ধর্ম ও জীবন

কীভাবে উপার্জন করতে বলে ইসলাম?

ঝিনাইদহের চোখঃ
চাকরিতে নিয়াগকালে কর্তৃপক্ষ থেকে যে কোনো লিখিত বা মৌখিক শর্তারোপ করা হলে তা পালন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর অবশ্যকর্তব্য।

কেননা, এটা এক ধরনের চুক্তি, যার মাধ্যমে সে তা পূরণ করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়। ইসলামের বিধানে অঙ্গীকার পূরণ করা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা অঙ্গীকারগুলো পূরণ কর। (সূরা আল মায়িদা)

রাসূলুল্লাহর স. জীবদ্দশায় এবং খোলাফায়ে রাশিদিনের খেলাফতকালে বিশিষ্ট সাহাবিরা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যার বিনিময়ে তাদের নির্ধারিত হারে বেতন দেয়া হতো। হজরত ওমর রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহর স. যুগে (রাষ্ট্রের) কাজ করেছি।তিনি আমাকে কাজের বিনিময় দিয়েছেন।

চাকরির মাধ্যমে উপার্জন বৈধ হলেও তা সব চাকরির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। যদিও চাকরিজীবী ব্যক্তি শ্রমের বিনিময়ে উপার্জন করে থাকে। তরপরও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চাকরি করা ইসলামে অনুমোদিত নয়। যেমন: সুদি কারবারের লেখক হিসেবে চাকরি করা বা মাদকদ্রব্য প্রস্তুতকরণ, পরিবহন, পরিবেশন করা। এ জাতীয় কাজ ইসলামে হারাম করা হয়েছে। এরূপ চাকরির উপার্জন ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।চাকরিরউপার্জন বৈধ হওয়ার জন্য চাকরির ক্ষেত্রটি ইসলাম সমর্থিত হওয়া আবশ্যক।

নিয়োগকর্তা বা ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষর আনুগত্য করা ও তাদের বৈধ নির্দেশ পালন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর অবশ্যকর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আনুগত্য কর রাসূলের এবং তোমাদের দায়িত্বশীলদের। (সুরা নিসা-৫৯)।

চাকরি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিয়োগকর্তা এবং ঊর্ধবতন কর্তৃপক্ষ দায়িত্বশীল হওয়ায় তাদের আনুগত্য করা আল্লাহর এ বাণী দ্বারা আবশ্যক সাব্যস্ত হয়।

অবশ্য দায়িত্ব বহির্ভূত কোনো কাজের নির্দেশ দেয়া হলে তা পালন করা ওয়াজিব নয়; কেননা, তা দায়িত্বভুক্ত নয়। আবার অন্যায় কাজে তাদের আনুগত্য করাও আবশ্যক নয়। রাসূলুল্লাহ স.বলেন, ‘কোনো পাপ কাজে কারও আনুগত্য নেই; আনুগত্য শুধু ভালো কাজে।’ (বুখারি মুসলিম)।

এরূপ পরিস্থিতিতে আনুগত্যের পরিবর্তে সাধ্যমতো তা প্রতিহত করা কর্তব্য হয়ে যায় বলে অন্য হাদিসে উলেস্নখ রয়েছে।

তবে যদি পাপকাজে বা অন্যায়ে এমনভাবে বাধ্য করা হয়, যা থেকে বাঁচার আর কোনো পথ থাকে না তাহলে এর নৈতিক দায় তাদের ওপর বর্তায় না। চাকরিসংশ্লিস্ট নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করা কর্মকর্তা-কর্মচারীর কর্তব্য।

ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্বে অবহেলা করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। কেননা, এতে উপার্জন বৈধ হয় না; অথচ উপার্জন হালাল হওয়া ফরজ এবং হারাম উপার্জনের পরিণতি জাহান্নাম।

কর্তব্যে অবহেলার জন্য প্রত্যেককে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল; আর তোমরা প্রত্যেকেই তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারি)।

চাকরিজীবীদের প্রায় সবারই কমবেশি ক্ষমতা থাকে। অবস্থান ও পদক্রমানুসারে ক্ষমতার পরিধির তারতম্য থাকলেও নিজ নিজ ক্ষত্রে প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্যমান ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ থাকে।

এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোনো কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ফলে স্বেচ্ছাচারিতা, অর্থ-সম্পত্তি আত্মসাৎ, ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি, অন্যায়ভাবে স্বার্থসিদ্ধি প্রভৃতি সংঘটিত হয়। এসব কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করো না।’ (সুরা নিসা-২৯)।

চাকরিজীবী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন কারও কাছ থেকে উপহার গ্রহণ বৈধ নয়, যার সঙ্গে তার কর্তব্যের সংশ্লিস্টতা থাকায় তাকে কর্তব্য পালনে প্রভাবিত করার সংশয় বিদ্যমান থাকে। রাসুলুল্লাহ সা. এক ব্যক্তিকে জাকাত আদায়কারী কর্মকর্তা নিয়াগ করেছিলেন।

জাকাত আদায়ান্তে তিনি ফিরে এসে কিছু সম্পদকে তার প্রাপ্ত উপহার হিসেবে উপস্থাপন করলেন। এতে রাসূলুল্লাহ সা. অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে কঠোরভাবে ভৎর্সনা করেছিলেন।

এ জাতীয় উপহার প্রকৃতপক্ষ উপহার না হয়ে ঘুষে পরিণত হয় এবং তা দুর্নীতির বিসত্মার ঘটায় বিধায় ইসলাম এর অনুমোদন দেয় না। এভাবে সেবাপ্রার্থীদের ফাইল আটকে রেখে অর্থ দাবি করা বা ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে কারও ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করাও ইসলামের দৃষ্টিতে মহা অন্যায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button