ধর্ম ও জীবন

ইসলামে নারীর মর্যাদা (শেষ পর্ব)

ঝিনাইদহের চোখঃ

আর্থিক অধিকার-

ক) স্ত্রীর মোহরানা-

স্ত্রীর মোহর আদায় করা ফরজ। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, “উল্লেখিত নারীগণ ব্যতীত সকলকে বিবাহ করাতে তোমাদের জন্য বৈধ করা হল। এই শর্তে যে, তোমরা তাদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে বৈধ করে নিবে। অবৈধ যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে নয়। অতপর তোমরা তাদের মধ্যে যাদের মাধ্যমে দাম্পত্য সুখ উপভোগ করবে তাদেরকে নির্ধারিত মোহার দিবে।” (সূরা নিসা- ২৪)

অন্যত্রে আল্লাহ তাআলা বলেন, “তোমরা নারীদেরকে তার মোহর সন্তুষ্ট মনে দিয়ে দাও। পরে তারা খুশি মনে ঐ মোহরের কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর।” (সূরা নিসা- ২৪)

পরবর্তীতে যদি স্ত্রী স্বেচ্ছায় কিছু মাফ করে দেয় তাহলে সে কথা ভিন্ন। অবশ্যই তাকে মাফ করতে বাধ্য করা যাবে না। তেমনি তাকে মোহর দেওয়ার জায়গায় তার কাছ থেকে মোহর নেওয়া যাবে না। অর্থাৎ মেয়ের পিতার কাছ থেকে পণ বা যৌতুক হিসেবে যা নেওয়া সমাজে প্রচলিত আছে তা মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম।

খ) ভরণ পোষণ-

রাসূল (সা.) বলেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে যা ব্যয় করবে তোমাকে তার বিনিময়ে দেওয়া হবে। এমনকি তুমি যে, লোকমা/নলা স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে তারও বিনিময় তুমি পাবে।” (সহীহ মুসলিম)

রাসূল (সা.) বলেন, তুমি আল্লাহর পথে এক টাকা ব্যয় কর, “ক্রীতদাসকে মুক্ত করার জন্যে এক টাকা ব্যয় কর, মিসকিনকে দান কর এক টাকা, তুমি তোমার পরিবারের জন্যে এক টাকা ব্যয় কর। এ সবের মধ্যে ঐ টাকার বেশি নেকি রয়েছে যে টাকা তুমি তোমার পরিবার পরিজনের উপর ব্যয় করবে।” (সহীহ মুসলিম)

গ) গৃহস্থালী কাজে সহায়তা করা-

আয়েশা রাঃ কে জিজ্ঞেস করা হল যে, নবী (সা.) ঘরে কী করতেন? উত্তরে তিনি বলেন, তিনি সাংসারিক কাজ করতেন, অতপর নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য বের হয়ে যেতেন। (সহীহ বুখারী)

অর্থাৎ তিনি নিজের কাপড় নিজেই সেলাই করতেন, নিজের জুতা নিজে পরিষ্কার করতেন, বকরীর দুধ দোহন করতেন, যাতে স্ত্রীর বোঝা হালকা হয়।

ঘ) খেলাধুলা-

আয়েশা রাঃ বলেন, একদিন রাসূল (সা.) এর সাথে ভ্রমণে ছিলাম। সেখানে পূর্ণিমার রাতে আমি নবী (সা.) এর সাথে দৌড় প্রতিযোগিতা করে জয়ী হই। অতপর যখন আমার শরীর (মেদের কারণে) ভারী হয়ে যায় তখন পূনরায় দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম। এবার নবী (সা.) আমাকে পিছনে ফেলে জয়ী হলেন এবং বললেন, পূর্বের পরাজয়ের প্রতিশোধ হল এই জয়। (আবু দাউদ,মেশকাত, হা- ৩২৫১)

ঙ) অভিশপ্ত স্ত্রী-

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন, আল্লাহ তাআলা ঐ সমস্ত নারীদের প্রতি অভিশাপ করেছেন, যারা নিজেদের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধির করার উদ্দেশ্যে দেহে উল্কি (সূচিবিদ্ধ করে বা রং তুলির মাধ্যমে চিত্র অংকন) করে বা অন্যের মাধ্যমে করিয়ে নেয়, যারা ভ্রু উপড়িয়ে চিকন করে বা ভ্রু প্লাগ করে, যারা দাঁত সমূহকে শানিত ও সরু করে। কারণ তা আল্লাহর স্বাভাবিক সৃষ্টির বিকৃতি ঘটায়। (সহীহ মুসলিম, মিশকাত, হা- ৪৪৩১)

রাসূল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ সেই মহিলার দিকে করুণার দৃষ্টি দেন না, যে স্বামীর কৃতজ্ঞতা আদায় করে না আর সে তার স্বামীকে নিজের জন্য পরিপূর্ন মনে করে না।” (তাবারানী কাবায়ীর-২৯৩ পৃঃ)

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তার বিছানায় ডাকে, আর সে যেতে অস্বীকার করে এবং স্বামী অস্তুষ্ট অবস্থায় রাত্রী যাপন করে তখন ফেরেস্তাগণ সেই স্ত্রীর প্রতি সকাল পর্যন্ত অভিশাপ করতে থাকে।”

অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূল (সা.) আল্লাহর কসম করে বলেন, “কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীকে সহবাসের জন্য বিছানায় ডাকলে এবং তার স্ত্রী তা অস্বীকার করলে নিশ্চয় আল্লাহ তার উপর ততক্ষণ পর্যন্ত অসন্তুষ্ট থাকেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার স্বামী অসন্তুষ্ট থাকে।” (মুসলিম, মিশকাত, হা- ৩২৪৬)

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যদি আমি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীর প্রতি তার স্বামীকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম।” (তিরমিযী, মিশকাত, হা-৩২৫৫)

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যখন কোনো স্ত্রীলোক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, রামাযান মাসে রোজা পালন করবে, নিজের লজ্জাস্থানের হেফাজত করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে জান্নাতের যে কোন দরজা দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করতে বলা হবে।” (আহমদ, মিশকাত, হা- ৩২৫৪)

রাসূল (সা.) বলেন, “তোমার স্বামী তোমার জান্নাত ও জাহান্নাম।” (আহমদ, হা- ১৯০২৫)

রাসূল (সা.) বলেন, আমি জান্নাতের প্রতি লক্ষ্য করলাম ও দেখলাম জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসী দরিদ্র। অতপর জাহান্নামের দিকে লক্ষ্য করলাম ও দেখলাম জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী নারী। (মুসলিম, মিশকাত, হা- ৩৪৫২)

স্ত্রীদের কর্তব্য হল স্বামীর আনুগত্য করা। কেননা স্বামী হচ্ছে তার জান্নাত ও জাহান্নাম।

লেখক : মাওলানা আখতারুজ্জামান খালেদ, সাবেক ইমাম ও খতীব, দুপ্তারা, কুমারপাড়া, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button