কুষ্টিয়া বিসিকে দৃষ্টান্ত বিআরবি ক্যাবেলস
ঝিনাইদহের চোখঃ
নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বিসিক শিল্পনগরীতে ছোট থেকে বৃহৎ শিল্প স্থাপনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিআরবি কেবলস। ১৯৭৮ সালে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিআরবি কেবলস বিদ্যুতবিহীন কুষ্টিয়া বিসিকে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। বর্তমানে কুষ্টিয়া বিসিকে বিআরবি গ্রুপের এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করছে।
১৯৬৩ সালে কুষ্টিয়া শহরের অদূরে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ সড়কের কুমারগাড়ায় ১৮.৪৯ একর জমির ওপর কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠিত হয়। সে সময় ৮৭টি প্লটের মধ্যে পাঁচটি নিয়ে বিসিক অফিস স্থাপন এবং বাকি ৮২টি প্লট শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে সেখানে ৬০-৬২টি ছোট বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল। কিন্তু দায়দেনাসহ নানা প্রতিকূলতার কারণে এই শিল্পগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মালিকপক্ষ সেগুলো চালাতে না পেরে বিআরবি গ্রুপসহ অন্যদের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে সেই ৮২টি প্লটে ১২টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে। তার মধ্যে বিআরবি কেবলসহ বিআরবি গ্রুপেরই আটটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, প্রতিবছর কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী থেকে সরকার শত শত কোটি টাকা রাজস্ব আয় করলেও এই বিসিকের পরিধি বাড়াতে পারেনি। ফলে জায়গার অভাবে যেমন স্থাপন করা কল-কারখানা সম্প্রসারণ হচ্ছে না আবার নতুন নতুন কল-কারখানাও স্থাপন হচ্ছে না। তার পরও বেকার সমস্যার সমাধানে বিআরবি গ্রুপ ব্যক্তি উদ্যোগে বিসিকসংলগ্ন এলাকার ইটভাটা, পতিত জমি ও অনাবাদি জমিসহ প্রায় ১০০ একর জমি কিনে তাদের শিল্প-কারখানার বিস্তার ঘটিয়েছে।
সূত্র জানায়, শিল্প-কলকারখানা স্থাপনে আগ্রহী উদ্যোক্তারা প্লট বরাদ্দ পাওয়ার আবেদন করলেও জায়গা না থাকায় ১৯৮৭ সালের পর থেকে নতুন কোনো উদ্যোক্তাদের কুষ্টিয়া বিসিকে প্লট দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে শিল্প স্থাপনে আগ্রহীরা জেলা শহরের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় চামড়া, তামাক, পোল্ট্রিসহ ছোট এবং মাঝারি ধরনের শিল্পস্থাপন করেছে।
কুষ্টিয়ার বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা আশানুজ্জামান জানান, কুষ্টিয়া বিসিকে জমির অভাবে শিল্প-কারখানা স্থাপন ব্যাহত হওয়ায় এবং এ অঞ্চলের বেকারদের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার কুষ্টিয়ায় দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপন করতে যাচ্ছে। এ জন্য কুষ্টিয়া রাজবাড়ী সড়কের কুমারখালীতে ২০ একর জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন অধিগ্রহণের অপেক্ষা। তিনি জানান, তার পরেও এখানকার শিল্পোদ্যোক্তারা শহরকেন্দ্রিক কুষ্টিয়া বিসিকের পরিধি বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছেন।
কুষ্টিয়া চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, দেশের অনেক বিসিক শিল্পনগরীতেই উদ্যোক্তারা এখনো পর্যন্ত ভালো কোনো শিল্প সৃষ্টি করতে পারেননি। কিন্তু কুষ্টিয়ায় বিসিক এর ব্যতিক্রম। ১৯৭৮ সাল থেকে বিআরবি গ্রুপ কুষ্টিয়া বিসিকে ছোট্ট পরিসরে এই শিল্পের কার্যক্রম শুরু করে। একসময় বাইরের মানুষজন ভৌগোলিক পরিচয়ে মোহিনী মিলকে দিয়ে কুষ্টিয়াকে চিনত। আর এখন মানুষ বিআরবিকে দিয়ে কুষ্টিয়াকে চেনে। কুষ্টিয়া বিসিক শিল্পনগরী মানেই বিআরবি গ্রুপ। কুষ্টিয়া বিসিকে উৎপাদিত জিনিসপত্র দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করায় ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হচ্ছে বলে শিল্পোদ্যোক্তারা এখানে নতুন নতুন শিল্প কল-কারখানা গড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করছে। জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে কলকারখানা গড়ে তুলছেন। তিনি বলেন, নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনে বিসিক শিল্পনগরী সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।