ধর্ম ও জীবন

অধিক রাগে কী করবেন?

ঝিনাইদহের চোখঃ

প্রবাদ আছে, ‘রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন’-এতো দুনিয়ার কথা। অঞ্চলভেদে রাগকে ক্রোধ বা গোস্বা হিসেবে জেনে থাকে। মানুষকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য রাগ বা ক্রোধ হচ্ছে শয়তানের জঘন্যতম অস্ত্র। রাগের বশবর্তী হয়ে মানুষ বিপদ বা ক্ষতির দিকে ধাবিত হয়।

সুস্বাস্থ ও শান্তিময় জীবনের জন্য রাগ বা ক্রোধ দমন করা জরুরি। রাগের ফলেই মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি ও বিবেক-বিবেচনা লোপ পায়। সুতরাং মুমিন বান্দার অন্যতম গুণ হলো রাগ বা ক্রোধ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা। রাগ বা ক্রোধ দমনে কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক যেসব কাজ করা জরুরি-

– অন্যায় কাজ ছেড়ে দেয়া

এ কারণেই আল্লাহ তাআলা মানুষকে রাগ দমনে সতর্কতা অবলম্বনের উপদেশ প্রদান করেছেন। রাগ দমনকে মুত্তাকিদের গুণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘এবং যারা অন্যায় ও পাপকর্ম থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখে এবং যখন তারা রাগান্বিত হয় তখন তারা আত্মসংবরণ (ক্ষমা) করে।’ (সুরা আশ-শুরা : আয়াত ৩৭)

– তাকওয়া ও পরহেজগারি অবলম্বন করা

সুতরাং প্রবল রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার অন্যতম উপায় হলো তাকওয়া ও পরহেজগারিতা অবলম্বন করা। কেননা আল্লাহ তাআলাই কুরআনে পাকে তাকওয়া ও পরহেজগারিকে রাগ দমনের অন্যতম উপায় হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

‘আর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে মাগফেরাত ও জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও এবং সেই জান্নাতের দিকে অগ্রসর হও, যার পিরিধি আসমানসমূহ ও জমিনে বিস্তৃত। যা মুত্তাকিদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং রাগ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে দেয়। আর আল্লাহ নেক বান্দাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩৩-১৩৪)

– আল্লাহর জিকির বা স্মরণ বাড়িয়ে দেয়া

অভিশপ্ত শয়তানই মানুষের অন্তরে ক্রোধের আগুন জালিয়ে দেয়। কাজেই ক্রোধের আগুন থেকে বাঁচার অন্যতম কার্যকর পন্থা হচ্ছে আল্লাহর জিকির করা। যাতে শয়তানের প্ররোচনা হতে নিরাপদ থাকা যায়। তাই বেশি বেশি ইসতেগফার করা-
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়িল আজিম।’

– আল্লাহকে বেশি বেশি সেজদা করা

রাগ ও ক্রোধ থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম উপায় হচ্ছে আল্লাহকে বেশি বেশি সেজদা করা। কেননা সেজদা ক্রোধের আগুনকে থামিয়ে দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘রাগ বা ক্রোধ হচ্ছে অগ্নি স্ফুলিঙ্গের ন্যায়, যা মানুষের মন ও মানসিকতার ওপর (নেতিবাচক) প্রভাব ফেলে। ফলে ক্রোধান্বিত ব্যক্তির চোখ রক্ত বর্ণ হয়ে যায়। কাজেই যদি কারও মধ্যে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে তার উচিত সেজদাবনত হওয়া। নিঃসন্দেহে যে ব্যক্তি ক্রোধান্বিত অবস্থায় সেজদাবনত হবে, আল্লাহ তাকে শয়তানের প্রজ্বলিত আগুন থেকে রক্ষা করবেন আর তার অন্তরে প্রশান্তির সৃষ্টি হবে।’

– ওজু করা

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি দ্বারা ঠান্ডা করা হয়। তাই যদি কারো রাগ বা ক্রোধ হয় তবে তার উচিত ওজু করে নেয়া।’ (আবু দাউদ ও মিশকাত)

– বেশি বেশি দরূদ পড়া

রাগের সময় অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করা। রাগ বা ক্রোধের সময় বেশি বেশি দরূদ পাঠ করলে মানুষের রাগ বা ক্রোধ কমে যায় এবং তাতে মানুষের আত্মা প্রশান্তি লাভ করে।

– রাগের সময় বসে যাওয়া

হজরত আবু যর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় রাগ বা ক্রোধ আসে তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না থামে, তবে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত)

মনে রাখতে হবে

অকারণে রাগ মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয়। প্রিয়নবি বলেন, রাগ বা ক্রোধ মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয় যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে দেয়।’ (বায়হাকি, মিশকাত)
আবার সাধারণ সময়ে ক্ষমা করা স্বাভাবিক। কিন্তু রাগের সময় কাউকে ক্ষমা করা অনেক বড় বীরত্বের কাজ। তাই তো মুমিন ব্যক্তি রাগের সময়েও নিজের রাগকে সংবরণ করে অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে। হাদিসে এসেছে-
‘ওই ব্যক্তি বীর পুরুষ নয়, যে অন্যকে ধরাশায়ী করে; বরং সেই ব্যক্তিই প্রকৃত বীর, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’ (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাগ দমনে কুরআন সুন্নাহর দিক-নির্দেশনার প্রতি মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। রাগের কারণে দুনিয়া ও পরকালের ক্ষতি থেকে নিজেদের হেফাজত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button