কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহে ৩ পরিবারের ১৪ সদস্য ঘরবন্দী

ঝিনাইদহের চোখঃ

দীর্ঘদিনের চলার পথটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন বিত্তশালী এক ব্যক্তি। জায়গাটি তার, সেই কারনে কোনো ছাড় না দিয়ে নিজ সীমানা দখল করে ঘিরে নিয়েছেন। এই রাস্তা দিয়েই তিনি নিজ বাড়িতে যান। পাশের আরেক বিত্তশালী নির্মান করছেন আলিশান বাড়ি, তিনিও চলার জন্য সামনে কোনো জায়গা রাখেননি। অন্য আরেক পাশেও রয়েছে আরেকটি দ্বিতল ভবন। আর এই বিত্তশালীদের মাঝে আটকা পড়ে আছেন হতদরিদ্র তিনটি পরিবারের ১৪ জন সদস্য।

যারা দরিদ্র হলেও পথের জন্য জায়গা রেখে মাটির ঘর তৈরী করেছেন। সেখান দিয়ে বের হয়ে মুল রাস্তায় উঠতে পারতেন, পারছেন না বিত্তশালী ব্যক্তিটি নিজ সীমানা ধরে ভবন নিমৃান করেছেন। এভাবে দীর্ঘ তিনটি মাস তিনটি পরিবারের সদস্যরা আটকা পড়ে আছেন। প্রতিবেশিদের বাড়ির ভেতর দিয়ে চলাচল করে বেঁচে আছেন তারা। এই অবস্থা ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ পৌরসভার আড়পাড়া এলাকার। আটকা পড়ে আছেন ওই এলাকার শাহজাহান আলী, তার পুত্র জাহাঙ্গীর আলম ও লিটন মিয়ার পরিবার। তাদের দাবি পৌরসভার আইন বিত্তশালীরা মানেননি, যে কারনে তাদের মতো হতদরিদ্রদের বাড়ির বাইরে যাওয়া কষ্ট হচ্ছে।

সরেজমিনে আড়পাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ঢাকা-খুলনা হাইওয়ে থেকে পৌরসভার একটি রাস্তা চলে গেছে আড়পাড়া গ্রামের মধ্যে। আনুমানিক ২ শত গজ যাবার পর রাস্তাটির দক্ষিনে একটি পাঁয়ে হাটা পথ নেমেছে। এই পথটি স্থানিয় পলাশ বিশ^াসের। এই পথ ধরে যেতে হয় তার বাড়ি। প্রায় ১শত গজ দূরে দক্ষিনে পলাশ বিশ^াসের বাড়ির গেট। সরু এই পথটির পশ্চিমে কয়েকটি বাড়ি রয়েছে। পূর্ব পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। স্থানিয়রা বলছেন মাত্র সাড়ে ৭ ফুট চওড়া এই রাস্তাটি ব্যক্তি মালিকানার। পলাশ বিশ^াস তার বাড়িতে যাবার জন্য রাস্তাটি তৈরী করেন। সেই রাস্তার উপর দিয়েই চলাচল করতেন শাহজাহান আলী ও দুই পুত্রের স্ত্রী-সন্তানেরা। এখন তারা আটক অবস্থায় পড়ে আছেন।

শাহজাহান আলী জানান, হঠাৎ করে চার মাস পূর্বে তাদের বাড়ির সামনে প্রাচীর দেওয়ার চেষ্টা করেন পূর্ব পাশের জমির মালিক পলাশ বিশ^াস। সেখানে তার জমির সীমানার জিরো পয়েন্টে প্রাচীর উঠাতে যান। এতে তারা বাঁধা দেন। এই বাঁধা দেওয়ার কারনে সামান্য গাঁথার পর আর প্রচীর উঠাতে পারেননি। এরপর তিন মাস হলো তিনি জোর করে বাঁশের বেড়া দিয়ে জিরো পয়েন্টে আটকে দিয়েছেন।

শাহজাহান আলী আরো জানান, তার উত্তর পাশে আলিশান বাড়ি নির্মান করছেন জনৈক শাহাবুদ্দিন আহম্মদ। তিনি বাড়ির সামনে তিন ফুট জায়গা রাখার কথা বলে পৌরসভা থেকে বাড়ির প্লান পাশ করালেও বাস্তবে এক ফুটও রাখেননি। আর তাদের বাড়ির পশ্চিমে একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। দক্ষিনে পরিত্যক্ত একখন্ড জমি। বাড়ির উত্তরে পৌরসভার রাস্তা থাকায় বের হবার একমাত্র পথ জমির পূর্ব সীমানা দিয়ে পৌরসভার রাস্তায় ওঠা। কিন্তু পূর্ব পাশে বাঁশের বেড়া, উত্তরে আলিশান ভবন দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে তাদের ঘরগুলো। এই অবস্থায় তিনটি মাস আটকা পড়ে আছেন। পেছনের পাশ দিয়ে অন্যের বাড়ির ভেতর হয়ে বাইরে আসতে হচ্ছে তাদের। তিনি আরো জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি এলাকার অনেকের কাছে গিয়েছেন, কিন্তু জমির মালিক কোনো কথা শুনছেন না। তিনি বেড়া তুলবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ঘরের পেছনে তিনি জায়গা রেখেছেন। আলিশান যে বাড়িটি হচ্ছে তারা জায়গা দিলে আর বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া ব্যক্তি ২ ফুট ফাঁকা রাখলেই সকলের চলাচলের ব্যবস্তা হবে। যা তারা বুঝেও না বোঝার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে উত্তর পাশের আলিশান ভবনের মালিক শাহাবুদ্দিন আহম্মদ তিনি তিনফুট জায়গা রেখে বাড়ির প্লান পাশ করিয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তবে পাশের জমির মালিকের সঙ্গে সমঝোতা করে এক ফুট জায়গা রেখে বাড়ি করেছেন বলে জানান। অবশ্য সেই এক ফুট জায়গাও পরবর্তীতে উপরের অংশে গিয়ে ধরে নেওয়া হয়েছে। আর বাঁশের বেড়া দেওয়া পলাশ বিশ^াস জানান, তিনি এই জমিতে কলার চাষ করবেন। যখন বাড়ি করবেন তখন খালি জায়গা রেখে কাজ করবেন। এখন পেছনের মানুষগুলো কিভাবে বের হবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button