দেখা-অদেখা

অপরুপ সৌন্দর্যে ভরপুর ঝিনাইদহের ‘ঢোলসমুদ্র দিঘি’

#ঝিনাইদহের চোখঃ

ঢোলসমুদ্র দিঘি। অদ্ভুত নামের এই দিঘিটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা ঝিনাইদহে।

দিঘিটির অবস্থান ঝিনাইদহ জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দূরে পাগলাকানাই ইউনিয়নের বাড়ি বাথান গ্রামে।

ঢোলসমুদ্র দিঘি- কোন ঐতিহাসিক কীর্তি না হলেও আজো জনশ্রুতির কারণে ইতিহাস হয়ে আছে।

৫২বিঘা জমির উপর দিঘিটি খনন করা হয়েছিল। খননের কারণ সম্পর্কে জনশ্রুতিতে ছড়িয়ে আছে চমকে যাওয়ার মতো উপাখ্যান।

যশোর গেজেট-এ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী- রাজা মুকুট রায়ের আমলে এখানে একবার ভীষণ জলকষ্ট দেখা দেয়। উৎকন্ঠা আর উদ্বেগ প্রজা মহলের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। পানির অভাবে প্রজারা প্রাণ দিতে লাগল। বিল, বাওড়, নদী, দীঘি কোথাও পানি নেই। রাজা অত্যন্ত দুঃশ্চিন্তায় পড়লেন। পানির জন্য পূজা দিলেন। অনেক ধর্মীয়-আচার অনুষ্ঠান করলেন। কিছুতেই কিছু হলো না। অবশেষে রাজা স্থির করলেন একটা পুকুর খননের। প্রজারা অবশ্যই পানি পাবে সেখান থেকে।

দেখতে দেখতে জলাশয় খনন শুরু হলো। অগণিত লোক কোদাল চালালো রাতারাতি খননকাজ শেষ করতে। পুকুর গভীর হতে গভীরতর হলো, পানির দেখা নেই। কত জ্যোতিষী, কত দরবেশ এলো। কত উপদেশ পালিত হলো। কিছুতেই কিছু হলো না। রাজার ঘুম নেই। তিনি হতাশ হয়ে ভেঙ্গে পড়লেন। একদিন রাতে রাজা স্বপ্ন দেখলেন, যদি রাণী পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে পানি উঠবে। রাজা অনন্যোপায় হয়ে স্বপ্নের কথা রাণীকে বললেন। রাণী প্রজাহিতৈষী প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করলেন।

ধূমধাম পড়ে গেল, দিনক্ষণ ঠিক হলো। ঢোল, সানাই, বাঁশি এলো। লোকে লোকারণ্য পুকুর পাড়। রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরের পাড়ে আসলেন। ঢোল, সানাই, বাঁশী বেজে উঠলো। শঙ্খবাণী, উলুধ্বনি দিল মায়েরা। রাণী ধীরে ধীরে পুকুরে নামতে লাগলেন। শেষ পর্যন্ত তলদেশে উপস্থিতি। সহসা দেখা গেল তলা থেকে পানি উঠছে প্রবল বেগে। রাণী প্রজাদের মঙ্গল কামনা করে ঈশ্বরকে প্রনতি জানিয়ে পুকুর হতে উঠে আসতে লাগলেন। পানি দ্রুত রাণীকে গ্রাস করলো। ঢোল, কাশী, সানাই, বাঁশীর শব্দের এবং প্রজাদের আনন্দে পুকুরের দিকে কারো লক্ষ্য নেই। রাণীর সলিল সমাধি হলো।

প্রাকৃতিক শোভামন্ডিত ঢোলসমুদ্র দিঘির পাড়ের চারপাশে নির্জন পরিবেশ আজো অসংখ্য পর্যটকদের আকর্ষণ। এই দিঘির টানে সারাবছর অগণিত পর্যটক আসেন। চারপাশের সবুজ প্রান্তরে মুক্ত নিঃশ্বাস নেন।

স্থানীয় বাসিন্দা রইস উদ্দিন জানালেন, ঢোলসমুদ্র দিঘি দেখতে বছরের প্রায় সব সময়ই মানুষকে বেড়াতে আসতে দেখা যায়। তবে শীতকালে মানুষের ভিড় বাড়ে। এসময় অনেকে পিকনিকের আয়োজন নিয়েও এখানে আসেন।

বর্তমানে ঢোলসমুদ্র দিঘির মালিক এখানেরই ফিরোজ মিয়া। তিনি দিঘিতে বিভিন্ন জাতের মাছের চাষ করছেন। ঝিনাইদহবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, সরকারিভাবে হোক বা বেসরকারিভাবে হোক- দিঘিটিকে ঘিরে একটি আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button