ধর্ম ও জীবন

দুনিয়ার যে সতর্কতায় পরকাল হবে নিরাপদ

ঝিনাইদহের চোখঃ

দুনিয়া মানুষের কর্মক্ষেত্র। দুনিয়ার এ জীবনে যারা জবাবদিহিতামূলক কর্মকাণ্ডে অতিবাহিত করবে তাদের দুনিয়া ও পরকাল উভয়টাই নিরাপদ।

আল্লাহ তাআলা মানব জাতিকে যত নেয়ামত দান করেছেন তন্মধ্যে জবাবদিহিতার নেয়ামত অনেক বড়। সে আলোকে প্রিয়নবির একটি হাদিসের ৫টি নসিহত অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান।

যারা প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিসে ওপর জবাবদিহিতর নিয়তে আমল করতে দুনিয়া সতর্কতা অবলম্বন করবে, তাদের দুনিয়া যেমন হবে নিরাপদ আর পরকালে তারাই লাভ করবে চূড়ান্ত নিরাপত্তা ও মর্যাদা। হাদিসে এসেছে-

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘(কেয়ামতের দিন কোনো) আদম সন্তানের পা (নিজ নিজ স্থান থেকে) একটুও নড়াতে পারবে না যতক্ষণ না পাঁচটি ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে-
> তার জীবনকাল কিভাবে অতিবাহিত করেছে।
> যৌবনের সময় নিজেকে কি কাজে নিয়োজিত রেখেছে।
> অর্জিত ধন-সম্পদ কোথায় থেকে এসেছে। এবং
> তা কোন কাজে ব্যয় করেছে।
> যে জ্ঞানার্জন করেছে, সে অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (তিরমিজি)

উল্লেখিত হাদিসের ৫টি বিষয়ের গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য হলো-

– জীবনকাল
মানুষের জীবন মহান আল্লাহর তাআলার দান। আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর হুকুম পালনের জন্যই এ জীবন দান করেছেন। সে কারণেই মানুষের উচিত রঙ-তামাশায় জীবনকাল অতিবাহিত না করে আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা।

– যৌবনকাল
দীর্ঘ জীবনে মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো যৌবনকাল। যৌবনের তাড়নায় মানুষ যা ইচ্ছা তাই করার কমবেশি ক্ষমতা রাখে। আর এ কারণে যৌবনের ইবাদত ও হুকুম পালন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দনীয়

যারা বুদ্ধিমান তারা যৌবনে আল্লাহর নির্দেশ পালন করে। যৌবনে আল্লাহ হুকুম পালনকারী যুবক বার্ধক্যে আল্লাহর হুকুম পালনে অক্ষম হয়ে পড়লেও আল্লাহ তাআলা যৌবনের ইবাদত তথা হুকুম পালনের মতো প্রতিদান দিয়ে দেবেন।

আর এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বান্দার যৌবনের কর্মকাণ্ডের হিসাব গ্রহণ করবেন। সুতরাং বান্দার উচিত যৌবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়কে আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করা।

– আয়ের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন
আল্লাহ তাআলা মানুষকে হালাল পথে উপার্জনের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যায় পন্থায় সম্পদ অর্জনকে হারাম করেছেন। এ নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও মানুষ অন্যায় পথে সম্পদ আহরণ করে থাকে। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে সম্পদের আয়ের উৎসের হিসাব গ্রহণ করবেন।

কেননা মানুষ লোভের বশবতী হয়ে হালালের বিবেচনা না করেই হারাম উপায়ে অর্থ উপার্জন করতে থাকে। সুতরাং যাদের মাঝে হালাল-হারামের এ জবাবদিহিতা কাজ করবে, তারা নিঃসন্দেহে সফলতা লাভ করবে। আর এমন কোনো ব্যক্তি নেই যাকে বিচার ফয়সালার দিন আয়ের উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে না।

– ব্যয়ের খাত
মানুষের সম্পদও মহান আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। মানুষ তার এ নেয়ামত সম্পদ কোন পথে খরচ করেছে সে হিসাবও গ্রহণ করবেন স্বয়ং আল্লাহ। কেননা সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা।
সুতরাং আল্লাহ যাকে সম্পদ দান করেছেন, তাকে এ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের নেয়ামতও দান করবেন। যারা এর সুষ্ঠু ব্যবহার না করে অন্যায় পথে খরচ করবে তাদেরকে আল্লাহ কাঠগড়ায় দাড়াতে হবে। কোনো বনি আদম সম্পদের হিসাব দেয়া ছাড়া এক কদমও যেতে পারবে না।

– জ্ঞানানুযায়ী আমল
জ্ঞানার্জন করা ফরজ ইবাদত। জ্ঞানার্জন করার পর সে অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাও ফরজ। যারা সত্যের জ্ঞান অর্জন করা সত্ত্বেও সঠিক পথে চলবে না তারা জালেম বা অত্যাচারী। আর এ অত্যাচারী ব্যক্তিকে তার আমলের হিসাব যথাযথভাবে দিতে হবে।

সুতরাং প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের উচিত উপরোল্লেখিত হাদিস অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করা। যেহেতু হিসাব নিকাশের দিন কাউকেও এ পাঁচটি বিষয়ের হিসাবের ব্যাপারে ছাড় দেয়া হবে বলে বিশ্বনবি ঘোষণা দিয়েছেন। সেহেতু প্রত্যেকের উচিত উল্লেখিত বিষয়ে জবাবদিহিতার মানসিকতায় নিজেদের তৈরি করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের আলোকে এ পাঁচটি বিষয়ের প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করে জবাবদিহিতার মানসিকতায় জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button