ধর্ম ও জীবন

আল্লাহর ‘রব’ নামের রহস্য

ঝিনাইদহের চোখঃ

আল্লাহর অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে। তার মধ্যে ‘রব’ একটি। কুরআনে, ইবাদাত-বন্দেগি ও দোয়ায় এ ‘রব’ শব্দটির ব্যবহার ব্যাপকভাবে করা হয়েছে। এ শব্দটির অধিক ব্যবহারে মুমিনদের জন্য রয়েছে চিন্তার খোরাক। জাগো নিউজে তার কিছু তুলে ধরা হলো-

আলাসতু বি রাব্বিকুম?
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টির পর তাঁর কুদরতি ডান হাত আদমের পৃষ্ঠদেশে রাখলেন, এর ফলে সব বনি আদম পিপিলীকার ন্যায় তার পৃষ্ঠদেশ থেকে বের হলো। হজরত আদম জিজ্ঞেস করলেন হে আল্লাহ! এরা কারা? আল্লাহ বললেন, এরা হচ্ছে তোমার সন্তান-সন্তুতি। সেখানে আল্লাহ সবাইকে উদ্দেশ্য করে যে কথা জিজ্ঞাসা করলেন, তা কুরআনে এসেছে এভাবে- ‘আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। (সুরা আরাফ : আয়াত ১৭২)

রবের পরিচয়?
রব শব্দে অর্থ প্রতিপালক, লালন-পালনকারীসহ অনেক অর্থ। এক কথায় রব হলেন তিনি, যিনি প্রত্যেককে তার যোগ্যতা ও উপযুক্ততা বিবেচনা করে যখন যা প্রয়োজন তা দিয়ে ধীরে ধীরে লালন-পালন করে পূর্ণতায় পৌঁছান। অর্থাৎ যখন যার যা প্রয়োজন, চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তখন তাকে প্রয়োজন মতো যিনি ঐ চাহিদা মোতাবেক জিনিস দিতে পারেন তিনি হলেন রব।

রব শব্দের ব্যাপক ব্যবহারের কারণ
আল্লাহ তাআলা মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর পূর্বে যে স্বীকৃতি নিয়েছিলেন, আলাসতু বি রাব্বিকুম? আমি কি তোমাদের প্রভূ নই? এ কথা স্মরণ করে দেয়ার জন্যই আল্লাহ তাআলা এ শব্দের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি করেছেন। শুধু তাই নয়, মানুষের সব ধরনের ইবাদাতে এ শব্দের ব্যবহার করেছেন, শুধুমাত্র আল্লাহই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তা স্মরণ রেখে তাঁরই ইবাদাত করার জন্য।

‘রব’ শব্দের ব্যবহার
নামাজে সুরা ফাতিহার প্রথম আয়াতে রব শব্দের ব্যবহার। রুকু সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়্যাল আজিম, রুকু থেকে সোজা হয়ে রাব্বানা লাকাল…, সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়্যাল আলা’য় ‘রব’ শব্দের ব্যবহার।
নামাজ শেষে দোয়া ও কুরআনের আয়াতে রব তথা রাব্বানা শদ্ব দ্বারাই শুরু হয়েছে। রাব্বানা জলামনা…, রাব্বানা আতিনা …, রাব্বানা লা তুযেগ…, রাব্বির হামহুমা… এভাবে অনেক আয়াতে রাব্বানা শব্দটির ব্যবহার এসেছে। তার একমাত্র কারণ হচ্ছে- আল্লাহ যে মানুষের কাছ থেকে রব হওয়ার স্বীকৃতি নিয়েছিলেন। তা স্মরণ করে দেয়া জন্য।

সর্বোপরি ফলাফল গ্রহণেও রব…
কবর আখিরাতের প্রথম মঞ্জিল। দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর মানুষকে কবরে রাখার পরপরই মুনকার-নকিরের তিনটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সব মৃতব্যক্তিকে। সেখানের প্রথম প্রশ্নই হবে- মান রাব্বুকা? তোমার রব কে? যে ‘রব’ শব্দ দিয়ে মানুষের কাছ থেকে আল্লাহ স্বীকৃতি নিয়েছেন। কবরে সর্বপ্রথম সে ‘রব’ কে? তাঁর পরিচয় দিতে হবে। যিনি উত্তর দিতে পারবেন। তিনিই হবেন নাজাতপ্রাপ্ত।

পরিশেষে…
দুনিয়াতে যারা রব শব্দের কথা স্মরণ রেখে আল্লাহর দেখানো পথে-মতে চলেছেন, তাদের জন্য আখিরাত হবে শান্তিময়। তারাই হবে সফলকাম। আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার জিন্দেগিতে তাঁর হুকুম-আহকাম মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আখিরাতের জীবনের সম্বল অর্জন করার তাওফিক দান করুন। কবরে ‘মান রাব্বুকা?’র জবাব দেয়ার মতো আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button