অন্যান্য

জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের পাটের চা

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্কঃ

পাটের চা পান করেছেন কখনো? আমি এখন অবধি যাদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি, তাদের কেউই এমন চা আগে কখনো পান করার কথা মনে করতে পারেননি৷ তবে তাদের আগ্রহ আছে৷ আর সেই আগ্রহকে পুঁজি করে জার্মানিতে আসছে পাটের চা৷

সম্প্রতি বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে দুই টন পাট পাতা আমদানি করা হয়েছে৷ ইউরোপে আনার জন্য সেটা আলাদাভাবে চাষ করা হয়েছে৷ খাদ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জার্মানি বেশ কিছু কড়া নিয়মকানুন মেনে চলে৷ যাঁরা বাংলাদেশ থেকে পাটের পাতা আনছেন, তাঁরা সেসব নিয়মকানুন মানার ক্ষেত্রে বেশ সচেতন মনে হলো৷

আহসান হাবীবের ‘ইচ্ছা’ কবিতার কথা মনে আছে? ওই যে, মনা নামের খোকা মাছ ধরতে যায়৷ ‘বোনকে দেবো পাটের শাড়ি, মাকে দেবো রঙীন হাড়ি’, মনে পড়ছে? বাংলায় এই পাটের শাড়ির চল অনেক আগে থেকেই৷ কিন্তু যুগের সাথে পছন্দ ও ফ্যাশনও পরিবর্তন হয়েছে৷ এখন তাই পাটের শাড়িতেও আসছে নানা বৈচিত্র্য৷

স্টুটগার্টে বুধবার এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পাটমন্ত্রীর নেতৃত্বে জার্মানি সফর করা পাট রপ্তানি সম্পর্কিত এক প্রতিনিধি দল, জার্মানিতে বাংলাদেশের পাটের পাতা দিয়ে চা তৈরি করে বাজারজাত করা এক স্টার্টআপ আর জার্মান বিনিয়োগকারীদের দেখা মিলল৷ পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী সেই অনুষ্ঠানে আশার কথা শোনালেন৷ মুক্তিযোদ্ধা এই রাজনীতিবিদ পাটের সোনালী অতীতের কথা স্মরণ করে জানিয়েছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের পাট থেকে ব্যাপক মুনাফা করেছিল পশ্চিম পাকিস্তান৷ যদিও সেই মুনাফার তেমন কোনো সুফল সেসময় বাঙালিরা পায়নি, তবে পাট পরিচিতি পেয়েছিল সোনালী আঁশ হিসেবে৷

পরবর্তী সময়ে পলিথিনের প্রসার বাড়লে পাটের চাহিদা কমে যায়৷ তবে এখন আবার গোটা বিশ্বে পলিথিনবিরোধী আন্দোলন গড়ে ওঠায় পাটের সোনালী দিন ফিরে আসার সম্ভাবনা দেখছেন পাটমন্ত্রী৷ আর সেই সম্ভাবনার আলোকেই জার্মানি সফর তাঁর৷ তিনি পাটজাত বিভিন্ন পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে ছড়িয়ে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চান৷

পাটের নানাবিধ ব্যবহারের একটি হতে পারে পাট পাতা থেকে তৈরি চা৷ যদিও এটি প্রচলিত অর্থে চা নয়, তবে ‘পাট চা’ নামেই সেটি পরিচিতি পেতে শুরু করেছে৷ এটি মূলত পাটের পাতা দিয়ে তৈরি বিশেষ এক পানীয় যার নানাবিধ ভেজষ গুণাবলী রয়েছে৷ জার্মানিতে পাটের চা বাজারজাতের উদ্যোগ নিয়েছে ‘ইন্টারট্রোপ’ নামের একটি স্টার্টআপ৷ এক বাংলাদেশি আর দুই জার্মান গড়েছেন এই প্রতিষ্ঠান, যাঁরা পাট নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখছেন৷

প্রতিষ্ঠানটির প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট মিজানুর রহমান জানালেন, তাঁদের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে জার্মানির ঔষধের দোকানগুলোতে পাটের চা বিক্রি করা৷ ইতোমধ্যে কিছু দোকানে সেটি বিক্রি শুরুও হয়েছে৷ পাশাপাশি বিশেষায়িত চা বিক্রির দোকানগুলোতেও তারা পাটের চা বিক্রির ব্যবস্থা করতে চাচ্ছেন৷ সেলক্ষ্যে পাঁচটি ফ্লেভারে পাটের চা প্রস্তুত করেছে ইন্টারট্রোপ৷

বলাবাহুল্য, জার্মানিতে ভেজষ চায়ের বেশ বড় বাজার রয়েছে৷ একজন জার্মান বছরে গড়ে সাড়ে সাতাশ লিটার কালো এবং সবুজ চা পান করেন৷ ৬৩টি দেশ থেকে চা আমদানি করে ইউরোপের এই দেশটি, যার মধ্যে ভারত শীর্ষস্থানে রয়েছে৷ ইন্টারট্রোপ আপাতত জার্মানির এই বিশাল বাজারে শুন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ হিস্যা নেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে৷

সামগ্রিকভাবে সেই লক্ষ্য অর্জন অসম্ভব মনে না হলেও অনুষ্ঠান থেকে কিছু প্রতিবন্ধকতার কথাও জানা গেল৷ বাংলাদেশ থেকে পাট পাতা আমদানির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকে এক সমস্যা হিসেবে দেখছেন আমদানিকারকরা৷ পাশাপাশি পাট চাষীদের সময়মত তাদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য শোধ করা না হলে তা আমদানি প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করেন তাঁরা৷

তবে এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি তাতে আশাবাদী হওয়াই যায়৷ বিশেষ করে সরকার এক্ষেত্রে সহায়তার হাত আরো প্রসারিত করলে পাটের চায়ের এক বড় বাজার হবে ইউরোপ৷ সেই ইঙ্গিত বেশ স্পষ্ট৷

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button