মহেশপুর

ঝিনাইদহের প্রগতিবাদী এক যোদ্ধার বিদায়

ঝিনাইদহের চোখঃ

দেশের প্রগতিশীল রাজনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সমাজ আন্দোলনে নিবেদিত সম্পাদক ও লেখক মহসিন শস্ত্রপাণি আর নেই। গত শনিবার রাত পৌনে ১২টার দিকে যশোরের কুইন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ^াস ত্যাগ করেন ( ইন্নালিল্লাহি… রাজিউন)। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। কবিতা লিখেছেন, কিন্তু

কাব্যগ্রন্থ করেননি। জাগরণের গান লিখেছেন অসংখ্য। ষাটের দশকে মার্কসবাদী আদর্শে গড়ে ওঠা শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি সংগঠন ‘ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী’র অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ছিলেন ‘উন্মেষ সাহিত্য সংস্কৃতি সংসদ’-এর কর্ণধার। প্রগতিশীল রাজনীতিতে বিশ^াসী লেখক-কবিদের প্ল্যাটফর্ম ছিল এই সংগঠন। গোপন কমিউনিস্ট আন্দোলনে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ১৯৭৯-৯০ সাল পর্যন্ত মাসিক উন্মেষ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন মহসিন শস্ত্রপাণি। এ ছাড়াও কিছুকাল তিনি সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘নয়া দুনিয়া’র সম্পাদক-প্রকাশক ছিলেন।

মহসিন শস্ত্রপাণির বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। তিনি স্ত্রী রাজিয়া খাতুন, ছেলে শশাঙ্ক সাদি পাভেল এবং দুই কন্যা অনুরত প্রভা দ্যুতি ও সুপ্রভা সেবতীসহ অসংখ্য স্বজন রেখে গেছেন।

তার প্রয়াণের খবর ছড়িয়ে পড়লে বাম রাজনীতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি-গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। দেশের স্বাধীনতাপূর্ব ও পরবর্তী সময়ে তার নানা কর্মকা- নিয়ে ফেইসবুকসহ নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্মৃতিচারণ করতে থাকেন শোকাচ্ছন্ন স্বজন বন্ধু অনুগামীরা। রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা প্রয়াত কমরেডের প্রতি তাদের শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। স্যালুট জানান।

মহসিন শস্ত্রপাণি থাকতেন রাজধানীর গোপীবাগে। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার কাজিরবেড় তার গ্রামের বাড়ি। এক শিক্ষাবৃত্তি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে নিজ গ্রামে গিয়েছিলেন। গত শুক্রবার রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে যশোরের কুইন্স হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শনিবার রাতে ঢাকায় নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্সেও তোলা হয় তাকে। সেখানেই তার মৃত্যু হয়।

আমাদের ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, রবিবার দুপুর ২টায় নিজ গ্রাম কাজিরবেড় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে মহসিন শস্ত্রপাণির জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তার মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

মহসিন শস্ত্রপাণি সাহিত্যিক ছিলেন। আমেরিকা, ভারত, চীন, কোরিয়া, নেপাল, ভুটান ও থাইল্যান্ডসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশই ভ্রমণ করেছেন। লিখেছেন অনেক ভ্রমণকাহিনী। তার চীন ভ্রমণের ওপর ‘দেশের নাম চীন’ শিরোনামের লেখাটি সুনাম কুড়ায়। ১৯৮০ সালে তার একটি গল্পসংকলন প্রকাশিত হয়। নাম ‘জনশ্রুতি’। তার একটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ‘জোছনায় কালো মেঘ’। ‘শেষ যুদ্ধের ডাক’ একটি আলোচিত প্রবন্ধগ্রন্থ। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বিপ্লবী হো চি মিন’, ‘লাল তারার কাহিনী’, ‘আজালিয়া পর্বত’, ‘উত্তর দেশের দৃশ্য’ ইত্যাদি। ২০১৩ সালে তিনি ‘ড. আহমদ শরীফ স্মারক বক্তৃতা’ প্রদান করেন।

জীবনবৃত্তান্ত

মহসিন শস্ত্রপাণির জন্ম ব্রিটিশ ভারতে ১৯৪৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর। বাবা সৈয়দ আবদুল মুত্তালিব ও মা জাহানারা খাতুন। বাবা ছিলেন একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি প্রথম। ১৯৬৩ সাল থেকেই ঢাকায় বসবাস করেন তিনি। জীবনের শুরুর বড় একটি অংশ প্রায় ৩০ বছর একাধারে সাংবাদিকতা ও প্রকাশনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। কাজ করেছেন দৈনিক আজাদ, দৈনিক জনপদ এবং সাপ্তাহিক গণবাংলায়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button