ধর্ম ও জীবন

অধীনস্থদের প্রতি মালিকদের আচরণ যেমন হবে

ঝিনাইদহের চোখঃ

ইসলামি জীবন বিধানে মর্যাদা নিরূপণ করা হয় তাকওয়া ভিত্তিতে। অর্থাৎ যে কোনো কাজের ব্যাপারে কে কতবেশি আল্লাহকে ভয় করে, সে হিসেবে মানুষের মর্যাদাও নির্ণয় করা হয়। আর এ কারণেই দ্বীনদার মুসলিম উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা মালিকগণ তাদের অধীনস্থদের সঙ্গে কোনো ধরণের অন্যায় আচরণ বা বে-ইনসাফি কাজ করতে পারে না।

বর্তমান সময়ে ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন নেই। কিন্তু এখনো মানুষ অন্যের অধীনে জীবিকা অর্জনের মাধ্যম হিসেবে কাজ-কর্মে নিয়োজিত হয়। আর এ সব অধীনস্থদের সঙ্গে অনেক মালিক বা উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিভিন্ন কারণে-অকারণে জুলুম অত্যাচার করে থাকে। ইসলাম কোনোভাবেই অধীনস্থদের প্রতি জুলুম-অত্যাচার সমর্থন করে না।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস থেকে জানায় যে, অধীনস্থদের প্রতি কেমন আচরণ করা উচিত। প্রিয়নবি অধীনস্থদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছেন। কেমন আচরণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য প্রিয়নবির আদর্শ। হাদিসে এসেছে-

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তারা (অধীনস্থরা) তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন। কাজেই আল্লাহ যার ভাইকে তার অধীনস্থ করে দিয়েছে, তার (মালিক/দায়িত্বশীল কর্মকর্তার) উচিত, তাকে (অধীনস্থকে) তা-ই খাওয়ানো যা সে নিজে খায় এবং তাকে (অধীনস্থকে) তা-ই পরিধান করানো যা সে নিজে পরিধান করে। আর তাকে (অধীনস্থকে) এমন কাজের ভার দেবে না, যা তার সাধ্যের বাইরে। যদি কখনো তার ওপর অধিক কাজের দায়িত্ব চাপানো হয় তবে যেন (দায়িত্বশীল ব্যক্তি) তাকে সাহায্য করে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ দিনের খাদেম ছিলেন হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আচরণ কেমন ছিল, তা বর্ণনা করে তিনি বলেন-

‘আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীর্ঘ ১০ বছর খেদমত করেছি। তিনি আমার সম্পর্কে কখনো ‘উহ’ শব্দটি বলেননি এবং কোনো দিন বলেননি যে, এটা করো নি কেন? ওটা করো নি কেন? বরং আমার বহু কাজ তিনি নিজে করে দিতেন।’ (মিশকাত)

অধীনস্থ ব্যক্তির প্রতি দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা মালিকের আচরণ কেমন হবে তা ইসলামি সম্রাজের খলিফা আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর জেরুজালেম ভ্রমণে ভৃত্যের সঙ্গে করা আচরণই তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

সুতরাং কোনো অধীনস্থের সঙ্গে অন্যায় বা জুলুম করা মালিক বা দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উচিত নয়। বাসাবাড়ির দাড়োয়ান, কাজের বুয়া থেকে শুরু করে সমাজের সর্বোচ্চ স্তরের প্রত্যেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির উচিত অধীনস্থদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও দয়া দেখানো। আর এতেই অর্জিত হবে তাকওয়া।

যেহেতু ইসলামি জীবন ব্যবস্থায় তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় অর্জনের মাধ্যমেই মানুষের মর্যাদা বিবেচনা করা হয় সেহেতু আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার সব দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বা মালিকদেরকে অধীনস্থদের সঙ্গে উত্তম আচরণ ও ক্ষমার মানসিকতা পোষণ করে তাকওয়াবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button