ধর্ম ও জীবন

রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ

বিচারদিনের বাদশাহ আল্লাহই-

মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, সেদিনের (কিয়ামতের দিনের) বাদশাহ আল্লাহই, তিনি তাঁদের মধ্যে বিচার করবেন। সুতরাং যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাঁরা নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতসমূহে অবস্থান করবে। আর যারা কুফরী (পাপ) করে আর আমার নির্দশনসমূহকে অস্বীকার করে তাদের জন্যই রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সূরা হজ- ৫৬, ৫৭)

আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, যে দিন (কিয়ামতের দিন) তাদের জিহ্বাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত, সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। সেদিন আল্লাহ তাদের ন্যায্য প্রতিদান দিয়ে দেবেন, আর তারা জানবে যে, আল্লাহ সুস্পষ্ট সত্য। ( সূরা নূর- ২৪)

অর্থাৎ যেদিন তাদের বিরুদ্ধে স্বয়ং তাদের জিহ্বা ও হস্তপদাদী কথা বলবে ও তাদের অপরাধসমূহের সাক্ষ্য দিবে। কিয়ামতের দিন যে পাপাচারী তার পাপের কথা স্বীকার করবে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন এবং সবার দৃষ্টি থেকে তার পাপ গোপন রাখবেন। (সহীহ বুখারী, হা- ৬০৭০, সহীহ মুসলিম, হা- ২৭৬৮)

পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি সেখানেও অপরাধ অস্বীকার করে বলবে, আমি এই কাজ করিনি, পরিদর্শক ফেরেশতা ভুল করে আমার আমলনামায় লিখে দিয়েছে, তখন তার মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং হস্তপদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে, তখন তারা সাক্ষ্য দিবে এবং কথা বলবে।

আনাস রাঃ বলেন, আমরা একবার রাসূল (সাঃ) এর কাছে ছিলাম। এমন সময় তিনি এমনভাবে হাসলেন যে, তাঁর মাড়ির দাঁত দেখা গেল। তারপর তিনি বললেন, তোমরা কি জানো আমি কেন হাসছি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, কিয়ামতের দিন বান্দা তার প্রভুর সাথে যে ঝগড়া করবে তা নিয়ে হাসছি। সে বলবে হে প্রভু! আমাকে কি আপনি জুলুম থেকে নিরাপত্তা দেননি?

তিনি বলবেন, হ্যাঁ। তখন সে বলবে আমি আমার বিরুদ্ধে নিজের ছাড়া অন্য কারোর সাক্ষ্য গ্রহণ করবো না, তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন তুমি নিজেই তোমার হিসাবের জন্য যথেষ্ট। আর সম্মানিত লেখকবৃন্দকে সাক্ষ্য বানাবো। তারপর তার মুখে মোহর মেরে দেওয়া হবে এবং তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে কথা বলার নির্দেশ দেওয়া হবে। ফলে সেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তাদের কাজের বিবরণ দিবে।

তারপর তাকে কথা বলার অনুমতি দেওয়া হবে। তখন সে বলবে, তোমাদের ধ্বংস হোক, তোমাদের জন্যইতে আমি প্রভুর সাথে ঝগড়া করেছিলাম। (সহীহ মুসলিম, হা- ২৯৬৯)
অন্য হাদীসে এসেছে, তোমাদেরকে মুক করে ডাকা হবে, তারপর প্রথম তোমাদের উরু (রান) এবং দু’হাতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। (মুসনাদে আহমদ, ৪/৪৪৬, ৪৪৭, ৫/৪-৫)

আরেক হাদিসে এসেছে তারপর অপরজনকে ডাকা হবে আর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তুমি কে? সে বলবে, আমি আপনার বান্দা, আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার নবী ও কিতাবের প্রতিও ঈমান এনেছি। আর আপনার জন্য সালাত, রোজা, সদকাহ ইত্যাদি ভাল কাজের প্রশংসা করে তা আদায়ের দাবি করবে। তখন তাকে বলা হবে আমরা কি তোমার জন্য সাক্ষীকে হাজির করবো না?

তখন সে চিন্তা করবে যে, এমন কে আছে যে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়? আর তখনই তার মুখের উপর মোহর এটে দেওয়া হবে, এবং তার উরুকে বলা হবে কথা বল। তখন তার উরু, মাংস, হাড় যা করেছে তার সাক্ষ্য দিবে। আর এরাই হলো মুনাফিক বা কপট। এটা এ জন্যেই যাতে আল্লাহ নিজের ওজর বা আপত্তি পেশ করতে পারেন এবং তার উপরই আল্লাহ অসন্তুষ্ট। (সহীহ মুসলিম, হা- ২৯৬৮)

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা কুমার পাড়া জামে মসজিদ, আড়াই হাজার, নারায়ণগঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button