ধর্ম ও জীবন

অথচ ইসলামে এ ধরনের দলাদলি-হানাহানি কঠিনভাবে নিষিদ্ধ!

ঝিনাইদহের চোখঃ

مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

অর্থ : যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লাসিত। (রুম ৩০ : ৩২)

আনলাইন বা অন্য যেকোনো জায়গায় দাওয়াতি কাজ করতে গিয়ে মহান আল্লাহর উক্ত আয়াতটির বাস্তবতার পার্থক্য করছি বারবার। কারণ, উপমহাদেশের আমরা আল্লাহ পাক প্রদত্ত এক অবিভাজ্য দ্বীনকে বহু ভাগে ভাগ করে ফেলেছি। আর যার যার ভাগের দ্বীনকে পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করছি। ফলে এমন হয়েছে আমাদের ধর্মের চিত্র যে কোন একটা দলে না গেলেই দলীয় দলান্দ্বরা ভাবছে আপনি আর দ্বীনে নেই।

আপনি সারাদিন চিৎকার করে যদি ঘোষণা দেন, ‘আমার দ্বীন ইসলাম’, তা তাদের বোধগম্য হবে না। যতক্ষণ না আপনি স্বীকার করবেন কোনো তথাকথিত ইসলামী দলের নাম। হয় আপনাকে বলতে হবে আমি জামায়াতে ইসলামী, নয় নিজামে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট (তার চার শরিক দল মানে, ঐক্য +ঐক্য +ঐক্য +ঐক্য =ঐক্যজোট) নয়ত আহলে হাদীসদের ১৩ দলের কোনো একটি। অথবা তথাকথিত সুন্নি ইত্যাদি।

তাদের মতাদর্শ দেখলে মনে হয়, কবরে গিয়ে তিনটি প্রশ্নের দ্বিতীয় প্রশ্ন অর্থাৎ ما دينك ‘তোমার দ্বীনের নাম কি?’ এর উত্তরে ইসলাম (মায়িদা ১৯) না বলে কথিত যে কোন একটা দলের নাম উচ্চারণ না করলে শাস্তি থেকে কেউ রেহাই পাবেন না!

এদের অবস্থা দেখে মনে পড়ে যায় দেশের সনামধণ্য একজন মুফাসসিরের কথা। “ইসলাম আমাদের কী দিল ভাই। আমি আপনাকে কীভাবে বুঝাই”। দলের নামে দলান্দ্বদের অবস্থা এমন হয়েছে যে দল কী, দ্বীন কী— তাও বুঝার অনুভূতি হারিয়ে গেছে।

দল করাকে কিছু নেতারা এমন ভাবে সাধারণ মানুষের মন মগজে ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, ইসলামের নামে দল করা যেন ফরজ কাজ। যেমন উপমহাদেশের একজন ইসলামী দলের লিডারের বক্তব্য পড়লাম। তিনি বলেছেন, ‘উপমহাদেশের যতগুলো ইসলামী দল আছে তার যেকোনো একটি অথবা এরমধ্যে যেটি আপনি উত্তম মনে করেন সেটি করুন। যদি কোনো দল সঠিক মনে না হয় তাহলে আপনি নিজেই একটা সঠিক দল সৃষ্টি করুন।’

সম্ভবত এজন্যই এই উপমহাদেশে এতগুলো ইসলামী দল। আর এক দল আরেক দলকে কাফের, মুশরিক, মুনাফিক, মুরতাদ, বিদতার কোনো কিছু বলতে বাদ রাখছে না। অথচ ইসলামে এ ধরনের দলাদলি, হানাহানি কঠিনভাবে নিষিদ্ধ। (সূত্র : রুম ৩০-৩৩)

আরও অনেক আয়াত হাদীসে বিদ্যমান। এমনকি এক আয়াতে দল করাকে শিরক বলা হয়েছে।

যেমন : ولا تكونوا من المشركين من الذين فرقوا دينهم وكانوا شيعا
অর্থ : এবং হইওনা মুশরিকদের, যাহারা নিজেদের দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করিয়াছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হইয়াছে।(রুম : ৩১)

উক্ত আয়াতগুলো এসব দলপ্রিয় লোকদের নজরেও পড়ে না, মগজেও ঢুকে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এরাই আবার দ্বীন কায়েমের বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে দলের পক্ষে দলীল দিতে গিয়ে কুরআনের অপব্যাখ্যা করতেও দ্বিধা করছে না!

আমরা ঐ সকল দলীয় ভাই বোনকে বলছি, আগে আল কুরআন কোনো মুখলিস আলেম থেকে ভালো করে শিখুন অতপর নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করুন। ভাবাবেগে দলীয় অনুবাদ পড়ে ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে আলেমদের শিক্ষা দিতে আসা ধৃষ্টতা বৈ কী!

লেখক : মুরাদ বিন আমজাদ, চেয়ারম্যান বাংলাদেশ মুসলিম উম্মা ফাউন্ডেশন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button