কালীগঞ্জটপ লিড

অপেক্ষার প্রহর কবে আসবে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি

ঝিনাইদহের চোখঃ

এবছর আর বাঁশের তৈরি শহীদ মিনারে নয়, ইট-সিমেন্টে নির্মিত শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে নিয়ামতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। এখন অপেক্ষার প্রহর গুনছে-কবে আসবে সেই মহান ২১ ফেব্রুয়ারি। শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণে যিনি হাত বাড়িয়েছেন তিনি হলেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবুল কাশেম। গত কয়েকদিন আগেই শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রতিবছর বাঁশের তৈরি শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেও প্রকৃত সুখ পাওয়া যেত না। এবার সত্যিকারের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারবো। এনিয়ে আমাদের মধ্যে অন্যরকম এক অনুভূতি কাজ করছে বলে জানালেন বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আবুল কাশেম ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরজাহান।

শহীদ মিনার তৈরি করায় পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাজেরা, মুন্নি, রাফিদুল ও ইউসুফ খুব খুশি। তারা বলে, আমরা এখন ২১ ফেব্রুয়ারির অপেক্ষায় আছি। ওইদিন স্যার ও ম্যাডামদের সাথে আমরা সবাই শহীদ মিনারে ফুল দেব।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর গ্রামের নিরক্ষর আবুল কাশেমের (৪৮) ভাষা শহীদদের প্রতি রয়েছে অকৃতিম ভালোবাসা। খুব অল্প বয়স থেকেই ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি রাতেই কালীগঞ্জ শহরে যেতেন। ১৯৮০ সাল থেকে প্রতিবছর কালীগঞ্জ শহরে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতেন। সেই সময় থেকেই নিজ গ্রামের স্কুলে একটি শহীদ মিনার তৈরির স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

আবুল কাশেম বলেন, ‘প্রায় ১৮ বছর ধরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদে আছি। এবার দিয়ে পরপর ২ বার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। ২০০৯ সাল থেকে বিদ্যালয়ে বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে তাতে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছি। নিজের ইচ্ছা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে বাস্তবায়ন করতে এবছর শহীদ মিনার নির্মাণ কাজ শুরু করি।

শহীদ মিনারের কাজ শেষ করতে প্রায় ৩৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে জমানো ২৬ হাজার টাকা ও বিভিন্ন দোকান থেকে বাকিতে সিমেন্ট, বালি নিয়ে শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করেছি। শহীদ মিনারটি তৈরি করতে পেরে বেশ ভালো লাগছে।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরজাহান জানান, ‘শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ার মধ্যদিয়ে আমাদের অনেকদিনের আশা পুরণ হতে চলেছে। এখন অপেক্ষা ২১ ফেব্রুয়ারির। তিনি বলেন আমরা এরআগে বিদ্যালয় পরিচলনা পর্ষদের সহযোগিতায় বাঁশ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতাম।

এবার সভাপতির উদ্যোগে শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ায় তিনি সভাপতি আবুল কাশেমকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান শিক্ষক বলেন, আবুল কশেম একজন প্রকৃত শিক্ষানুরাগী মানুষ। ২০১৬ সালে বিদ্যালয় ভবন ব্যবহারের অনুপোযোগি হয়ে পড়লে তিনি এলাকা থেকে বাঁশ-খুঁটি সংগ্রহ করেন এবং শিক্ষা অফিস ও বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজিম আনারের কাছ থেকে আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে টিনশেডের ঘর তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পড়ার পরিবেশ সৃষ্টি করেন। গত বছরের শেষের দিকে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন তৈরি হওয়ায় বর্তমানে সেখানে পাঠদান করা হচ্ছে।

উপজেলার নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ রনি লস্কর বলেন, ‘আবুল কাশেম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন নিবেদিত প্রাণ। তার মতো একজন শিক্ষানুরাগী মানুষ বর্তমান সময়ে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তার এই মহতী উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button