ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ঝিনাইদহে নানা সঙ্কটে গড়ে উঠছে না অটো ব্রিকস

ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহে নানা সঙ্কটে পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা বা অটো ব্রিকস গড়ে তোলা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে দিন যতই যাচ্ছে ততই বেড়ে চলেছে পরিবেশ দূষণকারী চিমনি ও ব্যারেল ইটভাটার সংখ্যা।

এসব ইটভাটায় প্রতিনিয়ত পোড়ানো হচ্ছে শতশত মন কাঠ। ফলে গাছের সংখ্যা যেমন কমছে তেমনি পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ।

জেলা প্রশাসক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ইট ভাটার সংখ্যা ৯২টি, এর মধ্যে অনুমোদন রয়েছে মাত্র ১৮টি ভাটার। তবে জেলায় কোন পরিবেশ বান্ধব ইটভাটা বা অটো ব্রিকস নেই।

সাধারণত অটো ব্রিকস মেশিনের দিয়ে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ইট কেটে তা মেশিনের সাহায্যে ধোয়া দিয়ে শুকানো হয়। ফলে কয়লা থেকে নির্গত ধোয়া বাইরে বের হওয়ার সুযোগ থাকে না বললেই চলে। এতে পরিবেশও দূষিত হয় না, ইটের মানও হয় ভাল।

বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের জমির ফসল যেমন কম হচ্ছে তেমনি ইটভাটার ধোয়ায় বাড়িতে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ছেলে-মেয়েরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। সরকারের উচিৎ এই ইটভাটা বন্ধ করার ব্যবস্থা করা।

জেলার একমাত্র নির্মাণাধীন পোড়ামাটি অটো বিক্রস এর মালিক মখলেসুর রহমান জানান, সাধারণ ভাটা করতে ১-২ কোটি টাকা হলেই চলে। এতে একজন মালিক ইট পোড়ানোর মৌসুম শেষ করতে পারে। কিন্তু একটা অটো ব্রিকস তৈরি করতে ২০-৩০ কোটি টাকার প্রয়োজন। ইট কাটার মেশিন আনতে হয় থাইল্যান্ড থেকে। ফলে অনেকেরই এই পুজি নেই।

আবার ব্যাংক গুলোও অটো ব্রিকস ইটভাটা করার জন্য ঋণ দিচ্ছে না। ফলে ইচ্ছে থাকলেও আমরা এগিয়ে আসতে পারছি না। আমার নিজের অটো ব্রিকস করতে ২৫ কোটি টাকার উপরে খরচ হচ্ছে। আগামী মৌসুম থেকে হয়তো উৎপাদনে যেতে পারবো।

জেলা চেম্বার অব কমার্স এর সাবেক সভাপতি মীর নাসির উদ্দিন জানান, পরিবেশ বান্ধব ভাটা গড়ে তুলতে অনেক সমস্যা হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। কেননা এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা সব থেকে বেশি প্রয়োজন। কারণ একজন ভাটা মালিক যদি ব্যাপক অংকের টাকা খরচ করে ইট বিক্রির নিশ্চয়তা না পায় তাহলে তারা লোকসানে পড়ে সর্বস্ব হারাবে। আবার ব্যাংকে গেলে তারা ঋণ দিচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, অটো ব্রিকস এ ইট তৈরিতে খরচ একটু বেশি হলেও ইটের মান হয় খুব ভাল, যা সাধারণ ভাটার থেকে স্থায়ী। কাজেই সরকার যদি এক্ষেত্রে এগিয়ে এসে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া ও সাধারণ চিমনির ভাটা বন্ধে এগিয়ে আসে সেক্ষেত্রে পরিবেশ বান্ধব ভাটার দিকে ব্যবসায়ীরা বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবে। এতে ইটের গ্রাহক বা ব্যবসায়ী উভয়ই লাভবান হবে।

ঝিনাইদহ ডাচ বাংলা ব্যাংক ম্যানেজার মাহবুব আলী মৃধা জানান, প্রথম গড়ে ওঠা একটি অটো ব্রিকসে ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকায় তার সফলতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। ফলে অনিশ্চয়তার ভেতর থেকে ব্যাংক এতো টাকা ঋণ দিতে চায় না। তাদের ব্যবস্থাপনা যদি ভাল হতো তাহলে ব্যাংকগুলোও এগিয়ে আসতো। তবে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো এ সমস্যা অনেকাংশেই কেটে যাবে।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভাটা মালিকদের পরিবেশ বান্ধব অটো ব্রিকসে এগিয়ে আসতে তাদের পুঁজি সহযোগিতার জন্য সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button