রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর (পর্ব- ১)

ঝিনাইদহের চোখঃ
আল্লাহই আমাদের রব ও পালনকর্তা- বান্দাকে সুনিশ্চিতভাবে জানতে ও স্বীকার করতে হবে যে, আল্লাহ হলেন এককভাবে সকল কিছুর মালিক ও প্রতিপালক, তিনি সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, তিনি সমগ্র বিশ্বকে এককভাবে পরিচালনা করেন। তিনি আকাশ থেকে জমিন পর্যন্ত সকল কার্য পরিচালনা করছেন, সর্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহর।
অর্থাৎ সার্বভৌমত্বে, প্রভুত্বে, ধন-সম্পদে, প্রতিপালনে, কর্তৃত্বে ইত্যাদির ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহই অধিপতি ও মালিক, এতে তাঁর কোন শরীক বা অংশীদার নেই। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের মাতৃগর্ভে, এক সৃষ্টি পর আরেক সৃষ্টি, ত্রিবিধ অন্ধকারে। সে আল্লাই তোমাদের রব, সর্বময় কর্তৃত্ব ও রাজত্ব তাঁরই, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তবুও তোমাদের কোথায় ফিরানো হচ্ছে?” (সূরা যুমার- ৬)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, তিনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবেশ করান এবং দিনকে রাতের মধ্যে প্রবেশ করান, আর তিনিই সূর্য ও চাঁদকে বশীভুত করে দিয়েছেন, প্রত্যেকে পরিভ্রমন করছে একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত। তিনি আল্লাহ তোমাদের রব, সমস্ত কর্তৃত্ব তাঁরই, আর আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তোমরা ডাকো তারা খেজুর আঁটির আবরণেরও মালিক নয়। (সূরা ফাতির- ১৩)
একথা বলা উদ্দেশ্য তারা যে কতক নবী, ফেরেশতা, ওলী আওলীয়াকে বিপদের মুহূর্তে আহ্বান করলে প্রথমত তারা শুনবেই না বা শুনতে পারবে না। কেননা তাদের মধ্যে শ্রবনের যোগ্যতা নেই, নবী ও ফেরেশতাগণ তাদের মধ্যে যোগ্যতা থাকলেও তাঁরা তোমাদের আবেদন পূর্ণ করার ক্ষমতা রাখেন না। আল্লাহ তাআলার অনুমতি ব্যতীত তাঁরা তাঁর কাছে কারো জন্য সুপারিশও করতে পারবে না।
বিধাতা বা হুকুমদাতা একমাত্র আল্লাহ-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “বিধান দেওয়ার অধিকার একমাত্র আল্লাহরই। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন শুধু তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত না করতে, এটা শাশ্বত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এটা জানে না।” (সূরা ইউসূফ, ৪০)
একথা বলার উদ্দেশ্য হল রাজত্ব ও হুকুম সবই একমাত্র আল্লাহর। তিনি তাঁর বান্দাদের সবাইকে এই নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তিনি ব্যতীত আর কারো যেন ইবাদত করা না হয়, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না বলেই শিরকে লিপ্ত হয়। (তাফসীর ইবনে কাসীর-১২/১৭৩)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, “তারা কি দেখে না যে, আমরা এই জমিনকে চর্তুদিক দেখে সংকুচিত করে আনছি? আর আল্লাহই আদেশ করেন, তাঁর আদেশ বাতিল করা কেউ নেই এবং তিনি হিসেব গ্রহণে তৎপর।” (সূরা রা’দ- ৪১)
অর্থাৎ আপনার বিরোধীরা কি দেখছে না ইসলামের প্রভাব আরব ভূখন্ডের সর্বত্র দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে? চর্তুদিক থেকে তাঁর বেষ্টনী সংকীর্ণতর হয়ে আসছে? এখানে জমিন সংক্ষিপ্ত করার আরেক অর্থ এও করা হয় যে, জমিনের ফল-ফলাদী ও ফসলাদী কমিয়ে দেওয়া, ভাল লোক, আলেম ওলামাদের প্রার্থনা করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ১২/২৯৯)
আল্লাহই আদেশ করেন অর্থাৎ তিনি তাঁর সৃষ্টিকে যা ইচ্ছা তা নির্দেশ দেন, তিনিই ফায়সালা করেন যেভাবে ইচ্ছা, কাউকে মর্যাদার উপরে উঠানো আবার নীচুতে নামিয়ে আনেন, কাউকে জীবিত করেন, কাউকে মৃত্যু দান করেন, কাউকে ধনী করেন আবার কাউকে ফকির করেন। তিনি ফায়সালা দিচ্ছেন যে, ইসলাম সম্মানিত হবে এবং সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী থাকবে তাঁর নির্দেশের পিছু নিয়ে কেউ সেটাকে বাতিল করতে বা পরিবর্তন করতে পারবে না। (তাবারী, ১৬/৪৯৩)
চলবে…
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা কুমার পাড়া জামে মসজিদ, আড়াই হাজার, নারায়ণগঞ্জ।