কুরবানির জন্য যে কাজগুলো পালন করা জরুরি
#ঝিনাইদহের চোখঃ
ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের অন্যতম ইবাদত কুরবানি। কুরবানির মাধ্যমে যে ভালোবাসার প্রমাণ দিয়েছিলেন হজ হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আর যে আত্মত্যাগের প্রমাণ দিয়েছিলেন হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালাম। পিতা-পুত্রের দ্বারা সংঘটিত এ ইবাদতকে আল্লাহ তাআলা সম্পদের মালিক মানুষের জন্য জারি রেখেছেন। আর তা হলো কুরবানি।
কুরবানির গুরুত্ব তুলে ধরে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন-
– যে ব্যক্তির কুরবানি করার সামর্থ্য আছে কিন্তু কুরবানি করে না সে যেন আমার ঈদগাহে না আসে।’ (মুস্তাদরেকে হাকেম)
– হজরত যায়েদ ইবনে আকরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘সাহাবায়ে কেরাম বিশ্বনবিকে জিজ্ঞাসা করলেন, কুরবানি কী? বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কুরবানি হলো তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের সুন্নাত। আবার প্রশ্ন করা হলো- এতে আমাদের সাওয়াব কী?
উত্তরে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘কুরবানির পশুর প্রত্যেকটি পশমের বদলায় একটি করে সাওয়াব রয়েছে। ভেড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘ভেড়ার প্রত্যেকটি পশমের বদলাওয়া একটি করে সাওয়াব রয়েছে।’ (মুসনাদে আহমদ)
এ কুরবানি আদায়ের রয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিয়তের পরিশুদ্ধতা আর শরিয়ত নির্দেশিত নিয়মগুলো যথাযথ মেনে তা আদায় করা। কুরবানির ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি তা তুলে ধরা হলো-
> কুরবানির পশু
গৃহপালিত পশু- উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানি করা। এ ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানি বৈধ নয়।
> কুরবানির পশুর বয়স
– উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে।
– গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর
– ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে।
তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানি জায়েজ। উল্লেখ্য যে, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানি জায়েজ হবে না।
> কুরবানির পশু জবাই
কুরবানির নির্ধারিত দিনে কুরবানির নিয়তে কেনা পশু কুরবানি করতে না পারলে তা সাদকা করে দিতে। আর তা যদি (সময়ের পরে) জবাই করা হয়ে থাকে তবে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে।
> কুরবানির পশুতে ভাগ
উট, গরু ও মহিষে একাধিক ব্যক্তি মিলে কুরবানি দিতে পারবে। আর ছাগল, ভেড়া, বকরি, দুম্বা দ্বারা এক জনের বেশি কুরবানি দিতে পারবে না। এর ব্যতিক্রম হলে কারো কুরবানি হবে না।
> পশুর গুণ
কুরবানির পশু দেখতে সুন্দর, হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। শারীরিক খুঁত, অঙ্গহানি পশু দ্বারা কুরবানি দেয়া বৈধ নয়।
> কুরবানির করার যোগ্যব্যক্তি যারা
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন সে সব প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যারা ১০ যিলহজ ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় তবে তার জন্য কুরবানি করা আবশ্যক।
তবে নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানি করলে তা সহিহ হবে।
আবার নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানি দেয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।
> কুরবানির জন্য নিসাব
সাড়ে ৭ ভরি সোনা ও সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা সমপরিমাণ টাকা ও অন্যান্য সরঞ্জাম থাকা। যা পরিবার-পরিজন প্রতিপালনের অতিরিক্ত থাকে।
এমনকি সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক জিনিস-পত্র মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানি ওয়াজিব।
> নিসাব পরিমাণ সম্পদের স্থায়িত্বকাল
কুরবানির জন্য নেসাব পরিমাণ সম্পদ পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানির তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানি ওয়াজিব।
> কুরবানির সময়
কুরবানি করা যাবে ৩ দিন। আর তাহলো ১০ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত।
> মুসাফিরের কুরবানির হুকুম
কুরবানির দিনগুলোতে যে ব্যক্তি মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করে) তার উপর কুরবানি ওয়াজিব নয়।
> গরিব ব্যক্তি কুরবানি
দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানি করা ওয়াজিব নয়। যদি কোনো গরিব ব্যক্তি কুরবানির নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানি করা ওয়াজিব হয়ে যায়।
পশু কেনার আগে যদি একা কুরবানির নিয়তে পশু কেনে এবং পশু কেনার পর ইচ্ছা করলেও আর শরিক নিতে পারবে না।
পক্ষান্তরে কোনো ধনি ব্যক্তি যদি একাকি কুরবানির জন্য পশু কেনার পর শরিক নিতে চায় তবে ধনী ব্যক্তি শরিক নিতে পারবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরবানির বিধানগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।