বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদ রংপুর

ঝিনাইদহের চোখঃ
বাংলাদেশের প্রাচীন জনপদগুলোর মধ্যে রংপুর একটি। প্রাচীন জনপদ বরেন্দ্র অঞ্চলের অংশ হিসেবে ধরা হয় এই রংপুরকে।
রংপুর নামকরণের ক্ষেত্রে এই এলাকার লোকমুখে অনেক কথাই প্রচলিত আছে। বলা হয় পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ নামটি কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে এই নামটি এসেছে। পূর্বের ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই অঞ্চলের মাটি উর্বর হওয়ার কারণে ইংরেজরা এখানে প্রচুর নীলের চাষ করাতো। আর সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামে জানত। কালের বিবর্তনে রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর আর পরে রংপুর নামটি এসেছে।
অপরদিকে জানা যায়, এই জেলাকে অনেকে যমপুর বলেও ডাকত। তার কারণ ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় এখানে অনেক মানুষ মারা যেত। গ্রাম থেকে আসা মানুষগুলো প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে মারা যেতো, না হয় ম্যালেরিয়ায় মারা যেত। তাই সাধারণ মানুষরা শহরে আসতে খুব ভয় পেত।
তামাকের জন্যও বিখ্যাত বলা হয় রংপুর অঞ্চলকে। প্রায় সারা দেশের তামাকের চাহিদা পুরণ করা হয় এখানকার তামাক দিয়ে। তবে শুধু যে তামাকের জন্যই এই জেলা বিখ্যাত তা নয়, এখানকার হাঁড়িভাঙা আমও বিশ্বে সমাদৃত। স্বাদের বিচারে যা অতুলনীয়। এছাড়াও এখানে ধান-আলু-পাট প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। যা স্থানীয় বাজারে চাহিদা পূরণ করে থাকে।
এই অঞ্চলে তেমন একটা খনিজ সম্পদ না থাকলেও পীরগঞ্জে খালাসপীরে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে আর রানীপুকুরে তামার সন্ধান পাওয়া গেছে।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই রংপুর। প্রাচীন বরেন্দ্র সমতল ভূমির অন্তর্গত হলেও পরে গৌর অঞ্চল হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এই অঞ্চলে অনেক প্রাচীন নিদর্শনাবলী ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে।
এখানে রয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্য মণ্ডিত কারামাইকেল কলেজ। পায়রাবন্দে রয়েছে বেগম রোকেয়ার বাড়ি। আরো রয়েছে মোঘল আমলের খনন করা মিঠা পুকুর।
দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আরো রয়েছে ভিন্নজগত, তাজহাট রাজবাড়ী, রংপুর চিড়িয়াখানা, কুতুব শাহের মাজার, রাজা নীলাম্বরের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ, ডিমলা রাজ কালী মন্দির, রায়পুর জমিদার বাড়ি, কেরামতিয়া মসজিদ ইত্যাদি।