মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ঝিনাইদহের এক কৃতি সন্তানের গল্প
শাহীনুর রহমান, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুর কৃতি সন্তান কাজী মনিরুজ্জামান ফেনির এসপি হিসেবে যোগদানের পর ঈদের ৩য় দিন নিজ এলাকাতে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে আসেন। শিকড় সন্ধানী কাজী মনিরুজ্জামানের নিজ এলাকায় আসার সংবাদ শুনে তার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে ছুটে আসেন এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, আলেম- ওলামা, হিন্দু ধর্মীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, সরকারি বেসরকারি চাকুরে, বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষীসহ বিভিন পেশার মানুষ। তাদের অকৃত্রিম ভালবাসায় তিনি অশ্র“সিক্ত হয়ে ওঠেন। দিনভর ব্যস্ততার ফাঁকে তিনি দাদা দাদীসহ স্বজনদের কবর জিয়ারত করেন। রাতে বন্ধুরা তার সম্মানে এক প্রীতি ভোজের আয়োজন করে। সেখানে এলাকার মানুষের এই ভালবাসার জবাবে তিনি বলেন-দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের লালনে যেন সততা ও দক্ষতার সাথে কাজ করে যেতে পারেন সেজন্য সকলের দোয়া কামনা করেন। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিদের্শনায় আলোকে পুলিশকে জনগনের বন্ধু হিসেবে দেখার মধ্যদিয়ে জনবান্ধব পুলিশ অফিসার হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন।
ফেনির সোনাগাজী মাদ্রাসার ছাত্রী আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে ৬ এপ্রিল আগ্নিদগ্ধ করে শরীরের ৮৫% ঝলসে দেওয়া হয়। হাসপাতালে চিকিৎসাধনি অবস্থায় রাফি ১০ এপ্রিল নির্মম ভাবে মৃত্যুবরণ করে। এ হত্যাকান্ডে গোটাজাতি ফুঁসে ওঠে। যৌন নিপীড়নকারী মাদক্ষাসার অধ্যক্ষ মাওঃ সিরাজ উদৌলাহ প্রভাবশালী একটি চক্রের মদদে এমন বর্বরোচিত হত্যাকান্ড সংঘটিত করে বলে বিভিন্ন মহলে গুনঞ্জরন ছড়িয়ে পড়ে। প্রশাসনের একটি অংশ রাফি হত্যার সাথে জড়িতদের রক্ষা করতে পক্ষপাতিত্ব শুরু করে বলে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর হলে তিনি আইনকে তার স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিয়ে দোষীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাবার কঠোর নিদের্শনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ফেনির পুলিশ সুুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার, সোনাগাজী থানার ওসিসহ চারজন পুলিশ অফিসারকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। কাজী মনিরুজ্জামানকে গত ১২মে ফেনির এসপি হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করায় তিনি এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকারের স্থলাভিষিক্ত হন। ২০০৬ সালে ২৫তম বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে উর্ত্তীণ হয়ে সহকারি পুলিশ সুপার পদে যোগদান করে তিনি পুলিশের চ্যালেঞ্জিং পেশার আত্মনিয়োগের মাধ্যমে দেশ সেবায় ব্রতি হন। সদ্য দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ সুপার ইতিপূর্বে ফেনির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া শ্রীমঙ্গলে র্যাব-৯ এর প্রিহেনসিভ কমান্ডিং অফিসারসহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে পুলিশ অফিসার হিসেবে সুনাম ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করে নিজ ডিপার্টমেন্টে বিশ্বস্থতা অর্জনের পাশাপাশি তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আস্থা অর্জনে সক্ষম হন।
