ঝিনাইদহের চোখঃ
গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে সাধারণ পরিবারে ব্যাপক চাহিদা গরীবের সোনা। যাদের স্বর্ণের ধারে কাছে যাওয়ার সাধ্য নেই তাদের কাছে দুধের সাধ ঘোলে মিটানোর মতো অত্যন্ত পছন্দের গরীবের সোনা। গরীবের সোনার কারণে ভারত থেকে চোরাইপথে আসা সিটি গোল্ড মার খেয়েছে। সীমান্তবর্তী যশোর ও ঝিনাইদহসহ এ অঞ্চলে ব্যাপক বাজার ছিল সিটি গোল্ডের। ভারতীয় সিটি গোল্ডের মতোই এখন অত্যন্ত কম মূল্যে গরীবের সোনা পাওয়া যায়। এর কারখানাটি যশোর-ঝিনাইদহ সীমান্তবর্তী মহেশপুরে।
প্রায় এক যুগ ধরে রমরমা ব্যবসা চলছে গরীবের সোনার। মহেশপুর শহরের আব্দুল হামিদ ও আব্দুর রহিম দুই ভাইয়ের স্বর্ণের দোকান ছিল। জুয়েলারী ব্যবসার মাঝে ২০০১ সালের দিকে তাদের মাথায় আসে ভারতের সিটি গোল্ড একচেটিয়া ব্যবসা করছে। নিজের দেশে চেষ্টা করে দেখতে দোষ কোথায়?
দুই ভাই পদ্ধতি কাজে লাগান। ব্রোঞ্চ দিয়ে তৈরী করা গহনার উপর গোল্ড কালার পালিশ করলেই হয়ে যায় গরীবের সোনা। তারা সফল হয়ে ঝিনাইদহ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুরসহ গোটা এলাকার জুয়েলারী ও কসমেটিকস এর দোকানে সরবরাহ করতে থাকে। বিরাট বাজার পেয়ে যায়। তবে বর্তমানে বাজার কিছুটা মন্দা যাচ্ছে জানালেন গরীবের গহনা তৈরীর সাথে জড়িতরা।
আব্দুর হামিদ জানালেন, আমার মণি সিটি গোল্ড। ভাই আব্দুর রহিম মারা যাবার পর তার ছেলে রশীদুন্নবী মিলন ‘মিলন সিটি গোল্ড’ এবং আমার আরেক ভাই আব্দুল হাই রনি সিটি গোল্ড নামে গরীবের সোনার ব্যবসা করছে।
একমাত্র মহেশপুর উপজেলাতেই মোট ১৮টি সিটি গোল্ড কারখানা রয়েছে। কারখানা বাদেও গ্রামে গ্রামে মহিলাদের দিয়ে ব্রোঞ্চের উপর গোল্ড কালার করা হয়। ১০০ টাকায় কানের দুল, ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় এক জোড়া বালা, ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় সীতাহার বা চেইন পাওয়া যায়। তাও সোনার রঙের এটা কী বিশ্বাসযোগ্য। রঙও টেকসই। তবে ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। ঘাম না লাগালে ২/৩ বছরও চকচকে থাকে।
আবার পালিশ করে নিলেই নতুন মনে হবে। গরীব পরিবারের বিয়ে, আকিকা, খৎনা, জন্মদিন, বিয়েবার্ষিকীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিফট দেওয়া হয় গরীবের সোনার গহনা। গরীব মহিলার এমনকি নিম্ন মধ্যবিত্তরা ডাকাতি ছিনতাই চুরির ভয়ে বাইরে সাধারণত সিটি গোল্ড বা গরীবের সোনা ব্যবহার করেন।