ঝিনাইদহে কৃষক জেনে-না-জেনে ইচ্ছেমতো কেমিক্যাল স্প্রে করে
ঝিনাইদহের চোখঃ
কলাগাছ রোপনের পর থেকে কলা পাকানো ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত ধাপে ধাপে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক। কৃষক থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী সবাই দেদারছে প্রয়োগ করছেন কেমিক্যাল। তাদের উৎসাহ দিচ্ছেন স্থানীয় কীটনাশক ব্যবসায়ী ও দোকানিরা। দীর্ঘদিন ধরে এমন কাজ চললেও তা বন্ধে দেখা মেলে না কৃষি বিভাগ কিংবা প্রশাসনের কোনো পদক্ষেপ।
ঝিনাইদহ জেলা সদরের ধানহাড়িয়া, উদয়পুর, শৈলকুপা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ক্ষেতে কলাবাগান ঘুরে দেখা যায় কলায় কীটনাশক ব্যবহারের এমন ভয়াবহ চিত্র। কলা দেখতে সুন্দর করতে এতে কার্বোসালফান উপাদান সমৃদ্ধ বেনিফিট, ডাইফোনোকোনাজল সমৃদ্ধ রাইস ও সালফার সমৃদ্ধ সালফোসার্চসহ নানা কীটনাশক স্প্রে করছেন কৃষকরা। কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকার কলা ক্ষেতেও এমন চিত্র দেখা যায়।
ক্ষেতে কলাগাছ রোপনের পর থেকে চাষিরা সেচ, সার প্রয়োগসহ নানা ধরনের পরিচর্যা করে থাকেন। আর গাছে ফুল (স্থানীয় ভাষায় মোছা বলে) আসার পর থেকেই শুরু হয় বেশি করে কীটনাশক ও ভিটামিন জাতীয় ঔষধ স্প্রে। কলাগাছে ফুল আসার পর একবার, আর কলারগুটি আসার পর থেকেই নিয়মিত স্প্রে করা হয়।
আর বিক্রির ঠিক কয়েকদিন আগে কলাকে দেখতে সুন্দর, হৃষ্ট-পুষ্ট ও দাগমুক্ত করতে কীটনাশক স্প্রে করেন চাষিরা। এরপর কলা চলে যায় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি কলার হাট কুষ্টিয়া জেলার মধুপুর বাজারে। আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে কলা আসে এখানে। এই বাজারেও গোপনে কলায় ঔষধ ব্যবহার করা হয়। পরে এ দুই জেলা থেকে শতাধিক ট্রাক কলা পাঠানো হয় ঢাকা, সিলেট, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
মিঠুন হোসেন নামের এক কলাচাষি বলেন, কলা ক্ষেতে পোকা লাগে বলে ওষুধ দেওয়া হয়। দোকানদাররা আর ওষধ কোম্পানির লোকেরা আমাদের বলে দেয় কোন কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। সেইভাবে আমরা কাজ করি।
খাইরুল ইসলাম নামে শৈলকুপার এক কলা ব্যবসায়ী জানান, আমি কুষ্টিয়ার মধুপুর বাজার থেকে কলা কিনে শেখ পাড়া বাজারে বিক্রি করি। তার দাবি প্রাকৃতিক উপায়ে হিট দিয়ে কলা পাকান তিনিসহ স্থানীয় অন্যান্য ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও জানান, এখন বাইরের বড় বড় ব্যাপারীরা মধুপুর বাজার থেকে ভিটামিন জাতীয় ওষুধ কিনে নিয়ে অন্য জায়গায় গিয়ে ব্যবহার করেন। কারণ ওই ওষুধগুলো এ অঞ্চলে বেশি পাওয়া যায়।
মধুপুর বাজারের ওষুধ বিক্রেতা আল আমিন জানান, কৃষকরা আসে তাদের কাছে আমরা ওষুধ বিক্রি করি। ক্ষেতের কলা ভালো হয়। রোগ বালাই হয় না। এজন্য ওষুধগুলো আমরা চাষিদের দেই। তবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা অনেক সময় কৃষক পরিচয় দিয়ে ওষুধের বোতল নিয়ে যায়।
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার ডা. শাহিন ঢালী জানান, কলায় ব্যবহৃত কেমিক্যাল মানবস্বাস্থ্যে বড় প্রভাব ফেলে। প্রথমত বমি-বমি ভাব ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। পরে এটি কিডনিকে অকার্যকর করার পাশাপাশি ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিএম আব্দুর রউফ জানান, ক্ষেতে ফসল ভালো করার জন্য কীটনাশকের ব্যবহার প্রয়োজন আছে। তবে সেটি মাত্রাতিরিক্ত না। কলায় কীটনাশকের ব্যবহার হচ্ছে এটি আমাদের নলেজে এসেছে। আমরা কৃষকদের সচেতন করার পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি।