ঝিনাইদহের মিরাজের মায়ের মৃত্যু ও এসএসসি পরীক্ষা
ঝিনাইদহের চোখঃ
আগুনে দগ্ধ হয়ে ঢাকায় চিকিৎসাধীন মা তানিয়া বেগম (৩৮) ভোরে মারা গেছেন। লাশবাহী গাড়িতে মায়ের লাশ আসছে। এটা জেনেও সকালেই কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থী মিরাজ হোসেন। এমন হৃদয় বিদারক শোকের মুখোমুখি শিক্ষার্থী মিরাজ হোসেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের দুলালমুন্দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দুলালমুন্দিয়া গ্রামের মালেশিয়া প্রবাসী মিলন হোসেনের ছেলে।
প্রতিবেশী রতœা খাতুন জানান, তানিয়া বেগম তার সম্পর্কে চাচী হন। তানিয়া বেগম এক অসুস্থ চিকিৎসাধীন আত্বীয়কে মুরগীর মাংশ নিয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারী খুব সকালে হাসপাতালে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন। এজন্য গত ১২ ফেব্রুয়ারী রাতেই মুরগী জবাই করে বাড়ির বাইরে এসে জবাইকৃত মুরগী আগুন দিয়ে ঝলসাচ্ছিলেন। এমন অবস্থায় অসাবধানতাবশত তার পরনের শাড়ীতে আগুন লেগে যায়।
এরপর সে মাটিতে গড়াগড়ি না দিয়ে আতঙ্কে এদিক ওদিক দৌড়াতে থাকে। একপর্যায়ে আশপাশের লোকজন দৌড়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রন করতে পারলেও তার সারা শরীর পুড়ে ঝলসে যায়। এমন অবস্থায় প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেেল ক্রমেই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। এরপর জরুরী ভিত্তিতে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রেপার্ট করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার ভোর সাড়ে ৩ টায় তিনি মারা যান।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ মাহমুদ জানান, সারাজীবন অভাবের সাথে পাল্লা দিয়ে সংসার করেছেন গ্রামের গৃহিনী তানিয়া বেগম। এখন তার স্বামী বিদেশে গিয়ে সংসার থেকে অভাব তাড়াতে পেরেছেন।
কিন্তু আজ সুখের দিনে তার কোন কিছুই ভোগ করতে পারলেন না। বড় ছেলেটি বেশ মেধাবী। সে মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে কাঁদতে কাঁদতে পরীক্ষার হলে গিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে। এছাড়াও সাব্বির হোসেন নামের ৩য় শ্রেনীতে পড়-য়া আরেক সন্তান রয়েছে মৃত তানিয়া বেগমের। এখন দুই ভাইয়ের আগলিয়ে রাখার মা জননী পরপারে পাড়ি দিয়েছেন। আর বাবা বিদেশে। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।