অন্যান্য

ঘুঘু-দম্পতির জন্য বাথরুম ছেড়ে দিলেন নওগাঁর পিআইও

 

ঝিনাইদহের চোখ:

বিশ্বজুড়ে পাখি আর পশুপ্রেমীদের গল্প আমাদের অজানা নয়। অনেকের কাছে তো একেবারে পরিবারের সদস্য এরা। নাওয়া-খাওয়া, ঘুম সেও পশুপাখির সঙ্গে। সে তুলনায় আমাদের দেশে পশুপাখির প্রতি ভালোবাসার গল্প কমই শোনা যায়। খুব কমই দেখা মেলে এমন সংবেদনশীল মানুষের।

পাখিপ্রেমের এমনই বিরল এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মুলতান হোসেন। সম্প্রতি এক ঘুঘু-দম্পতি তাঁর কার্যালয়ের বাথরুমে এসে বাসা বাঁধলে পুরো বাথরুমই এদের জন্য বরাদ্দ করেছেন তিনি। সেটার দরজায় বিশাল করে লেখা—প্রবেশ নিষেধ। নিজের কাজে ব্যবহার করছেন ভবনের অন্য বাথরুম।

মূল ঘটনা জানতে চাইলে মুলতান হোসেন বলেন, ‘আমি এ উপজেলায় যোগদানের কিছুদিন পর হঠাৎ দেখি আমার টয়লেটের ভেন্টিলেটরে একজোড়া ঘুঘুপাখি বাসা বেঁধেছে। আমি ওদের কোনো রকম অসুবিধা করিনি। এরপর দেখা গেল পরের প্রজনন ঋতুতেও ওরা ওখানে বাসা বাঁধে, ডিম দেয়, বাচ্চা ফুটিয়ে চলে যায়। সব মিলিয়ে চার ঋতু ধরে ওরা এখানেই আসে।’

‘গত বর্ষায় দেখি ডিমে তা দিতে থাকা ঘুঘু-দম্পতির বাসাটা বৃষ্টির ছিটায় ভিজে যাচ্ছে। সেটা ঠেকাতে ভেন্টিলেটরের একটা অংশ ঢেকে দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ওরা একটা নিরাপত্তা বোধ করেছে হয়তো। ফলে বারবার এখানেই আসে,’ বলেন পিআইও।

কিন্তু গত কয়েক ঋতু ভেন্টিলেটরের কাছে পাখির বাসা থাকলেও বাথরুম ব্যবহারে সমস্যা না থাকলে এবারে বাথরুম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা কেন, জানতে চাইলে মুলতান জানান, গত ৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার নিয়মিত অফিস করেই বাড়ি চলে যান তিনি। পরের দুই দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি শেষে রোববার অফিসে গিয়ে দেখা যায় এবারে ভেন্টিলেটর ছেড়ে ওই ঘুঘু-দম্পতি বাথরুমের ভেতরে ঢুকে একেবারে বেসিনের আয়নার কাছে বাসা বেঁধে গেড়ে বসেছে। শুধু তাই নয়, রীতিমতো ডিম পেড়ে নির্বিঘ্নে তা দিচ্ছে।

কী আর করা! অতিথি নারায়ণ! তাকে জায়গা ছেড়ে না দিলে কী আর চলে! অগত্যা ঘুঘু-দম্পতির সুবিধার্থে পিআইওকেই নিজের বাথরুম ছেড়ে পিছু হটতে হলো। পাখিদেরও তো একটু নিরিবিলি জায়গা চাই! শেষে কার্যালয়ের বাথরুমের দরজায় প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়েছে, যাতে ভুল করেও কেউ ওই ঘুঘুজোড়ার বিঘ্ন সৃষ্টি না করে।

এদিকে পিআইওর এমন পাখিপ্রীতি দেখে অবাক আর চমৎকৃত আশপাশের লোকজন ও উপজেলাবাসী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button