অন্যান্য

ওবায়দুল কাদেরের ওপেন হার্ট সার্জারি আগামী সপ্তাহে

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্ক: ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক করে ‘জীবন শঙ্কায়’ থাকা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকরা। সপ্তাহখানেক পর তার ওপেন হার্ট সার্জারির পরিকল্পনা করছেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা।

মঙ্গলবার মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে ব্রিফ করতে গিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন তারা।

চিকিৎসকরা জানান, সপ্তাহখানেক পর ওবায়দুল কাদেরের ওপেন হার্ট সার্জারি করা হবে। তারা আরও জানান, ওবায়দুল কাদেরের শরীরে ইনফেকশন রয়েছে। এ ছাড়া তার কিডনিতেও সমস্যা রয়েছে। তবে সেগুলো গুরুতর নয়। আগামী দুদিন তার কিডনি ডায়ালাইসিস করা হবে।

মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসক টিমের সদস্য বিএসএমএমইউর নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী আজ সকালে জানান, ওবায়দুল কাদেরের অবস্থা অনেকটাই স্থিতিশীল। সব কিছু ঠিক থাকলে সপ্তাহখানেক পর তার ওপেন হার্ট সার্জারি করা হবে।

এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওবায়দুল কাদেরের এনজিওগ্রাম করা হয়। এতে দেখা যায়, তার হার্টে তিনটি ব্লক।

এনজিওগ্রাম করে দেখা যায়, তার হার্টের প্রধান আর্টারিসহ তিন রক্তনালিতে বড় ধরনের ব্লক রয়েছে। এ ছাড়া আরও কিছু ছোট ছোট ব্লক রয়েছে। তিনটি রক্তনালিতে ব্লকের পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ শতাংশ, ৯৯ শতাংশ ও ৮০ শতাংশ। পরে দ্রুততার সঙ্গে বিকল্প পদ্ধতিতে স্টান্টিং করে (রিং পরিয়ে) একটি ব্লক অপসারণ করা হয়।

এ ছাড়া শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে একটি এক্সটার্নাল পেসমেকারও লাগানো হয়। তার হার্টের তিনটি রক্তনালির মধ্যে একটি আগে একসময় হার্ট অ্যাটাকে ১০০ শতাংশ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বাকি দুটি রক্তনালির মধ্যে একটি ৮০ শতাংশ বন্ধ।

আর এলএডি (লেফট এন্টেরিয়র ডিসেন্ডিং) নামের যে আর্টারি হার্টের দুই-তৃতীয়াংশে রক্ত সরবরাহ করে, তার ৯৯ শতাংশ ছিল বন্ধ।

ওবায়দুল কাদেরের শরীরে কিডনিসহ অন্যান্য সমস্যা থাকায় বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। গত দুদিনে তার অন্যান্য শারীরিক জটিলতা কমে আসায় এবং হৃৎপিণ্ডে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক করতে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের চিকিৎসকরা তার ওপেন হার্ট সার্জারির সিদ্ধান্ত নিলেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা সম্পর্কে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া গণমাধ্যমকে জানান, সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসা শুরু হয়েছে। সোমবার হাসপাতালে পৌঁছানোর পরপরই সেখানকার চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা শুরু করেন। জরুরি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা গেছে, তার শরীরে কিছু সংক্রমণ রয়েছে। পাশাপাশি কিডনির সমস্যা পাওয়া গেছে। তবে ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন নেই।

আগের তুলনায় ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে, এমন তথ্য জানিয়ে বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, তার অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভালো। নতুন করে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী চিকিৎসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন চিকিৎসকরা।

মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল অধ্যাপক ড. ফিলিপ কোহের তত্ত্বাবধানে ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা চলছে। আইসিইউ ৩০০৮ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন ওবায়দুল কাদের।

সেখানে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী ইশরাতুন্নেসা কাদের ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিউরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. আবু নাসের রিজভী।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও ঢাকা দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ দূতাবাস ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার সার্বক্ষণিক তদারকি করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দূতাবাস কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় সাধারণ সম্পাদকের চিকিৎসার বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিচ্ছেন।

সোমবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে। রাত ৮টা দিকে বিমানবন্দরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি ল্যান্ড করার পরই তাকে নেয়া হয় মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।

সিঙ্গাপুরে পৌঁছার পরপরই বিমানবন্দরে ওবায়দুল কাদেরের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এ সময় তার রক্তচাপ ছিল স্বাভাবিক। পাশাপাশি শারীরিক অবস্থাও স্থিতিশীল ছিল বলে সোমবার রাত পৌনে ৯টায় যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তফা জামান।

এর আগে এদিন দুপুরে বিএসএমএমইউর ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে। অর্থাৎ তার শারীরিক ঝুঁকি আগের চেয়ে কম কিন্তু ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না।

এদিকে ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের পথে কাদেরের শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ছিলেন মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, একজন নার্স ও একজন টেকনিশিয়ান। রোববার সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গেই ঢাকায় আসেন তারা।

বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, রাত ৮টা নাগাদ ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সিঙ্গাপুর বিমানবন্দরে পৌঁছে। সেখান থেকে তাকে সরাসরি মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনি হাসপাতালটির ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও প্রিন্সিপাল ড. ফিলিপ কোহর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. আবু নাসার রিজভী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। তার মাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে।

রোববার সকালে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকের পর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদককে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। সিসিইউর ২ নম্বর বেডে লাইফসাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হয় তাকে। পরে সোমবার উপমহাদেশের প্রখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দেবী শেঠির পরামর্শে ওবায়দুল কাদেরকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button