বছরে একদিন ‘নিঃশব্দ’ থাকে যে দ্বীপ!
ঝিনাইদহের চোখঃ
কোনো কোনো বিশেষ কারণে আমরা নীরবতা পালন করে থাকি। সেটা শোক অথবা ধর্মিয় ব্যাপারেই বেশি হয়ে থাকে। তবে তারও একটা সময় আছে, যেমন এক মিনিট, পাঁচ মিনিট বা বেশি হলে এক ঘণ্টা। তাই বলে পুরো ২৪ ঘণ্টা নীরবতা পালন! জি ঠিকই শুনেছেন, ২৪ ঘণ্টা নীরবতা পানল করা হয়। তাও আবার একজন দুজন না গোটা দ্বীপের বাসিন্দা। ইন্দোনেশিয়ার দ্বীপ-রাজ্য বালিতে ‘ওগোহ ওগোহ’র পরের দিন ‘নাইপি’তে পালন করা হয় এই নীরবতা।
ইন্দোনেশিয়ার এই দ্বীপ-রাজ্য যে পর্যটকদের স্বর্গ, তা বলাই বাহুল্য। বালি দ্বীপ ও আরো কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ মিলিয়েই তৈরি হয়েছে সে দেশের হিন্দু অধ্যুষিত এই রাজ্য। জানা যায় যে, ২০১১ সালে বিশ্বের ‘বেস্ট আইল্যান্ড’ হিসেবে দ্বিতীয় স্থানে ছিল বালি। কিন্তু, সেই বালিরই এক প্রথার কথা জানলে খুব অবাক হতে হবে সকলকে।
বছরে একটি দিন, গোটা দ্বীপের মানুষ নীরবতা পালন করেন বালিতে। ২৪ ঘণ্টার এই প্রথা, সেই বছরের ‘নাইপি’ থেকে। ‘নাইপি’ অর্থাৎ, নতুন বছর।
ইন্দোনেশিয়ার হিন্দু বাসিন্দারা, বছরের এই প্রথম দিনটি একেবারে নিঃশব্দে কাটান। তাদের মতে, নাইপিতে মনের কালিমা ধুয়ে, নিজেকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ করার জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করা হয়। এবং, চারপাশ নীরব থাকলে, পুজো-পাঠে সম্পূর্ণভাবে মনঃসংযোগ করা যায়, বলেই এমন প্রথা মেনে চলে দ্বীপবাসী।
দোকান-বাজার সবই বন্ধ থাকে এ দিন। সব ধরনের কাজ-কারবারও স্থগিত রাখা হয়। তবে, চলতি বছরে আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে, বালি এবার বন্ধ করে দিয়েছে সেখানকার বিমান পরিষেবাও। সঙ্গে, সোশ্যাল মিডিয়াও।
২৪ ঘণ্টার জন্য ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য মেসেজিং অ্যাপ যেমন বন্ধ রাখা হয়েছে। তেমনই, টেলিভিশন-রেডিওর সম্প্রচারও বন্ধ সেদিন বালিতে।
প্রায় ৪০ লাখ মানুষ বাস করেন বালিতে। কিন্তু, তা বোঝার উপায় নেই এই ‘নাইপি’তে। কারণ, সকলেই এ দিন ঘরে থাকতে পছন্দ করেন। রাজ্যে শান্তি বজায় রাখার জন্য রাস্তায় এ দিন দেখা যায় শুধুমাত্র টহলরত পুলিশদের।
বালির এই হিন্দু প্রথা নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আপত্তি না থাকলেও, এ বছর সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করায় কিছু শতাংশ মানুষ আপত্তি তোলেন। কারণ, এর ফলে সেখানের পর্যটক ও অ-হিন্দু বাসিন্দাদের যে এর ফলে অসুবিধা হতে পারে।
নাইপির আগের রাতে বালির পথে দেখা যায় ভয়ানক সব মুখোশধারীর শোভাযাত্রা। প্রচণ্ড শব্দ করে তারা দাপিয়ে বেড়ায় রাজ্যজুড়ে। স্থানীয় ভাষায় একে ‘ওগোহ ওগোহ’ বলা হয়।
প্রসঙ্গত, বালির হিন্দুরা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। মূল ভূমি ভারতের ঐতিহ্যে মৌনী অমাবস্যায় এমন নীরব থাকার কথা রয়েছে। কিন্তু ভারতীয়রা সেভাবে বিষয়টিকে নিয়ে মাথা ঘামান না। সামান্য সংখক মানুষই এই ব্রত পালন করেন। দূর দেশ বালিতে হিন্দুরা কি সেই অভাবটাই পূরণ করছেন এই ব্রত পালনের মধ্য দিয়ে?
তথ্য ও ছবি: backgroundimgfer. bali-indonesia