কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহের মৃৎ শিল্পীদের রাত-দিন ব্যস্ততা

মোঃ হাবিব ওসমান, ঝিনাইদহের চোখঃ

খেজুরের গুড়ের মৌসুমকে সামনে রেখে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মৃৎ শিল্পীরা এখন খেজুরের রস, গুড় সংরক্ষণের জন্য ভাড় ও কলসী তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছে।

শীত আসলেই কুমার (পাল) সম্প্রদায়ভুক্ত পরিবারের দম ফেলার ফুসরত থাকেনা। ভাড় তৈরির প্রধান উপকরণ এঁটেল মাটি যা দূরের মাঠ থেকে সংগ্রহ করে বাড়িতে এনে তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে কোদাল দিয়ে কয়েকবার ঝুরঝুরে করে কেটে পা দিয়ে ছেনে মোলায়েম করা হয়। মোলায়েমকৃত মাটি বোলে দিয়ে বালির সংমিশ্রণে মাটি চাপড় বানানোর পর ছাঁচে দিয়ে হাতের কারুকার্য দিয়ে ভাড়ের কানাসহ ভাড়ের উপরিভাগ তৈরি করা হয়। এই ছাঁচে ভাড়ের নীচের অংশ তৈরির পর পৃথক দুটি অংশকে জোড়া লাগিয়ে দু’দিন রোদে শুকানো হয়। রোদে শুকানো ভাড়ে রং লাগিয়ে পাজায় (আগুনে) ৫ ঘন্টা ব্যাপী পোড়ানোর পর তৈরি হয় পরিপুর্ন রস সংগ্রহের উপযোগী ভাড়।

কালীগঞ্জের আড়পাড়ার পালপাড়া, রায়গ্রাম ইউনিয়নের গোমরাইল গ্রামের পালপাড়াসহ এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কুমারদের অনেকেরই আজ আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে খেজুরের রস ও গুড় সংগ্রহের জন্য পাতিল তৈরী করে।

মৃৎ শিল্প ব্যবসা মৌসুমী হওয়ার কারণে সারা বছর বসে কাটাতে হয়। তাই অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরেও উপজেলার তৈলকূপী, গোপালপুর, গোমরাইল, দাঁদপুর, বালিয়াডাঙ্গা, আড়পাড়া, পারশ্রীরামপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা বংশ পরম্পরায় বাপ-দাদার এ আদি পেশাটি আকড়ে ধরে আছেন। ইতি মধ্যে এ অঞ্চলের গাছিরা গুড় উৎপাদনে রস আহরণের জন্য খেজুর গাছ তোলার কাজ শেষ করেছে। ইতোমধ্যেই গুড় উৎপাদনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে কালীগঞ্জের গাছিরা। এ জন্য গাছিদের প্রয়োজনীয় উপকরণ ভাড়ের যোগান দিতে মৃৎ শিল্পীরা দিন-রাত এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

সরেজমিনে উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের গোমরাইল গ্রামের (পাল) কুমার পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, নিমাই পাল ও তার স্ত্রী মিনতি রাণী পাল একমনে হাতের কারুকার্যের নিখুঁত ছোয়ায় ভাড় তৈরী করে চলেছেন। ছাঁচে ভাড় তৈরির নান্দনিক দৃশ্যটি খুবই মনোমুগ্ধকর। ভাড় বানানোর দৃশ্য অবলোকনের জন্য যে কেউ থমকে যাবেন।

গোমরাইল গ্রামের গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার পাল পাড়ার অনেক বাড়ির নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই ভাড় তৈরিতে এতো ব্যস্ত যে কারো সাথে বাড়তি কথা বলার সময় তাদের নেই। তবুও ব্যস্ততার ফাঁকে ফাঁকে কথা হয় ভাড় তৈরিতে সাহাদেব পাল, অনিমা রানী পাল, বাসুদেব পাল, আন্না রানী পাল, নিত্যপাল, কাকলী রানী পাল, সত্যপদ পালসহ কয়েক জন মৃৎ শিল্পীর সাথে। তারা বলেন শীত এলেই ভাড়ও কলসী তৈরির কাজে শুধু পুরুষ নয় বাড়ির গৃহিনী থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েরাও পড়ালেখার ফাঁকে তাদের বাবা মায়ের কাজে সাহায্য করছে।

মৃৎ শিল্পী মিনতি রাণী পাল বলেন, প্রতিদিন তিনি ও তার স্বামী মিলে ৫০ থেকে ৬০টি ভাড় তৈরি করতে পারেন। মৃৎ শিল্পী বাসুদেব পাল বলেন, প্রতিটি ভাড় ১২/১৫ টাকা করে বিক্রি করা হয়। আর ভাড় ও কলসী বিক্রির টাকা দিয়ে তারা ছেলে মেদের লেখা পড়া ও সংসারের খরচ যুগিয়ে থাকেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button