কাজী মনিরুজ্জামান ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বেঠাপাড়া গ্রামে সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবারে ১৯৭৬ সালে ৩০ জুন জন্ম গ্রহণ করেন। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কাজী বজলুর রহমান এবং আলেয়া কাজী দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে একমাত্র পুত্র কাজী মনিরুজ্জামান আশৈশব মেধাবী হিসেবে পরিচিত। পিতামহ মাওঃ গোলাম কিবরিয়া একজন খ্যাতিমান আলেম ও পীর হিসেবে এতদাঞ্চলে সুপরিচিত ব্যক্তির মর্যদায় অধিষ্ঠিত। তিনি নিজ ও পার্শ্ববর্তী এলাকাতে অনেক মসজিদ মক্তবসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখায় এলাকাবাসির কাছে পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বের আসন লাভ করেন। এই খ্যাতিমান পীর বৃটিশ আমলে নিজ অঞ্চলে সর্বপ্রথম গরু কুরবানি প্রদান করায় তৎকালিন জমিদারদের রোষানালে পড়ে বেশ কিছুদিন আত্ম গোপনে থাকতে বাধ্য হন। পিতামহী খালেদা খাতুনও একজন ধর্মপ্রাণ বিদূষী রমনী হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন।
কাজী মনিরুজ্জামানের নিজ গৃহে শিক্ষা জীবনের হাতে খড়ি শুরু হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে হরিণাকুণ্ডু মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুনী প্রধান শিক্ষক মরহুম আলফাজ উদ্দীন স্যারের নিবিড় তত্ত¡াবধানে প্রাথমিক শিক্ষা সফল ভাবে সমাপ্ত করেন। পরবর্তীতে এলাকার ঐতিহ্যবাহী হরিণাকুণ্ডু প্রিয়নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সুযোগ্য প্রধান শিক্ষক মানুষ গড়ার মহান শিল্পী মোসলেম উদ্দীন স্যারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৯২ সালে যশোর শিক্ষাবোর্ডের মানবিক বিভাগ হতে রেকর্ড পরিমান নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করেন। কুস্টিয়া সরকারি কলেজ হতে ১৯৯৪ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বোর্ড স্ট্যান্ড করে তিনি এলাকাবাসির কাছে নিজ মেধার সফল স্বীকৃতি অর্জনে সক্ষম হন। উচ্চতর শিক্ষা জীবনে তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ হতে কৃতিত্বের সাথে স্নাতক (সম্মান) এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
পারিবারিক জীবনে তিনি কাজী মরিয়মের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবব্ধ হন। কাজী মরিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে সুগৃহিনীর দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের দু’সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান একমাত্র পুত্র কাজী মুমতামির ৮ম শ্রেণিতে এবং কনিষ্ঠ সন্তান কন্যা জারা ২য় শ্রেণিতে অধ্যয়ণ করছে। কাজী মনিরুজ্জামান শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে এলাকার দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মেধা লালনের নিমিত্তে¡ বৃত্তি প্রদান, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের দেশ প্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় অবদারন রাখার পাশপাশি এলাকার বিভিন্ন মসজিদসহ ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছেন। বন্ধু বৎসল কাজী মনিরুজ্জামান বন্ধুদের কাছে জাহিদ নামে সুপরিচিত। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি বছরে একবার হলেও বন্ধু-শুভাকক্সক্ষাদীদের নিয়ে নিজ উদ্যোগে নির্মল আনন্দের জন্য মিলন মেলার আযোজন করে বন্ধুত্বে বন্ধনকে চির অমলিন করে রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বন্ধুরাও ছুটে এসে এসময় নিজেদের সুখে দুঃখের মনের কথা অকৃপণ ভাবে শেয়ার করেন। দুস্থ্য বন্ধুদের কল্যানে তার আন্তরিক সহযোগিতা সকলে গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে থাকে।
ফেনির এসপি হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্তির পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ফেনিতে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারীদের হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন- চাকরী করব দশ দিন, তবে বাঘের মত করে যাব। কলঙ্ক নিয়ে চাকরী করতে চাইনা। পুলিশ সুপার হিসেবে প্রায় ১ মাস অবধি দায়িত্ব প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় তিনি সাহসিকতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে সকল শ্রেণি পেশার নাগরিকের আস্থা ও ভালবাসা অর্জনের লক্ষে নিরলস ভাবে কাজ করে চলেছেন। তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালনের জন্য তিনি সকলের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করেন।