ঝিনাইদহে কালবৈশাখীর আঘাতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

মনজুর আলম, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় মৌসুমের শুরুতেই কালবৈশাখী ঝরে আঘাত হেনেছে। জেলার প্রতিটি উপজেলার গ্রামাঞ্চলেও এর প্রভাব পড়েছে। গত রোববার (৩১ মার্চ) বিকাল আনুমানিক সাড়ে ৫টায় প্রায় আধা ঘন্টার এই তান্ডবে মাঠের ফসলসহ ইটভাটা মালিকদের ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তবে এরই মধ্যে কৃষি বিভাগ জেলা ও উপজেলার এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষিতে ক্ষতির পরিমান নির্ধারনের কাজ শুরু করেছে।
জেলা সদরের কাশিপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, বেশ কয়েকদিন রাতে কিছুটা শীত আনুভব করা যাচ্ছে। আবার দিনের বেলা প্রচন্ড তাপ পড়ছে। গতকাল রোববার আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৬টা কিংবা ৬ টা হবে। উত্তর আকাশে মেঘ দেখতে পাই। এরকিছু ক্ষন পরই দমকা বাতাসের সাথে হালকা পানি। পরে শিল পড়তে শুরু করে। তিনি আরো জানান, গতদিনের এই ঝড় বৃষ্টি এবং শিলের আঘাতে যে সকল জমির ধানের শীষবের হয়েছে, তাদের ফসলের ক্ষতির সম্মাখিন হতে হবে।
কোটচাঁদপুর উপজেলার সাফদারপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি জহিরুল ইসলাম বলেন, এলাকার চাষিরা জমি থেকে ভুট্টা কাটাতে শুরু করেছে। কোন কোন চাষি জমি থেকে ভুট্টা বাড়িতে রেখেছে, আবার কিছু চাষি জমি থেকে ভুট্টা কেটে বাড়িতে নিতে পারেনি। মাঠেই তাদের ভুট্টা ভিজে গেছে। যাদের ভুট্টা পানিতে ভিজে গেছে তাদের কিছুটা হলেও দূর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড়ের আম চাষি ফিরোজ হোসেন বলেন, তিনি দীর্ঘ দিন আম বাগান চাষের সাথে জড়িত। নিজের বাগানসহ লিজ নিয়েও তিনি আম বাগান ব্যবসা করেন। এ বছরও প্রায় ৩৮-৪০ বিঘা আম বাগান রয়েছে। বছরের শুরুতে বাগানে মুকুলে ভারে গিয়েছিল। তবে এ বছর আওহাওয়া খুব একটা সুবিধা যাবে, বলে মনে হচ্ছেনা। তিনি আরো বলেন, যে সকল গাছে আমের মুকুল থেকে ছোট গুটি শুরু হয়েছে। হঠাৎ শিল আর বৃষ্টি এবং ঝড়ে আমের গুটি ঝড়ে গেছে। তবে তাদেও ক্ষতি হয়েছে। আর এই ক্ষতির অবস্থা কয়েকদিন পরে ভালোভাবে দেখা যাবে।
জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের পান চাষি কওছার আলি বলেন, মৌসুমের শুরুর দিকেই, এবার যেভাবে শিল, বৃষ্টি আর ঝড় হল তা, দীর্ঘদিন দেখা যায়নি। তবে শিল,বৃষ্টি হলেও ঝড়ের মাত্রাছিল কম। যে কারনে পান বরজ গুলো খুব একটা ক্ষতি হয়নি। যে সকল জমিতে পান আছে তাদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। তবে এবার খুবই কম চাষিরই পান আছে।
জেলা সদর উপজেলার বেড়াশুলা গ্রামের মেম্বর গোলাম রসুল বলেন, গতদিন রোববার (৩১মার্চ) বিকালে দীর্ঘদিন পর, যা মৌসুমের শুরুতেই ঝড়, শিলা বৃষ্টি হল। এই শিল, ঝড় আর বৃষ্টিতে যে সকল চাষির ধানে শীষ বের হয়েছে, তাদের ফলনে একটু সমস্যা হতে পারে। সার্বিক দিকমিলে চাষিদের বেশ ভালোই ক্ষতি হয়েছে।
সদর উপজেলার মধুহাটি বøকের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মেসবাহ আহমেদ বলেন, গত রোববার (৩১মার্চ) বিকালে হালকা ঝড়, সেই সাথে বৃষ্টি এবং শিল পড়েছে ঠিক। তবে বøকে খোঁজনিয়ে, চাষিদের সাথে কথা বলে জেনেছি, দৃশ্যমান ক্ষতি তেমন হয়নি। তবে যাদের ধানের জমির ধানে শীষ বের হয়ে গেছে এবং আম বাগানে ক্ষতির পরিমান কিছুটা বেশি হয়েছে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পরিচালন জিএম আব্দুর রউফ বলেন, আমাদের কৃষি বিভাগের জেলা, উপজেলা এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তার মাধ্যমে গত দিনের ঝড়, বৃষ্টি এবং শিলে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে। তা নির্ধারণ করতে কাজ চলছে। তবে যে সকল এলাকায় চাষিদের ধানের শীষ বের হয়ে গেছে এবং আমের গুটি বা দানা হয়েছে। সেই এলাকার চাষিদের ক্ষতি বেশি হতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হলেই, চুড়ান্ত ভাবে জানাযাবে কি পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।##