ফুটবল মাঠের অবিশ্বাস্য কিছু ঘটনা
#এলিস হক, ঝিনাইদহের চোখঃ
ফুটবল মাঠে এমন অবিশ্বাস্য কিছু ঘটনা ঘটেছে, শুনলে চমকে যেতে হয়। এমন কিছু ঘটনা নিয়ে এই বিশেষ প্রতিবেদন।
১৪৯-০
মাদাগাস্কারের নাম শুনলেও সেখানে যে ফুটবল লীগ চালু আছে তা জানেন কজন? অদ্ভুতুড়ে, অবিশ্বাস্য সব গল্পের শেষ পাতে শুনুন সে দেশের লীগের একটা ম্যাচের ঘটনা-মাদাগাস্কান লীগের এক ম্যাচে এএস আদেমা ১৪৯-০ গোল ব্যবধানে স্তাদে অলিম্পিক ডে লাএমরেনেকে হারিয়েছিল! ভুল পড়েননি। স্কোরলাইনটা নির্ভুল এবং আরো অবাক করা কথা হলো সেই ম্যাচে জয়ী দল কোনো গোল করেনি!
আসল ঘটনা হলো, আগের ম্যাচে রেফারীর একটি ভুল সিদ্ধান্তে পেনাল্টি হজম করে ২-২ গোলে স্তাদে অলিম্পিক ড্র করেছিল। ম্যাচটি জিততে পারলে দলটি চ্যাম্পিয়নশীপে টিকে থাকতো। কিন্তু রেফারীর ভুল সিদ্ধান্তে সেটা যেহেতু হয়নি, তাইপরের ম্যাচেই নিজেদের জালে নিজেরাই গোল করে প্রতিবাদের অভিনব পদ্ধতিতে স্তাদে অলিম্পিক বেছে নিয়েছিল।
এ ভাবনা থেকেই আদেমার বিপক্ষে ম্যাচে দলটি অবিশ্বাস্যভাবে গোলে হেরেছিল। ম্যাচটির দর্শকদের মতো, কিক অফের পর স্তাদে অলিম্পিকের খেলোয়াড়রা শুধু নিজেদের জালেই বল মেরেছে আর গোলরক্ষক সরে গিয়ে জায়গা করে দিয়েছেন!
এ ঘটনায় স্তাদে অলিম্পিকের কোচকে ৩ বছর নিষিদ্ধ করার সঙ্গে দলটির ৪ খেলোয়াড়কে মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত দেশটির ফুটবল কর্তৃপক্ষ মাঠের বাইরে থাকার শাস্তি দিয়েছিল। সে যা-ই হোক, পেশাদার ফুটবলে কোনো ম্যাচে এটাই সর্বোচ্চ স্কোরলাইন!
দর্শক যখন গোলরক্ষক
১৯৪৫ সালে হোয়াইট হার্ট লেনে প্রীতি ম্যাচে আর্সেনাল বনাম ডায়নামো মস্কোর মুখোমুখি হয়েছিল। ম্যাচ শুরুর পর গাঢ় ঘন কুয়াশার কারণে দুই দলই খেলা বন্ধের পক্ষে ছিল। কিন্তু রেফারী রাজি হননি। অগত্যা নিজেদের মতো করে আর্সেনাল ও মস্কো খেলতে শুরু করে। ম্যাচের একপর্যায়ে ডায়নামো মস্কো বদলি খেলোয়াড় মাঠে নামালেও যাঁর বদলি হিসেবে নামিয়ে তাঁকে আর তুলছে না!
এভাবে রাশিয়ান ক্লাবটির দলে একসঙ্গে খেলেছে ১৫ জন! আর্সেনালও কম যায়নি। ইংলিশ ক্লাবটি লাল কার্ড দেখা খেলোয়াড়কে মাঠে ফেরত পাঠায়! ঘন কুয়াশার কারণে রেফারী এসবের কিছুই দেখতে পাননি। কিন্তু দর্শকদের চোখ এড়ায়নি। আর্সেনালের গোলরক্ষক দিগ্ভ্রান্ত হয়ে নিজ গোলপোস্টের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হলে তাঁর বদলে গোলপোস্ট এক গানার সমর্থক সামলেছিলেন!
