পাঠকের কথা

আসন্ন পবিত্র মাহে রমজান, সৎ ব্যবসায়ী ও কার্যকরী প্রশাসন—সবুর মিয়া

ঝিনাইদহের চোখঃ

পবিত্র মাহে রমজান মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষের অন্যতম প্রধান ফরজ ইবাদত। পবিত্র রমজানে দীর্ঘ এক মাস রোজা, সালাত, পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, জিকির – আজগার ও নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষেরা আল্লাহর কাছে অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নিজের, পরিবারের, সমাজের, রাষ্ট্রের ও সর্বোপরি পৃথিবীর সকল মানুষ ও জাতির জন্য কল্যান, শান্তি ও আল্লাহর অশেষ রহমত কামনা করে থাকে।

পবিত্র রমজানে আল্লাহতালাহ মানুষের প্রত্যেক ইবাদতে ৭০ গুণ সওয়াব বেশি দিয়ে থাকেন। আমিন। রোজাদারদের অনুনয়, বিনয়, কামনা, বাসনা, চাওয়া-পাওয়া প্রত্যাশা আল্লাহ কবুল করে থাকেন। মুসলিমদের কাছে রমজান মাস অত্যন্ত কল্যাণ ও বরকত ময় হিসেবে বিবেচিত। রমজান মাস ইবাদতের এক উৎসবে পরিণত হয়। রমজানের কারণে রোজাদারদের নিকটে ইফতার ও সেহরীর জন্য নিত্যপণ্যের বিশেষ চাহিদা সৃষ্টি হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইফতারের জন্য ব্যবসায়ীদের অধিক পণ্যের যোগান দিতে হয়। রমজান মাসে এক ধরনের অসাধু কুচক্রী ব্যবসায়ী, মজুতদার, পাইকারি, মধ্যস্বত্বভোগী, খুচরা ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত লাভের আশায় বিভিন্ন ধরনের ফন্দি ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে থাকে।

অতিরিক্ত দামের কারণে ধর্মপ্রাণ মুসলিম রোজাদারদের আর্থিক কষ্ট ভোগ করতে হয়। অনেক সাধারণ মুসলমানদের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করা দুঃসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। বরকত ও রহমত ময় এই মাসে ব্যবসায়ীরা স্বল্প লাভে নিত্যপণ্য রোজাদারদের কাছে বিক্রি করবে এটাই সকলের কাম্য কিন্তু আমরা দেখি হিতে বিপরীত।

পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশ এমনকি অমুসলিম দেশগুলোতে রোজাদারদের জন্য বিশেষ পণ্য মূল্যহ্রাস ও হোম ডেলিভারি সুবিধা দিয়ে থাকে কিন্তু আমাদের দেশে চলে এক ধরনের নির্যাতন ও দুর্নীতি ও ব্যবসার নামে নীতি নৈতিকতার অবক্ষয়ের সচিত্র দৃশ্য। ব্যবসায়ীরা সৎ পথে ব্যবসা পরিচালনা করবে ভোক্তাদের অধিকার সুনিশ্চিত করবে এটাই তো ইসলামের ও রমজানের মৌলিক শিক্ষা।

উল্লেখ্য একজন সাধারন ক্রেতা রমজান মাসে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কেউ দোষ নিতে চায় না। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বেশি দাম রাখে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলে মজুদদাররা বেশি দাম রাখে, মজুদদাররা বলে বাজারে আগের তুলনায় সরবরাহ কম। তাহলে সাধারন ভোক্তা কোথায় সমাধান খুজবে। প্রতিবছর রমজানে নিত্যপণ্য মূল্য বৃদ্ধি পায় কিন্তু ক্রেতা বা ভোক্তা কোন সমাধান পায় না। প্রশাসন বলে এবার পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব কিন্তু কী ব্যবস্থা নিবে বা নিয়েছে তা সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য নয়। প্রতিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে বক্তব্য বিবৃতি প্রদান করা হয়। দৃঢ় কন্ঠে ব্যক্ত করা হয় যেকোনো মূল্যে আমরা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করব কিন্তু বাস্তব চিত্র আমরা দেখি উল্টা।

প্রশাসন আর ব্যবসায়ীরা যদি যৌথভাবে ভোক্তা সাধারণের ক্রয় ক্ষমতা ও আর্থিক সচ্ছলতার বাস্তবতা উপলব্ধি করে তাহলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ কঠিন কিছু নয়। সৎ ও আদর্শবান ব্যবসায়ী কখনো দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে রোজাদার ও ভোক্তা সাধারণের উপরে নির্যাতন চালাতে পারেনা।
এটা বলতেই হয়, আজ আমাদের প্রশাসন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত। দুর্নীতি ও নৈরাজ্য দমনে প্রশাসন এখন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। আমরা প্রত্যাশা করতে পারি, আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষতা, সততা, আন্তরিকতার মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য লাগাম টেনে ধরে ভোক্তা সাধারণের অধিকার বাস্তবায়ন করা অবশ্যই সম্ভব।

সম্প্রতি দুবাই সরকার ঘোষণা দিয়েছে তাদের প্রধান তিনটি শহরে পবিত্র রমজান মাসে রোজাদারদের জন্য বিশেষ ডিস্কাউন্টে নিত্যপণ্য সরবরাহ করবে এমনকি বিনা খরচে বাসায় পৌঁছে দেবে। এটা কিন্তু সম্ভব হয়েছে সততা ও দায়িত্ববোধের কারণেই। ২০১৮ সালে পবিত্র রমজানে আমরা দেখেছিলাম, বাংলাদেশের একজন ক্ষুদ্র মুদি ব্যবসায়ী ছোলা-বুট লাভ বিহীন রোজাদারদের নিকট বিক্রি করেছিল এবং সে ঘোষণা করেছিল পরবর্তী রমজানে সে দুইটা পণ্য লাভ বিহীন রোজাদারদের নিকট বিক্রি করবে। আল্লাহ তাকে সহ সকল ব্যবসায়ীদের সৎ পথে পরিচালিত করুক।

পরিশেষে আহ্বান জানাই ব্যবসায়ীদের, সরকারি নিয়োগ প্রাপ্ত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আপনাদের অঙ্গীকার রক্ষা করুন পবিত্র রমজানের সম্মান রক্ষা করুন এবং সাধারন মুসলমান রোজাদারদের ন্যায্যমূল্যে পণ্য ক্রয় করে রোজা রাখার সু ব্যবস্থা নিশ্চিত করুন। সমগ্র জাতি আজ আপনাদের দিকে সুদৃষ্টি রেখেছে।

মোঃ সবুর মিয়া I
E-mail: sabur2050@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button