ধর্ম ও জীবন

স্ত্রী-সন্তান ও সম্পদ কী মানুষের প্রকৃত বন্ধু?

ঝিনাইদহের চোখঃ

স্ত্রী সন্তান ও সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ স্বভাবগত। অনেক মানুষ এমন আছেন যে, যারা স্ত্রী-সন্তান ও সম্পদের মোহে মগ্ন হয়ে আপন স্রষ্ঠা মহান আল্লাহকে ভুলে থাকে। অমান্য করে তাঁর বিধান।

দুনিয়ার এ ক্ষনস্থায়ী দিনগুলোকেই জীবনের রঙিন সময় ভাবতে থাকে। আর এভাবেই মানুষ মৃত্যুর মুখোমুখি হয়। সে সময় মানুষ আর পেছনে ফিরে যাওয়ারও সুযোগ পায় না। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন-

‘আর অবশ্যই তোমরা (দুনিয়াতে) একা এসেছে, যেভাবে প্রথমে তোমাদেরকে আমি সৃষ্টি করেছিলাম এবং দুনিয়াতে যা কিছু দান করেছিলাম, তার সবই তোমরা পেছনে ফেলে এসেছ।’ (সুরা আনআম : আয়াত ৯৪)

মানুষ একান্ত আপন সঙ্গী হিসেবে স্ত্রী সন্তান ও সম্পদকে ভাবতে থাকে। আর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তার কাছে অনুভূত হতে থাকে যে, না এসব মানুষের প্রকৃত সঙ্গী নয়। তাহলে মানুষের প্রকৃত সঙ্গী কে? হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের দুনিয়া ও পরকালের সঙ্গীদের বর্ণনা দিয়েছেন-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, এ দুনিয়ায় মানুষের সঙ্গী ৩টি। এ ৩টি সঙ্গীর মধ্যে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে একটি বিদায় গ্রহণ করে। অপর সঙ্গী কবর পর্যন্ত গমন করে। আর তৃতীয়টি তার চির সঙ্গী হয়।

সাহাবায়ে কেরাম প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সঙ্গীদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি মানুষের ৩ সঙ্গীর ব্যাখ্যায় বলেন-
> প্রথম সঙ্গী : সম্পদ

দুনিয়ার প্রাচুর্য তথা অর্থ-সম্পদ। যা মানুষের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার রেখে যাওয়া সন্তান-আত্মীয় তথা ওয়ারিশদের হয়ে যায়। তার কোনো মালিকানা থাকে না।
> দ্বিতীয় সঙ্গী : আত্মীয়-স্বজন

স্ত্রী, সন্তানসহ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধব। যারা জানাযার পর দাফন শেষ করতে কবর পর্যন্ত মৃতব্যক্তির সঙ্গে থাকে। এসব আত্মীয়-স্বজন দাফন শেষে করে যার যার বাড়িতে ফিরে যায়।
> তৃতীয় সঙ্গী : মানুষের আমল

জীবনে বেঁচে থাকার সময় মানুষ যেসব কাজ করে থাকে, সেসব কাজ মানুষের চিরস্থায়ী সঙ্গী হয়। চাই তা ভালো কিংবা মন্দ হোক।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বর্ণনা থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, স্ত্রী-সন্তান, সম্পদ মানুষের প্রকৃত বন্ধু বা সঙ্গী নন, বরং মানুষের প্রকৃত বন্ধু হলো তার সব ভালো কাজ।

স্ত্রী-সন্তান ও সম্পদ যত আকর্ষণীয়ই হোক না কেন, মানুষ যদি তাদেরকে ভালোভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হয় তবে এসব স্ত্রী-সন্তান এবং সম্পদ মৃত্যুর পর কোনো কাজে আসবে না।

প্রতিটি মানুষকেই এ ক্ষনস্থায়ী জীবন থেকে নিতে হবে। তাই এসব সম্পদ তখনই মানুষের চিরস্থায়ী সঙ্গীতে রূপান্তরিত হবে, যখন সব কিছু সঠিকভাবে পরিচালিত হবে।

সুতরাং দুনিয়ার প্রতিটি মানুষকেই স্ত্রী-সন্তান, সম্পদসহ দুনিয়ার সব প্রাচুর্যকে পরকালের জীবনের সঙ্গী হিসেবে পেতে হলে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক দুনিয়ার জীবন পরিচালনা করতে হবে।

দুনিয়াতে পরকালের কথা ভুলে গেলে চলবে না। পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের কথা স্মরণ রেখেই দুনিয়ার জীবনকে অতিবাহিত করতে হবে। এ কথাটি কোনোভাবেই ভুলে গেলে চলবে না-
হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, ‘সব মানুষ ঘুমন্ত, যখন তাদের মৃত্যু হবে তখন তারা জেগে ওঠবে।’

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঘুমন্ত অবস্থা থেকে জেগে ওঠার তাওফিক দান করুন। দুনিয়ার জীবনকে কাজে লাগিয়ে পরকালেও দুনিয়ার স্ত্রী-সন্তান-সম্পদকে ভালো কাজের মতো নিজেদের উত্তম সঙ্গী হিসেবে পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button