পাঠকের কথা

অনেক কথা বলা দরকার–তাহেরা বেগম জলি

ঝিনাইদহের চোখঃ
গণধর্ষণের নেতা রুহুল আমিন ছাড়া পেয়ে গেলো। পাঁচ বছর বয়সী পূজার ধর্ষক সাইফুল আগেই ছাড়া পেয়েছে। সম্প্রতি মা মেয়ে একই সঙ্গে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এক কথায় আমাদের দেশ এখন ধর্ষণের অভয়ারণ্য। অন্যদিকে খুন গুমের রাজত্তে পরিণত হয়ে গেছে আমাদের দেশ। কাল তনু হত্যার তিন বছর হয়ে গেলো। আজও তদন্ত শেষ হোলোনা। কিশোর ত্বকির নির্মম হত্যাকাণ্ড আজও আমাদের তাড়া করে ফিরছে। সাগর-রুনি হত্যা আজ আমাদের কাছে বেদনার মহা কাব্যে রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন কাঁদবো। কিন্তু বিচারের ভার মহাকালের হাতে গিয়ে পড়েছে। আমাদের দীপন, ওর গলা কেটে দিনের বেলায় ওরই অফিসে হত্যা করা হয়েছে তাও তিন বছর হয়ে গেলো। আজও কোন সুরাহা হোলোনা নির্মম এই হত্যাকাণ্ডেরও।

প্রায় পচিশ বছর আগে নিখোঁজ হয়েছেন নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা। তাঁর সন্ধান আজও আমরা পেলামনা। আজকাল দেখা দিয়েছে নতুন এক হাহাকার। যুব সমাজ বেকারত্তের জ্বালা মিটাচ্ছে আত্মহননের পথে। উল্লেখ করা দরকার আমাদের দেশে চার কোটির বেশি যুবক বেকার। নিরাপত্তা নেই, বিচার নেই, চিকিৎসা নেই, দু’মুঠো অন্ন সংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ কেউ বৃদ্ধ বয়সে ভিক্ষা ক’রে বা রিক্সা চালিয়ে বেঁচে থাকার নামে মরে আছে। এমন দেশ তো আমরা চাইনি।

সড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে প্রতিদিন গড়ে ২০ জন করে মানুষ মারা যাচ্ছে। বলার অপেক্ষা রাখেনা এ এক ধরণের হত্যা। সম্প্রতি অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুপ্রভাত নামে বাসটির ঢাকার রাস্তায় চালানোর কোন অনুমতিই নেই। অথচ দীর্ঘদিন চলছে ঢাকার রাস্তায়। এবং সকলের নাকের ডগায়। তার উপর ঐ গাড়ির বিরুদ্ধে আছে ২৭ টা মামলা। সেই সুপ্রভাত চোরা পথে সম্রাট নামে আবার রাস্তায় নামানোর পরিকল্পনা সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে। এই ভাবে জাবালে নুর নামে বাসটি নতুন নামে আবার রাস্তায় নামানো হয়েছে। যে গাড়িটা কিছুদিন আগে ফুটপথে গাড়ি তুলে দিয়ে দুইজন কলেজ ছাত্রকে হত্যা করে। আজ আমাদের দেশের যানবাহনের এই জালিয়াতি স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার খেসারৎ দিতে হচ্ছে আমাদের জনগনের। কিছুদিনের ব্যবধানে দুই দুইবার যুব বিক্ষোভ হয়ে গেলো। সীমাহীন নির্যাতন এবং মিথ্যা আশ্বাসের ফাঁদে ফেলে সেই ফুঁসে ওঠা বিক্ষোভ দমন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আবারও রাস্তায় নেমেছে আমাদের যুবসমাজ।

এর মধ্যেই পরপর হয়ে গেলো ভোটশূন্য নির্বাচনী মহড়া। এবং এক অদ্ভুত মজার কিছু দেখবার সৌভাগ্য আমাদের হোলো। মানুষ ভোট কেন্দ্র থেকে পিছন ফিরে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু নির্বাচনও হয়ে যাচ্ছে। প্রতিনিধিরাও শপথা বাক্য পাঠ করছেন। আর কী উঁচুদরের প্রতিনিধিরে বাবা! একজন কাপড়ের ব্যবসায়ী, গজ ফিতে নিয়ে যার কারবার, সে জনপ্রতিনিধি!

সম্প্রতি দেখলাম আরও এক নির্মম রসিকতা। বিচার নেই, সহানুভূতি নেই, সুপ্রভাতের নিচে চাপা দিয়ে আবরারকে হত্যা করবার দিন না ফুরাতেই তার নামে সড়ক। এইই এক এলোমেলো জীবন পার করছি আমরা। কিছুদিনের মধ্যে যদি দেখা যায়, আমাদের দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button