ধর্ম ও জীবন

বিদআত ও তার ভয়াবহ পরিণতি

ঝিনাইদহের চোখঃ

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পৃথিবীর সকলের জন্য রহমতস্বরূপ করে প্রেরণ করেছেন, যাতে করে তিনি মানুষদের অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসেন,আর তার পথ নির্দিশিকাস্বরূপ দিয়েছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআন। তার সঙ্গে দিয়েছেন স্বয়ং তাঁর কথা, কাজ ও মনসম্মতি যা আমরা হাদীস বলে অবহিত করি।

তার দলিল হচ্ছে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজের ভাষন। তিনি তার ভাষণে পৃথিবীর সকল মানুষদের সম্বোধন করে বলেছেন, “আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি আর তা হল কোরআন এবং সুন্নাহ। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা এই দুটো আঁকড়ে ধরে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত পথভ্রষ্ট হবে না।”

রাসূলের উক্ত বাণীর মাধ্যমে প্রমাণিত হচ্ছে মানুষের জীবন পরিচালিত হবে কোরআন এবং সুন্নাহ অনুযায়ী, আর বিদআত হল সম্পূর্ণই এর বিপরীত। অর্থাৎ যা সওয়াবের আশায় করা হয়ে থাকে অথচ তাতে রাসূলের কোনো নির্দেশ পাওয়া যায় না এর নামই বিদআত।

বিদআতি আমল ও তার গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ.) থেকে বর্ণিত, “যে ব্যাক্তি আমার এই দ্বীনের মাঝে কোনো নতুন বিষয় উদ্ভাবন করল যা এর মাঝে নেই তা প্রত্যাক্ষ্যাত।” (বুখারী- ২৬৯৭, মুসলিম- ৪৫৮৯)

অতএব আমরা এর থেকে বুঝতে পারি বিদআত হল রাসূলের নির্দেশের বাহিরের কোনো আমল যা সওয়াবের উদ্দেশ্যে করা হয়। ইসলামী শরিয়তে বিদআতের কোনো প্রকার স্থান নেই যেমনটা আমরা বিভিন্ন বইয়ে পেয়ে থাকি যে বিদআত দুই প্রকার- ১.বিদআতে হাসানাহ ২.বিদআতে সায়্যিয়াহ। এবং এতে হকুম লাগানো হয়ে থাকে যে হাসানাহ করা যাবে, সায়্যিয়াহ করা যাবে না। এই সমস্ত প্রকার সম্পূর্ণই মানুষদের বানানো।

মহাগ্রন্থ আল কোরআনের দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায় এগুলো কিছু সুবিধাবাদী লোক ও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরাই প্রকারভেদ করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামি ন বলেন, “আমি কিতাবে কোনো কিছুই লিপিবদ্ব করতে ত্রুটি করিনি।” (সূরা আনয়াম- ৩৮)

অন্য এক স্থানে আল্লাহ্‌ বলেন, “আর যদি কোনো বিষয়ে তোমাদের মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয় তাহলে তা আল্লাহ এবং রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও।” (সূরা নিসা- ৫৯)

এরপরেও যদি কেউ মনে করে শরীয়তে নতুন কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাহলে বুঝতে হবে সে ভ্রষ্ট। সাহাবী আবু যার (রাঃ.) বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের এমন অবস্থায় ছেড়ে গেছেন যে, আকাশে উড়ন্ত পাখির ইলমও আমাদের দিয়ে গেছেন।” (মুসনাদে আহমাদ- ২১৩৬১)

বিদআতি আমলের পরিণামের বিষয়ে হজরতে জাবির (রাঃ.), রাসূল (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ (সা.)এর পথ, আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল দ্বীনের মাঝে নতুন কোনো কিছু সৃষ্টি করা অর্থাৎ বিদআত। আর এই ধরনের সকল বিদআতই গুমরাহী, আর প্রত্যেক গুমরাহীই জাহান্নামী। (সহী মুসলিম- ৮৬৭, ইবনু মাজাহ- ৪৫)

উক্ত হাদীসে কয়েকটি বিষয়ে প্রমাণ বহন করে তার ভেতরে উল্লেখযোগ্য দুটি হল- ১. বিদআতের কোনো প্রকার হতে পারে না সকল প্রকার বিদআতই গুমরাহী এবং ২. প্রত্যেক বিদয়াতির শেষ ফলাফল জাহান্নাম।

বিদআতের সবচেয়ে ক্ষতিকর যে পরিণাম সে বিষয়ে হাসসান ইবনু আত্বিয়্যাহ (রহঃ.) বলেন, “কোনো জাতি যখনই দ্বীনের ভেতর কোনো বিদআত সৃষ্টি করে তখনই আল্লাহ তা’আলা তাদের থেকে সে পরিমাণ সুন্নত উঠিয়ে নেন, কিয়ামত পর্যন্ত সে সুন্নত আর ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।” (সহীহ দারেমী- ৯৮)

রাসুল (সা.) এর মৃত্যুর পর থেকে এই পর্যন্ত ইসলাম বিধ্বংসী বিদয়াতের কারণে কত সুন্নতের বিলুপ্তি ঘটেছে একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন।

তাই বিদআত থেকে আমাদের সকলেরই সতর্ক হতে হবে এবং আমাদের অন্য সকল মুসলিম ভাইদেরও সতর্ক করতে হবে।

অল্প আমলেই যথেষ্ট যদি সেটা সঠিক হয়, তাই আমরা অল্প আমল হোক কিন্তু সর্বদা সঠিকটাই করব, আল্লাহ আমাদের সকলকে বিদআত থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখক : রাসেল আহমাদ বিন জাকির হুসাইন (দাওরা হাদীস, আল-জামিয়া আস-সালাফিয়্যাহ, রাজশাহী)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button