দেখা-অদেখা

বিল আর নদীর মিতালি

ঝিনাইদহের চোখঃ

বিশাল বিল। নাম বোকড়। বিলের চারপাশে বলয়ের মতো দিগন্তরেখা ছুঁয়েছে গ্রাম। বিলের বুক চিরে ছুটে চলেছে নদী। মুক্তেশ্বরী। নদী আর বিলের অপূর্ব মিতালি। এক অনিন্দ্যসুন্দর দৃশ্য। এক বিকেলে বের হলাম নদী আর বিলের মিতালি দেখতে।

যশোরের অভয়নগর ও মনিরামপুর উপজেলার সীমান্তে বিল বোকড় ও মুক্তেশ্বরী নদীর অবস্থান।
যশোরের দুঃখ ভবদহ স্লুইস গেট। এই স্লুইস গেটের কারণে বুকে পলি জমে মরে গেছে এলাকার অনেক নদী। নদীর বুক বিল থেকে উঁচু হয়ে পড়ায় পানিপ্রবাহ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল এলাকার ৫২টি বিলের। সেই থেকে শুরু জলাবদ্ধতার। ভবদহ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিল বোকড়। সর্বগ্রাসী জলাবদ্ধতায় আকণ্ঠ ডুবে যায় বোকড়। বুকে পলি জমে মুক্তেশ্বরীর। একসময়ের স্রোতস্বিনী মুক্তেশ্বরী এখন আর আগের মতো নেই।জলাবদ্ধতাও ছিল একটা সময়। পরে পুনঃখনন করা হয় মুক্তেশ্বরীকে। দুই তীরে মির্মাণ করা হয় বেড়িবাঁধ। ধীরে ধীরে প্রাণ পেতে থাকে মুক্তেশ্বরী।

বর্ষায় অপরূপ রূপে সাজে বিল বোকড়। সবুজ ধানগাছে ছেয়ে যায় গোটা বিল। ধানগাছের ফাঁকে ফাঁকে চাঁই পেতে মাছ ধরে জেলে। ডিঙিনৌকায় করে বিলে গিয়ে পাতা চাঁই থেকে মাছ বের করার দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। মুক্তেশ্বরীর স্বচ্ছ পানিতে খেলা করে আকাশ। দুলতে থাকে ঢেউয়ের তালে তালে। বিকেলে মুক্তেশ্বরী আবির্ভূত হয় এক অনন্যরূপে। সূর্য তার রঙিন আভা ছড়িয়ে দেয় নদীর বুকজুড়ে। নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরে জেলে। আর গলা ছেড়ে গান গায় মনের আনন্দে। ঢেউয়ের পর ঢেউ ভাঙে নদীতে। ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাসে নদীর তীর ধরে হাঁটলে পুলকিত হয়ে উঠবে যে কারও মন। ডিঙিনৌকায় করে নদীতে ঘুরে ঘুরে উপভোগ করা যায় পড়ন্ত বিকেলের নৈসর্গিক দৃশ্য। পানি আর বৈঠার ছলাৎছলাৎ শব্দে মন হয়ে ওঠে উদাসী। সব রং মুক্তেশ্বরীর বুকে ঢেলে দিয়ে পশ্চিমাকাশে আস্তে আস্তে অস্ত যেতে থাকে সূর্য। নেমে আসে সন্ধ্যা। ঠিক তখনই পুব আকাশে উঁকি দেয় চাঁদ। মায়াবী চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে গোটা বোকড়। আলো-আঁধারির খেলা জমে ওঠে মুক্তেশ্বরীর বুকজুড়ে।

এবার ফেরার পালা। মুক্তেশ্বরীর বুক চিরে নৌকায় কিংবা তীর ধরে পায়ে হেঁটে ফিরতে ফিরতে কেবলই মনে হবে সবুজ বিলের সঙ্গে নীল আকাশের মধুর আলিঙ্গনের কথা। অপরূপা মুক্তেশ্বরীর কথা। অনেক দিন পর একটা সুন্দর বিকেল উপভোগের কথা। ফিরে যাওয়ার পরও বিল বোকড় আর মুক্তেশ্বরী নদী অপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে। বারবার। এই বর্ষায় আপনিও ঘুরে আসতে পারেন। আর দেখে আসতে পারেন অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিল বোকড় ও মুক্তেশ্বরী।

যেভাবে যাবেন
যশোর ও খুলনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অভয়নগর উপজেলা সদর নওয়াপাড়া। বাস বা ট্রেনে করে আপনাকে নওয়াপাড়ায় আসতে হবে। এখান থেকে টেকার (জিপের মতো দেখতে একপ্রকার গাড়ি), ইজিবাইক কিংবা মোটরসাইকেলে করে আপনাকে আসতে হবে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে নেবুগাতি গ্রামের ব্রিজের কাছে। আশপাশে কোনো হোটেল নেই। রাতে থাকতে হলে যেতে হবে নওয়াপাড়া, মনিরামপুর, যশোর কিংবা খুলনা শহরে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button