ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

ঝিনাইদহে আত্মহত্যা খুবই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে

আমজাদ হোসেন হৃদয়, ঝিনাইদহের চোখঃ

বাংলাদেশে আত্মহত্যা খুবই উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গবেষকরা মনে করছেন, ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রবণতা ১৫ থেকে ২০ গুণ বাড়বে। আমাদের দেশে প্রতিদিন গড়ে ২৪ জন আত্মহত্যা করে এবং বছরে ১০ হাজার বা তারও বেশি আত্মহত্যা করে। কেউ কেউ মনে করছে আত্মহত্যার হার অঞ্চলভেদে কম-বেশি হয়। অঞ্চলের হিসাব করলে ঝিনাইদহ এই তালিকায় সবচেয়ে ওপরে থাকে। ঝিনাইদহে প্রতি বছর গড়ে ৩০০-এর বেশি আত্মহত্যা করে এবং দুই হাজারেরও বেশি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। এছাড়াও শহরের চেয়ে গ্রামে আত্মহত্যা প্রবণতা ১৭ গুণ বেশি।

রতি বছর সারা বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী আর যাদের বয়স পঁয়ত্রিশ বছরের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষের আত্মহত্যা করার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ। প্রতি বছর পৃথিবীতে দশ লাখেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করছে। এছাড়াও অগণিত মানুষ প্রতিনিয়ত আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আত্মহত্যা মানে নিজেকে নিজে ধ্বংস করা, নিজ আত্মাকে চরম কষ্ট দেওয়া। আসুন নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংস না করে সমাধানের পথ খুঁজি। প্রথমে আত্মহত্যার পেছনের কারণগুলো খুঁজে বের করা উচিত। আমরা এর পেছনের কারণ খুঁজলে দেখতে পাবÑ কোনো কিছু নিয়ে চরম হতাশা, চাকরি না পাওয়া, স্বামী বা স্ত্রীর প্রতারণা, যৌতুক সমস্যা, পারিবারিক অশান্তি, মানসিক অশান্তি, বখাটেদের উৎপাত, প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণ। কিন্তু এসব থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র পথ আত্মহত্যা নয়।

পৃথিবীতে প্রত্যেক সমস্যারই সমাধান আছে, তেমনি আত্মহত্যা না করে এসব সমস্যা থেকে বাঁচারও সমাধান আছে। আত্মহত্যা থেকে বাঁচাতে এই রাষ্ট্রকে, এই সমাজকে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা যদি একটা বেকার যুবককে তার বেকারত্বের জন্য পীড়া না দিয়ে তাকে যদি সান্ত¡না দিই, তার পাশে থাকি এবং তাকে অন্য একটা পথ খুঁজে দিই তাহলে ভিন্ন কিছু হতো। বিভিন্ন দেশে হতাশা থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষার্থীদের, তরুণ-তরুণীদের জন্য সেমিনারের আয়োজন করা হয়Ñ তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখানো হয়।

আমাদের দেশেও তা করা উচিত। কারও যাতে আত্মহত্যা করতে না হয়, সে জন্য আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত। পাশাপাশি নির্যাতিতদের পাশে থেকে তাদের সান্ত¡না এবং বোঝানো উচিত দুনিয়াটা তাদের জন্য শেষ নয়, অনেক কিছু বাকি আছে। নৈতিক শিক্ষার ওপর সেমিনার করা উচিত। আত্মহত্যা মহাপাপ এবং তার শাস্তি জাহান্নাম অর্থাৎ নিজেকে ধ্বংস করার পর আবার আখেরাতে শাস্তি সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি করানো উচিত। আমরা যদি এভাবে সমস্যার সমাধান খুঁজি এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পাশে থাকে তাহলে আত্মহত্যা রোধ করা অনেকখানি সম্ভব হবে।

পৃথিবী অনেক সুন্দর। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমাদের সঠিক পথগুলো খুঁজে বের করা উচিত। আসুন সুন্দর পথ খুঁজি, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি এবং দেশের উন্নতিতে অবদান রাখি।

শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় amjadhossainhridoydu@gmail.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button