মাঠে-ময়দানে

বাংলাদেশ দলের বাস আর পাঁচ মিনিট আগে মসজিদে পৌঁছালেই সর্বনাশ হতো

ঝিনাইদহের চোখঃ
অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। ক্রাইস্টচার্চে হ্যাগলি ওভাল মাঠের কাছেই যে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন তাঁরা, সেই মসজিদেই সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। একাধিক হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে।

বাংলাদেশ দলের বাস তখন মসজিদের সামনে। ক্রিকেটাররা বাস থেকে নেমে মসজিদে ঢুকবেন, এমন সময় রক্তাক্ত শরীরের একজন মহিলা ভেতর থেকে টলোমলো পায়ে বেরিয়ে এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যান। ক্রিকেটাররা তখনো বুঝতে পারেননি ঘটনা কী। তাঁরা হয়তো মসজিদে ঢুকেই যেতেন, যদি না বাসের পাশের একটা গাড়ি থেকে এক ভদ্রমহিলা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বলতেন, ‘ভেতরে গোলাগুলি হয়েছে। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছে। তোমরা ভেতরে ঢোকো না।’

ক্রিকেটাররা তখন বাসেই অবরুদ্ধ হয়ে আটকা পড়ে থাকেন বেশ কিছুক্ষণ। কারণ পুলিশ ততক্ষণে রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বাসে বসেই তাঁরা দেখতে পান, মসজিদের সামনে অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। অনেকে রক্তাক্ত শরীর নিয়ে বেরিয়ে আসছেন মসজিদ থেকে। যা দেখে আতঙ্কে অস্থির হয়ে পড়েন ক্রিকেটাররা। কারণ বাসে কোনো নিরাপত্তাকর্মী দূরে থাক, স্থানীয় লিয়াজোঁ অফিসারও ছিলেন না।

রাস্তায় তখন অনেক পুলিশ। সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলেছে পুলিশের গাড়ি। অনেকক্ষণ বাসে বসে থাকার পর ক্রিকেটাররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাস থেকে নেমে মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করেন। সবার চোখেমুখে তখন আতঙ্ক। কারণ দূরত্বটা একেবারে কম নয়। সেটি কমাতে রাস্তা ছেড়ে সবাই নেমে পড়েন হ্যাগলি পার্কে। পার্কের মধ্য দিয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে সবাই মাঠে ফেরেন। মাঠে ফিরে সবাই ড্রেসিংরুমে ঢুকে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন। হাঁটতে হাঁটতে ক্রিকেটাররা বলছিলেন, তৃতীয় টেস্টের আগের দিনে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সংবাদ সম্মেলন একটু দেরিতে শেষ না হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত।

বাংলাদেশ দলের মসজিদে ঢোকার কথা ছিল দুপুর দেড়টায়। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে যেতে যেতে ১টা ৪০ বেজে যায়। বাংলাদেশ দলের বাস আর পাঁচ মিনিট আগে মসজিদে পৌঁছে গেলে ক্রিকেটাররা সন্ত্রাসী হামলার সময় মসজিদের ভেতরেই থাকতেন। তাহলে কী হতে পারত, আর যা দেখেছেন-দুটি মিলিয়ে মুশফিকুর রহিম হাঁটতে হাঁটতেই অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন। তামিম ইকবাল বলতে থাকেন, ‘যা দেখেছি, এরপর আমি আর এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। এই টেস্ট খেলার প্রশ্নই আসে না। আমি দেশে ফিরে যাব।’

বাসে ক্রিকেটারদের সঙ্গে ছিলেন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ ও বাংলাদেশ দলের অ্যানালিস্ট শ্রীনিবাসন আইয়ারও। কোচিং স্টাফরা ছিলেন মাঠে। নামাজ শেষে মাঠে ফেরার পর বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে নামার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। ড্রেসিংরুমে ফেরার পর খোঁজ পড়ে বাংলাদেশ দলের দুই ক্রিকেটার লিটন কুমার দাস ও নাঈম হাসানের। তাঁরা দুজন ছিলেন হোটেলে। ফোনে তাঁদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিন্ত হন ম্যানেজার খালেদ মাসুদ।

হ্যাগলি ওভালের ড্রেসিংরুমে ঘণ্টা দুয়েক অবরুদ্ধ থাকার পর বাংলাদেশ দলকে বিশেষ এসকর্টে করে নভোটেল হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পুরো ক্রাইস্টচার্চ শহরই এখন অবরুদ্ধ। বাংলাদেশ দল হ্যাগলি ওভালে ফিরে আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের একাধিক জায়গায় সন্ত্রাসী হামলার খবর আসতে থাকে। বাড়তে থাকে মৃতের সংখ্যাও। আগামীকাল শুরু হওয়ার কথা ছিল যে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট, সেটি বাতিল হয়ে যাওয়া এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button