তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্রের ঝিনাইদহের পৈতৃক বসত বাড়ী বেদখল
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় নিভৃত পল্লী বাগুটিয়া গ্রামে একটি পরিবারে জন্মগ্রহন করেছিলেন এমন একজন বিপ্লবী যাকে নিয়ে গর্ব করে সমগ্র ভারত উপমহাদেশ (কলকাতায় জন্ম)। তিনি হলেন নাচোলের রানীমাখ্যাত তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী ইলা মিত্র । যার পূর্বপুরুষের বসত ভিটে এখনো রয়েছে এই গ্রামে। এই বাড়িতেই শৈশব কাটিয়েছেন ইলা মিত্র। তবে স্বাধীনতার পর থেকে একটি পরিবার সেই বাড়িটি দখল করে ক্রয়সুত্রে কেনা বলে দাবি করে আসছে । প্রশাসন বলছে দ্রæত সময়ের মধ্যেই বাড়িটি দখলমুক্ত করে স্মৃতি সংরক্ষন করা হবে।
জানা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকূপা থেকে দক্ষিণে ১৩ কিলোমিটার দূরে বাগুটিয়ার রায়পাড়ায় কাঁচা রাস্তার পাশে নানা শিল্পকর্মের সাক্ষী হয়ে এখনও দাঁড়িয়ে আছে তেভাগা আন্দোলনের নেত্রী, নাচোলের রানী ইলা মিত্রের পৈতৃক বাড়ি। চুন-সুরকি দিয়ে গাঁথা নয় (৯) কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল দালানটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও তা রয়েছে অন্যের দখলে। ভেঙে ফেলা হচ্ছে ইটের গাঁথুনি ও ভিতগুলো।
বাবা বেঙ্গল ডিপুটি অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেল নগেন্দ্র সেনের চাকরি সূত্রে ইলা সেনের জম্ম কলকাতায়। মা মনোরমা সেন গৃহিণী। ইলা মিত্রের জন্ম ১৯২৫ সালে কলকাতায় হলেও ছোটবেলায় বহুবার তিনি বাগুটিয়ায় বাবার বাড়িতে এসেছেন। তিনিই প্রথম বাঙালি মেয়ে যিনি ১৯৪০ সালে জাপানে অনুষ্ঠিত অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন। বেথুন কলেজে পড়ার সময় থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন তিনি। মাত্র ১৮ বছর বয়সে লাভ করেন কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ। ১৯৪৫ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রামচন্দ্রপুর জমিদারবাড়ির রমেন্দ্রনাথ মিত্রের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর ১৯৪৬ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন তিনি।
সংগঠক ইলা মিত্র স্মৃতি সংরক্ষন পরিষদ সুজন বিপ্লব অভিযোগ কওে বলেন, শুধু বাড়িই নয়, দখল করা হয়েছে ইলা মিত্রের বাবা নগেন্দ্র সেনের রেখে যাওয়া শত শত বিঘা জমি। সে সময়ে হাজী কিয়াম উদ্দিন এর উত্তারাধিকারি এ বাড়িতে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে দখল করে রয়েছেন আলি হোসেন, জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুর রশিদ ও রাশিদুল। তারা চার ভাই মিলে বাড়িসহ ৮৪ বিঘা জমি ক্রয় করেছেন বলে দাবি করেন।
শৈলকুপা উপজেলার নিত্যনন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন জানান, বাড়িটি যে নাচোলের রানী ইলা মিত্রের পৈতৃক ভিটা, তা এখনও অনেকের কাছে অজানা। তবে প্রতœতত্ত¡ বিভাগ, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বাড়িটি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এলাকাবাসির দাবি, যে মানুষটি জীবনের শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম করে গেছেন বাঙ্গলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে, তারই পূর্ব পুরুষের ভিটা আজ বেদখল! এই বাড়িটি ও নগেন্দ্রনাথ সেনের সম্পত্তি উদ্ধার করে সেখানে ইলা মিত্রের স্মরণে একটি কমপ্লেক্স নির্মান করার দাবি জানিয়েছেন।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, এ ব্যাপরে সরকারের কার্যক্রম চলমান।