আমিুরল ইসলাম তাকে মারার কারন খুজে পাচ্ছে না
#ঝিনাইদহের চোখঃ
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে সারাক্ষন কাতরাচ্ছেন ট্রাক্টর চালক আমিরুল ইসলাম (৩৫)। এখনও তিনি জানেন না সন্ত্রাসীরা কেন তাকে এভাবে কুপিয়ে আহত করলো। মাথায় ১১ টি সেলাই নিয়ে গত ১২ দিন অচেতন হয়ে হাসপাতালে পড়ে আছেন তিনি। মাঝে মধ্যে সামান্য জ্ঞান ফিরলেই শুধু বলছেন ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, তারপরও আমাকে কেন মারলো’।
আমিরুল ইসলামের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গড়িয়ালা গ্রামে। গত ৫ আগষ্ট রাতে বাড়ি ফেরার পথে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করেন।
এদিকে ঘটনার ৯ দিন পরও সন্ত্রাসীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। আমিরুল ইসলামের বাবা আছির উদ্দিন মন্ডল বাদি হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামীদের গ্রেপ্তার না করায় উল্টো তারা নানা ভাবে হুমকী দিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে হতদরিদ্র এই আমিরুল ইসলামকে ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারছেন না তার পরিবার। সামান্য ট্রাক্টারের চালক আমিরুল ইটভাটায় মাটি টানার কাজ করতেন। এই দিয়েই চলতো তার সংসার। এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে, যার অর্ধেকটা দিয়েছেন গ্রামবাসি। এখনও তার চিকিৎসায় অনেক টাকার প্রয়োজন।
আমিরুল ইসলামের বাবা আছির উদ্দিন জানান, তার ছেলে খুবই সরল প্রকৃতির মানুষ। ছোট বেলা থেকেই কঠিন পরিশ্রম করে অর্থ উপার্যন করেন। কখনও খারাপ পথে যায় নি। তিনি জানান, গত ৫ আগষ্ট রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে ভাটাই ট্রাক্টর রেখে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের খড়িখালী নামক স্থানে একটি পেট্রোল পাম্পের সামনে আসে। সেখানে একটি চায়ের দোকানে চা খেয়ে আনুমানিক ১০ টার দিকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কিছুদুর যাবার পর বেগবতি নদীর বাবুরঘাট সেতুর উপর যাওয়া মাত্র চিহ্নিত ৫ সন্ত্রাসী তার উপর হামলা করে। তারা এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করে। ছেলে আমিরুল ইসলাম মারা গেছে ভেবে সেতুর উপর থেকে নদীর পানির মধ্যে ফেলে চলে যায়। এ সময় আমিরুলের চিৎকারে প্রতিবেশিরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে ওই রাতেই ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। এখনও ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমিরুল ইসলামের মাথায় এতোটা আঘাত করা হয়েছে যে ১১ টি সেলাই দিতে হয়েছে। এখনও সে কতা বলতে পারছে না। মাঝে মধ্যে জ্ঞান এলে শুধু বলছে আমার কোনো অন্যায় ছিল না, ওরা আমাকে কেন এভাবে মারলো।
আছির উদ্দিন জানান, ঘটনার পরদিনই তিনি ঝিনাইদহ সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। সেখানে নৃসিংহপুর গ্রামের ইমরান হোসেন, আলমগীর হোসেন, হিরাজ কুমার, সদেব কুমার ও জাকির হোসেনকে আসামী করে এই মামলা দিয়েছেন। থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হলেও আজো আসামী গ্রেপ্তার হয়নি। এখন আসামীরা উল্টো মামলা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য হুমকী-ধামকী দিয়ে যাচ্ছেন।
আমিরুল ইসলামের ভাই মনিরুল ইসলাম জানান, তার ছোট ভাই খুব কষ্টে সংসার চালান। স্ত্রী তাসলিমা খাতুন, ছেলে নাজমুল হোসেন (১৬) ও মেয়ে আজমিরা খাতুন (১১) কে নিয়ে তার সংসার। মাঠে নিজের চাষযোগ্য কোনো জমি নেই। সাামন্য ১০ শতক জমির উপর টিনের ছাপড়া ঘরে তারা বসবাস করেন।
ইটভাটায় মাটি টানা ট্রক্টর চালিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে। তিনি আরো বলেন তার ছোট ভাই আমিরুল ইসলামের কোনো শত্রæ নেই, তারপরও এভাবে তাকে মারা হয়েছে। এখন অর্থের অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, কোনো কারন ছাড়াই একজন নিরিহ ছেলেকে এভাবে আহত করার বিচার দাবি করেন তিনি।