মাঠে শাকসবজি নিষিদ্ধ
চেলসির একনিষ্ঠ ভক্তরা একসময় সেলেরি নামে এক ধরনের শাক নিয়ে খেলা দেখতে মাঠে ঢুকতেন। প্রিয় দলটির জন্য সেলেরি নামে একটি গান গাওয়ার সময় তাঁরা উঁচিয়ে ধরতেন এসব শাকসবজি, এমনকি অনেকে মাঠেও ছুঁড়ে মারতেন!
২০০৭ সালে এক বিবৃতির মাধ্যমে চেলসি জানিয়ে দেয়, মাঠে শাকসবজি নিয়ে আর কোনো দর্শক ঢুকতে পারবে না। আইন অমান্য করলে চেলসির খেলা দেখা থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হতে হবে এবং সেটা হবে অপরাধের সমতুল্য, যা পুলিশের খাতায়ও নথিবদ্ধ ছিল।
একবার না পারলে দেখো ষোলোবার!
শীতকালে খারাপ আবহাওয়ার জন্য ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ কিংবা এফএ কাপের ম্যাচ মূলতবী রাখা নতুন কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, একটা ম্যাচ যদি একই কারণে বারবার মূলতবী ঘোষিত হয়!
১৯৬২-৬৩ মৌসুমে লিংকন সিটি ও কভেন্ট্রি সিটি ম্যাচে ঠিক এটাই ঘটেছিল। ম্যাচের দিনক্ষণ ছিল ৫ জানুয়ারী ১৯৬৩। কিন্তু বাজে আবহাওয়ার জন্য ম্যাচটি সেদিন মূলতবী ঘোষিত হয়। পরে নির্ধারিত দিনক্ষণেও ম্যাচটি মাঠে গড়ায়নি ঠিক একই কারণে এবং এভাবে মোট ১৫ বার! সব মিলিয়ে ৬৬ দিন পর ষোলোতম বারের চেষ্টায় মাঠে নেমে কভেন্ট্রি সেই ম্যাচটা ৫-১ গোলে জিতেছিল।
কেউ না কেউ মিস তো করবেই
আর্জেন্টিনার চতুর্থ বিভাগীয় লীগ হয়তো গুণে ও মানে তেমন ডাকসাইটে নয়। কিন্তু ২০০৯-১০ মৌসুমে অবিশ্বাস্য এক ঘটনার সাক্ষী হয়ে রয় জুভেন্টাস আলিয়াঞ্জা ও জেনারেল পাজ জুনিয়র ম্যাচ। বাছাইপর্বের এ ম্যাচটি দুই লেগ মিলিয়ে ৩-৩ গোলে ড্র হওয়ায় খেলা টাইব্রেকারে গড়ায়। স্নায়ু ক্ষয়ের এ লড়াই শেষ পর্যন্ত পাজ জুনিয়র জিতেছিল। জয়ের ব্যবধান ২১-২০! হ্যাঁ, দুই দলের প্রথম ৪০টি শট কোনো গোলরক্ষকই ঠেকাতে পারেনি। শুধু আলিয়াঞ্জার হয়ে রুইজ গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন এবং সেটা হয়ে থাকে টাইব্রেকারের শেষ শট।
ম্যাচের আগে মৃত্যুদন্ড!
আফগানিস্তানে নব্বইয়ের দশকে তালেবান শাসন চলাকালীন এটা ছিল একেবারেই প্রাত্যহিক ঘটনা। কাবুলের গাজী স্টেডিয়ামকে জল্লাদখানা হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ম্যাচের আগে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হতো। কিংবা গ্যালারীর দর্শকদের সামনেই ধৃত মানুষকে অত্যাচার করা হতো। পাথর ছুঁড়ে মারা, শিরশ্ছেদ কিংবা হাত-পা কেটে পঙ্গু করে দেওয়ার মতো ঘটনাও তখন একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। আফগানদের মতে, গাজী স্টেডিয়ামের স্পোর্টস কমপ্লেক্সে তখন ঘাস বেড়ে উঠতে পারেনি, কারণ প্রায় সব সময়ই ঘাস ছিল রক্তে-রঞ্জিত!
এলিস হক
ক্রীড়া সাংবাদিক ও ক্রীড়া ধারাভাষ্যকার