ধর্ম ও জীবন

বিয়েতে যে কাজ করবেন না

ঝিনাইদহের চোখঃ

সমাজ জীবনের প্রথম ভিত্তি হলো পরিবার। নারী-পুরুষের বৈধ ইজাব (প্রস্তাব) এবং কবুলের (গ্রহণ) মাধ্যমে বিয়ে করেই মানুষ সমাজ জীবনে থিতু হন। এ বিয়ের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয় পরিবার ও সমাজ।

সৃষ্টির শুরু থেকে মহান আল্লাহ যেভাবে পরিবার গঠনের পদ্ধতি চালু করেছেন, সে ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা থেকে তার স্ত্রীকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি তাদের দু’জন থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়েছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১)

এ বিয়ে-শাদী মানুষের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ও ইবাদত। অথচ অনুষ্ঠানের নামে বর্তমান সময়ে বিয়ে শাদীতে নারী-পুরুষ উভয়ের পরিবার বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ক্ষতির শিকার হয়।

এমন অনেক কাজ করে থাকে যা ইসলামে নিকৃষ্ট ও নিষিদ্ধ। বিয়ে-শাদীতে কোনোভাবেই এ নিকৃষ্ট ও নিষিদ্ধ কাজগুলো কাম্য নয়। আর তাহলো-

> বিয়ের সময় কনে পক্ষ ছেলের কাছে ক্ষমতার বাইরে অতিরিক্ত সোনা-রূপা শর্তারোপ করে থাকে। যা বরের সামর্থ্যের বাইরে। তাই সামর্থে্যর বাইরে বরের কাছে কনে পক্ষের যে কোনো আবদারই নিশেধ।
> আবার বিয়ের সময় কনে পক্ষের কাছে বিয়ের শর্ত হিসেবে যৌতুক সোনারূপা কিংবা অর্থ-সম্পদ দাবি করা নিকৃষ্ট নয় বরং তা হারাম তথা নিষিদ্ধ। চাই কনে পক্ষের সামর্থ্য থাকুক কিংবা না-ই থাকুক।
> বিয়ের উকিল হবে মাহরাম ব্যক্তি। যার সঙ্গে কনের দেখা-সাক্ষাৎ বৈধ। গায়রে মাহরাম ব্যক্তির জন্য বিয়ের উকিল হওয়া হরাম তথা নিষিদ্ধ।
> বিয়ের সময় কনের সম্মতি জানতে (ইযন)-এর সময় কোনো সাক্ষীর প্রয়োজন নেই। সম্মতি গ্রহণ তথা ইযন শুনতে মাহরাম নয় এমন ব্যক্তিও কনের কাছে চলে যায়; আর এতে যাওয়া অনর্থক এবং তাতে পর্দার বিধান লঙ্ঘন হয়। এ কারণেই বিয়ের উকিল মাহরাম হওয়া শর্ত।
> বিয়ের সময় সামাজিকতা রক্ষার নামে বর ও কনে পক্ষ ওপর অতিরিক্ত মেহমানদারির আবদার তথা বোঝা চাপিয়ে দেয়া ঠিক নয়। যে মেহমানদারিতে ধার-দেনা করে আয়োজন করতে হয়, নিঃসন্দেহে তা নিকৃষ্ট মেহমানদারির অন্তর্ভূক্ত। বর্তমান সময়ে সমাজে এ কুপ্রথা প্রচলিত। সাধ্যের বাইরে যে কোনো আয়োজনই পরিহার করা আবশ্যক।

> বিয়ের পর ওলিমা খাওয়ানো বর-কনে উভয় পক্ষের জন্য সুন্নাত। তবে তা অবশ্যই সামর্থে্যর মধ্যে হতে হবে। অতিরিক্ত ব্যয় করে, আভিজাত্যপূর্ণ ব্যবস্থাপনায় উঁচু মানের খাবার পরিবেশন করে ওলিমার আয়োজন ইসলাম সমর্থন করে না।

> আবার ওলিমার অনুষ্ঠানে সমাজের উঁচু শ্রেণীর মানুষকে দাওয়াত করা হয়। এ থেকে বঞ্চিত হয় সাধারণ দ্বীনদার ও গরিব-মিসকিনরা। হাদিসে গরিব-মিসকিন ও অসহায় মানুষের অংশগ্রহণ ছাড়া ওলিমাকে নিকৃষ্ট ওলিমা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরণের ওলিমা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

> বিয়ে-শাদির ওলিমা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে হাদিয়া বা উপঢৌকন লেন-দেন ঠিক নয়। হাদিয়া পাওয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে ওলিমায় দাওয়াত দেয়া বৈধ নয়; বরং তা চরম নিকৃষ্ট কাজ। একান্তই যদি কেউ হাদিয়া দিতে চায় তবে নিজেদের সুযোগ-সুবিধা মতো পরবর্তী সময়ে হাদিয়া কিংবা উপঢৌকন পাঠিয়ে দেবে। তবে কোনোভাবেই প্রচার করা যাবে না। আর এটাই হাদিয়ার সুন্নাত পদ্ধতি।

মনে রাখতে হবে
ওলিমার সুন্নাতি অনুষ্ঠানে অনেকেই হাদিয়া বা উপঢৌকনের কারণে অংশগ্রহণ করে না। আবার অনেকেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে মনে অসন্তুষ্টি রেখেই হাদিয়া বা উপঢৌকন নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। যা কোনোভাবেই কামন্য নয়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিয়ে-শাদীতে উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে মেনে চলার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের স্বচ্ছতা ও সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ পরিবারিক সমাজ ব্যবস্থার নির্মাণের তাওফিক দান করুন। আমিন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button