অন্যান্য

শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করতে নুরের আপত্তি

 

ঝিনাইদহের চোখঃ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছেন ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন।

এ বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, এ নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। সেরকম একটি জায়গায় থেকে আমি মনে করি না যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ প্রদান করা উচিত। সে জায়গা থেকে আমিসহ কয়েকজন বিরোধিতা করেছেন। আমরা বলেছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সম্মানীয় ব্যক্তি। তিনি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী প্রধান। সুতরাং ডাকসুর আজীবন সদস্য পদ দেয়াটা তার জন্য বড় কিছু নয়। যেখানে এ নির্বাচনকে নিয়ে বিতর্কিত একটি অবস্থান রয়েছে, আমরা যখন দায়িত্ব নিচ্ছি তখন শিক্ষার্থীরা, আমার ভাইয়েরা-বোনেরা পুনর্নির্বাচেনের দাবি করে বিক্ষোভ করছেন, মিছিল করছেন।’ তার কথার সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন সমাজসেবা সম্পাদকও। শনিবার ডাকসুর কার্যকরী পর্ষদের প্রথম সভা হয়। এতে শেখ হাসিনাকে ডাকসুর আজীবন সদস্য করার প্রস্তাব করেন ডাকসুর আন্তর্জাতিক সম্পাদক শাহরিমা তানজিম অর্ণি। এ প্রস্তাবে ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ছাড়া ডাকসুর বাকি সদস্যরা সমর্থন দেন।

এ বিষয়ে ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্য পদ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। ইতোপূর্বে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে আজীবন সদস্য পদ দেয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নামটি এসেছে। কেন্দ্রীয় ডাকসু বডির পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন করে আমাদের ডাকসুর সভাপতি বরাবর প্রস্তাব দিয়েছি। তিনি বলেছেন, এটি আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী মিটিংয়ে সেভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে।’

ভিপির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাব্বানী বলেন, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় ডাকসুর ২৫ সদস্যের যে বডি রয়েছে সেখানে ২৩ জন সরাসরি সমর্থন করেছেন। একমাত্র ভিপি নুর দ্বিমত পোষণ করেছেন। সুতরাং ডেমোক্র্যাটিক ওয়েতে তার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য হয়নি। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সদস্য পদ দেয়ার সিদ্ধান্তটি গৃহীত হয়ে গেছে। এটি সলভ ইস্যু।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সম্মাননা সদস্য করার প্রস্তাবটি এসেছে। সবাই একত্রে সহমত জ্ঞাপন করেছেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ডাকসুর আজীবন সম্মাননা সদস্য পদ প্রদান করা হোক। সেটি আইনি ভাষা দেখে করা হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে প্রস্তবনাটি ধন্যবাদের সঙ্গে গ্রহণ করা হলো। এটি একেবারেই আনুষ্ঠানিকভাবে পরবর্তী সভায় গঠনতন্ত্র দেখে আমরা এই কাজটি, মহৎ উদ্যোগটি গ্রহণ করব। এটি আমাদের আজকের কার্যকর পরিষদের সিদ্ধান্ত।’

সভা শেষে ভিসি, ভিপি ও জিএস সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) নবনির্বাচিত কার্যকরী পর্ষদের প্রথম সভা আজ শনিবার বেলা ১১টায় ডাকসু ভবনে শুরু হয়।

সভায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানীসহ নির্বাচিত ২৫ জন ছাত্র প্রতিনিধি তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে ভিপি নুরুল হক নুর ও জিএস গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বাধীন ডাকসুর ৩৬৫ দিনের মেয়াদ শুরু হলো।

সভায় সভাপতিত্ব করেন পদাধিকার বলে ডাকসুর সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছিল, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো সিনেট ভবনের অডিটোরিয়ামে এ সভা হবে। কিন্তু পরে সভা হয় ডাকসু ভবনেই।

ডাকসুর নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলে গতকাল নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মধুর ক্যান্টিনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর গত ১১ মার্চ ডাকসু এবং ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন হয়। এতে কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগে ছাত্রলীগ ছাড়া প্রায় সব প্যানেলের ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয়।

নির্বাচনের দিন দুপুরে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে অন্য চারটি প্যানেলের সঙ্গে নির্বাচন বর্জন করে ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ প্যানেল।

নির্বাচনে ফল ঘোষণায় ভিপি প্রার্থী ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে ২ হাজার ভোটের ব্যবধানে পেছনে ফেলে ভিপি নির্বাচিত হন নুরুল হক নুর।

নির্বাচন বর্জন করার পর ভিপি হিসেবে নুর দায়িত্ব নিবেন কি না সে বিষয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ প্রশ্নের উত্তর নুরুল হক নুর নিজেই দেন। ১২ মার্চ পুনরায় ডাকসুর দাবিতে অনশন করা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে গিয়ে নুর বলেন, তিনি ভিপি পদ ও তার প্যানেল থেকে বিজয়ী আখতার হোসেনের সমাজসেবা সম্পাদক পদ বাদে ডাকসুর বাকি ২৩ পদে নির্বাচন চান। পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে নুর আন্দোলন করবেন বলে ঘোষণা দেন।

এরপর গত ১৬ মার্চ নুরসহ ডাকসু ও হল সংসদের নেতারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যান। পরের দিন ১৭ মার্চ সংবাদ সম্মেলন করে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি নুরুল হক নুর সবগুলোপদে পুনরায় নির্বাচন চান বলে ঘোষণা দেন। নুরুল হক নুরের এমন দ্বৈতমতের কারণে ডাকসুতে তিনি দায়িত্ব নিবেন কি না সেটা নিয়ে সংশয় বাড়তে থাকে। তবে গতকালের ঘোষণার পর সেই জল্পনা-কল্পনার অবসান হলো আজ!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button