কুরআনের আলোকে ওলী ও তার বৈশিষ্ট্য

ঝিনাইদহের চোখঃ
বন্ধু শব্দের আরবী হলো ওলী, ওলী শব্দের বহুবচন হল আওলিয়া। ওলী শব্দের অর্থ হলো বন্ধু, অভিভাবক, সাহায্যকারী, কর্তা, পৃষ্ঠপোষক ও সুহৃদ।
ওলী / বন্ধুর বৈশিষ্ট্য- মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী তারা একে অপরের বন্ধু, তারা ভালো কাজের আদেশ দেয় ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করে, আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তাদের উপর আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তওবাহ – ৭১)
আবু হুরায়রা রাঃ বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, মুমিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু পাপিষ্ঠ ব্যক্তি ধোকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়। (আবু দাউদ, হা- ৪৭৯০)
তারিক ইবনে শিহাব রাঃ বলেন, মারওয়ান ইবনে হাকাম ঈদের দিন সালাতের পূর্বে খুৎবা দেওয়ার বিদআতি প্রথা প্রচলন করেন। এসময় এক ব্যক্তি দাড়িয়ে বলেন, খুৎবার আগে সালাম সম্পন্ন করুন, মারওয়ান বললেন, এখন থেকে সেই নিয়ম পরিত্যাগ করা হলো। সাথে সাথে আবু সাঈদ খুদরী রাঃ উঠে বললেন ঐ ব্যক্তি তাঁর কর্তব্য পালন করেছে।
আমি রাসূল (সা.) কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ গর্হিত কাজ হতে দেখলে সে যেন স্বহস্তে (শক্তি প্রয়োগে) পরিবর্তন করে দেয়। যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে কথা দ্বারা এর পরিবর্তন করবে। আর যদি সে সাধ্যও থাকে তাহলে তার অন্তর দ্বারা ঘৃনা করবে। তবে এটা ঈমানের দুর্বলতম পরিচায়ক। (সহীহ মুসলিম, হা- ৮১)
আল্লাহর দল-
আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমাদের বন্ধু কেবল আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনগণ, যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর নিকট অবনত হয়। আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহন করে, নিশ্চয়ই সেটি আল্লাহর দল, আর তারাই বিজয়ী হবে। (সূরা মায়েদাহ, ৫৫-৫৬)
আবু মুসা আল আশআ’রী রাঃ বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য সুদৃঢ় অট্টালিকা স্বরূপ। যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে। এ কথা বলে তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলোকে মুষ্টিবদ্ধ করলেন। (তিরমিযী, হাঃ-১৯২৮)
কায়েস হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি মুগীরা ইবনু শু’বাহ রাঃ কে রাসূল (সা.) হতে বর্ণনা করতে শুনেছি। রাসূল (সা.) বলেন আমার উম্মতের কিছু লোক সর্বদা বিজয়ী থাকবে। এমন কি কিয়ামত যখন নিকটবর্তী হবে তখনও তারা বিজয়ী থাকবে। (সহীহ বুখারী, হাঃ-৩৩৬৯)
মুমিনগণের ওলী হলেন আল্লাহ-
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আল্লাহ হলেন, মুমিনদের ওলী/অভিভাবক। (সূরা আলে ইমরান, ৬৮)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, নিশ্চয়ই আমার অভিভাবক/ওলী আল্লাহ, যিনি কিতাব অবর্তীর্ণ করেছেন। আর তিনি নেক লোকদের অভিভাবকত্ত্ব করেন। (সুরা আ’রাফ, ১৯৬)
এখানে ওলী অর্থ রক্ষাকারী, সাহায্যকারী, অভিভাবক। আর কিতাব অর্থ কুরআন, সালেহীন অর্থ সে সমস্ত লোক যারা আল্লাহ সাথে কাউকে সমকক্ষ সাব্যস্ত্য করে না। এতে নবী রাসূল থেকে শুরু করে সাধারণ সৎকর্মশীল মুসলিম পর্যন্ত সবাই অন্তভুক্ত। (সাঈদ ইবনে মানসূর, ৩য় খন্ড/১৪৭পৃষ্ঠা, তাফসীর ইবনে কাসীর, ৪র্থ খন্ড/১১১ পৃষ্টা)
শয়তানের ওলী/অভিভাবক-
আল্লাহ তাআলা বলেন, আর অবশ্যই (শয়তান) বলে, আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো, মিথ্যা আশ্বাস দেব এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব, ফলে তারা পশুর কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে যারা শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে অবশ্যই সে স্পষ্ট ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হলো। সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় ও আশা দেয়, শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। (সূরা আন নিসা, ১২০)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, নিশ্চয়ই তার (শয়তানের) আধিপত্য নেই যারা ঈমান এনেছে তাদের উপর, আর তারা তাদের রবের উপর ভরসা করে। প্রকৃত পক্ষে, তার (শয়তানের) আধিপত্য চলে তাদের উপর যারা তাকে (শয়তানকে) বন্ধু বানিয়েছে। আর আল্লাহ সাথে শরীক করে। (সূরা নাহল, ৯৯-১০০)
মুজাহিদ রাহিঃ বলেন এর অর্থ যারা শয়তানের অনুসরণ করে তাদেরকেই সে পথভ্রষ্ট করে। যারা শয়তানের আনুগত্যের কারণে মুশরিক হয়েছে তাদের উপরই শয়তানের প্রভাব কার্যকর। (তাফসীর ইবনে কাসীর, ১৩/৫১৬, তাফসীরে তাবারী, ১৭/২৯৪)
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেছেন, আল্লাহ তাআলা লানত করেছেন সেই সমস্ত মহিলাদের উপর যারা শরীরে উল্কি আঁকে এবং যারা সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির জন্য ভ্রু কাটে ও দাঁত চিকন করে আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করে। (সহীহ বুখারী, হাঃ-৪৮৮৬)
কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা-
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে বিদ্রুপ ও খেলার বস্তুরূপে গ্রহণ করেছে তাদেরকে এবং কাফেরদেরকে বন্ধ/ওলী রূপে গ্রহন কর না। আর আল্লাহকে ভয় কর। যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা মায়িদাহ, ৫৭)
আল্লাহ তাআলা অন্যত্রে বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে অধিক ভালবাসে আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই জালিম। (সূরা তওবা, ২৩)
সুতরাং মুমিনদের অভিভাবক হলেন আল্লাহ, আর মুমিনদের বন্ধু হবে মুমিনগণ, যারা ভাল কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তারাই আল্লার দল আর তারাই আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রাপ্ত হয়ে বিজয়ী হবে। তাদের কোন ভয় নেই, কোন চিন্তাও নেই।
লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা কুমার পাড়া জামে মসজিদ, আড়াই হাজার, নারায়ণগঞ্জ।