কালীগঞ্জটপ লিড

লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন ঝিনাইদহের সিরাজুল

ঝিনাইদহের চোখঃ

উত্তম কৃষিচর্চার বৈশ্বিক মানদণ্ড নির্ধারণ করে গ্লোবাল গ্যাপ (গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস)। ইউএসএআইডি ও গ্লোবাল গ্যাপের সহযোগিতায় দেশের চার শতাধিক চাষীকে উত্তম কৃষিচর্চার প্রশিক্ষণ দিয়েছে স্বপ্ন। গ্লোবাল গ্যাপের মানদণ্ড মেনে সবজি উৎপাদন করছেন এসব চাষী। তাদের একজন ঝিনাইদহের সিরাজুল ইসলাম পিন্টু

শুরুটা আট বছর আগে। দুই বিঘা জমিতে চাষাবাদের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে সবজি উৎপাদন শুরু করেন সিরাজুল ইসলাম পিন্টু। বর্তমানে এলাকার অন্যতম সফল কৃষক তিনি। তার উৎপাদিত সবজি এখন নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে স্বীকৃত। ফলন ও দাম— দুটোই পাচ্ছেন বেশি করে। তার উৎপাদিত শিম ও পুঁইশাক সরবরাহ হচ্ছে চেইন শপ স্বপ্নে।

শুধু নিরাপদ মাত্রায় ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে এ সাফল্য অর্জন করেছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কুল্লাপাড়া গ্রামের এ কৃষক। হয়ে উঠেছেন এলাকার অন্যান্য কৃষকের জন্য অনুকরণীয় এক আদর্শ।

শুরুতে এ-সংক্রান্ত ধারণা না থাকায় সবজি ক্ষেতে অতিরিক্ত মাত্রায় সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতেন সিরাজুল ইসলাম পিন্টু। পরবর্তী সময়ে চেইন শপ স্বপ্নের মাঠকর্মী ও স্থানীয় কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের উপদেশ কাজে লাগিয়ে রাসায়নিকের প্রয়োগ পরিমিত ও নিরাপদ মাত্রায় নামিয়ে আনেন তিনি। সঠিক ব্যবহারের কারণে একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ কমিয়ে আনতে পেরেছেন তিনি, অন্যদিকে তার উৎপাদিত সবজিও পেয়েছে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মততার স্বীকৃতি। উৎপাদিত শিম ও পুঁইশাক সরবরাহ করছেন সুপারশপ স্বপ্নে। চেইন শপটি থেকে ভালো দাম পাওয়ায় বেড়েছে তার মুনাফা। ভবিষ্যৎও হয়ে উঠেছে আরো নিরাপদ।

তিনি বলেন, আগে আমার সবজি ক্ষেতে প্রায় প্রতিদিনই কীটনাশকসহ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতাম। ক্ষেতে কীটনাশক স্প্রে করার পরদিনই সবজি উত্তোলন করে তা বাজারে নিয়ে বিক্রি করে দিতাম। কিন্তু চেইন শপ স্বপ্নের মাঠকর্মীদের পরামর্শ মোতাবেক এখন শিম ও পুঁইশাকে পরিমিত পরিমাণে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করছি। ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর এক সপ্তাহ পর সবজি তুলে প্রতিষ্ঠানটিতে সরবরাহ করছি। এ সময়ের মধ্যে কীটনাশকের বিষক্রিয়াও নষ্ট হয়ে যায়। এতে উৎপাদিত সবজি নিরাপদ থাকে। বর্তমানে চুক্তির ভিত্তিতে স্বপ্নে শিম ও পুঁইশাক সরবরাহ করছি আমি।

সিরাজুল ইসলাম পিন্টু বর্তমানে তিন বিঘা জমিতে শিম ও পুঁইশাক আবাদ করছেন। তিনি জানান, এ বছর দুই বিঘা জমিতে শিম ও এক বিঘা জমিতে পুঁইশাক আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে ১ লাখ টাকার শিম ও ৫০ হাজার টাকার পুঁইশাক বিক্রি করেছেন।

নিরাপদ সবজি উৎপাদনকারী এ কৃষকের বিশ্বাস, স্বপ্নের মাঠকর্মীদের সহায়তায় যে পদ্ধতিতে তিনি সবজি আবাদ করছেন, এ পদ্ধতিতে দেশের সব জেলায় সবজি উৎপাদন করা হলে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমে যাবে। একই সঙ্গে কৃষকরাও লাভবান হবেন।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিএম আব্দুর রউফ বলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কয়েকজন কৃষক এখন নিরাপদ উপায়ে সবজি উৎপাদন করছেন। এতে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি ক্রেতারাও স্বাস্থ্যসম্মত সবজি পাচ্ছেন। কৃষি অধিদপ্তরও এখন নিয়মিত এসব কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।

বণিক বার্তা

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button