কুদসিতে বলা হয়েছে, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে দেখতে যাওনি। বান্দা বলবে, আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক- আমি আপনাকে কিভাবে দেখতে যেতে পারি? আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল। তুমি তাকে দেখতে গেলে সেখানে আমাকে পেতে…। (সহিহ মুসলিম: ২১৬২)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button